আরবী তারিখঃ এখন ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরি মুতাবিক ২৯ মার্চ ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রোজ শুক্রবার, সময় সকাল ৬:২৯ মিনিট
এলানঃ-
১৪৪৫-১৪৪৬ হিজরী, ২০২৪-২০২৫ ইং এর মাসিক সুন্নতী ইজতেমা সমূহ
* ২৫ এপ্রিল ২৪ ইং বৃহস্পতিবার মাগরিব-ইশা মাদরাসার সকলের জন্য
* ৩০-৩১ মে ২৪ ইং বৃহস্পতিবার ফজর-শুক্রবার মাগরিব পর্যন্ত সালেকীনদের জন্য
* ২৭ জুন ২৪ ইং বৃহস্পতিবার মাগরিব-ইশা মাদরাসার সকলের জন্য
* ২৫-২৬ জুলাই ২৪ ইং বৃহস্পতিবার ফজর-শুক্রবার মাগরিব পর্যন্ত সালেকীনদের জন্য
* ২৯ আগষ্ট ২৪ ইং বৃহস্পতিবার মাগরিব-ইশা মাদরাসার সকলের জন্য
* ২৬-২৭ সেপ্টেম্বর ২৪ ইং বৃহস্পতিবার ফজর-শুক্রবার মাগরিব পর্যন্ত সালেকীনদের জন্য
* ২৪ অক্টোবর ২৪ ইং বৃহস্পতিবার মাগরিব-ইশা মাদরাসার সকলের জন্য
* ২৮-২৯ নভেম্বর ২৪ ইং বৃহস্পতিবার ফজর-শুক্রবার মাগরিব পর্যন্ত সালেকীনদের জন্য
* ২৬ ডিসেম্বর ২৪ ইং বৃহস্পতিবার মাগরিব-ইশা মাদরাসার সকলের জন্য
* ৩০-৩১ জানুয়ারী ২৫ ইং বৃহস্পতিবার ফজর-শুক্রবার মাগরিব পর্যন্ত সালেকীনদের জন্য
* ২৭ ফেব্রুয়ারী ২৫ ইং বৃহস্পতিবার মাগরিব-ইশা মাদরাসার সকলের জন্য
* মার্চ ২৫ ইং এজতেমা সালেকীনদের জন্য

শাহ ফকিহুল মিল্লাত মুফতি আব্দুর রহমান রহ. এর দৃষ্টিতে আল্লামা মওদুদী

সমকালীন ফিতনা ও হযরত মাওলানা হোসাইন আহমদ মাদানীর দূরদর্শিতা কেমন ছিল। ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বাংলাদেশ বসুন্ধরা ঢাকা এর প্রতিষ্ঠাতা মহাপরিচালক হযরত ফকীহুল মিল্লাত (রহ.) বলেন, ইহুদিদের ষড়যন্ত্রে একজন বদদ্বীন, যে আলেমও নয়, কোনো সনদই ছিল না তার যার নাম ছিল গোলাম আহমদ পারভেজ নতুন ফিতনা নিয়ে মাঠে এল। তার ফিতনা হলো হাদীস অস্বীকার করার ফিতনা। হাদীস যখন অস্বীকৃত হয়ে যাবে তবে কোরআনের কোনো মূল্য থাকবে না, মুসলমানগণ ইসলাম নিয়ে থাকতে পারবে না। এই ইহুদি-নাসারা ফজলুর রহমানের ইসলাম নামেও এক বিশাল ফিতনা তৈরি করেছিল। পাঞ্জাবে তার জন্ম। প্রায় সব ফিতনার গোড়াপত্তন হয়েছে পাঞ্জাব থেকে। গোলাম আহমদ কাদিয়ানী, গোলাম আহমদ পারভেজ, ফজলুর রহমান—সবই পাঞ্জাবে জন্ম নেওয়া । ফজলুর রহমানের ‘ইসলাম’ একটি পরিভাষা। যা কিতাব আকারে প্রকাশ পেয়েছিল। যার মোকাবেলার আন্দোলনে আইয়ুব খান ক্ষমতা হারিয়েছিলেন। ওই পাঞ্জাব থেকেই জেনারেল শিক্ষিত এক লোক আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গেল। অর্থাৎ আবুল আলা মওদূদী। তার সুমিষ্ট বক্তৃতা ও শৈলীপূর্ণ লেখা দ্বারা মুসলমানদের মাঝে বিষ বিস্তার করে ঈমানের স্থলে কুফরীর অনুপ্রবেশ করাতে লাগল। এই ষড়যন্ত্র সর্বপ্রথম আঁচ করতে পারা ব্যক্তি হলেন হাকীমূল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (রহ.)। তাঁর লেখা পড়ে হযরত থানভী (রহ.) বলেছিলেন, আমার মেধা তা কবুল করছে না। হযরত থানভী (রহ.)-এর এই কথার ব্যাখ্যায় হযরত হোসাইন আহমদ মাদানী (রহ.) সর্বসাধারণে এ কথা তুলে ধরলেন যে, মওদূদী গোমরাহ এবং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত থেকে খারিজ। মওদূদী মুতাযিলা আর খারেজীদের আকীদা পোষণ করে। তখনও উলামায়ে দেওবন্দ এই বিষয়ে সোচ্চার হননি। পাঞ্জাব ভাগ হয়ে গেল । মওদূদী সাহেব নিজের মিশনকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সুন্দর সুযোগ এলো। লাহোরের মতো একটি শহর তিনি পেলেন। যা পশ্চিম পাঞ্জাবে অবস্থিত। করাচিতে হযরত মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ শফী সাহেব (রহ.) এবং বাংলাদেশে হযরত মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী (রহ.) মওদূদীর সুন্দর লেখনী দেখে খুশি হয়ে গেলেন। এদিকে হযরত মাওলানা হোসাইন আহমদ মাদানী (রহ.) জনসমক্ষে ঘোষণা করছেন, মওদূদী খারেজী এবং মুতাযিলা আকীদা গ্রহণ করেছে। তার অনুসারীরা তার মতোই হয়ে যাবে এবং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত থেকে খারিজ হয়ে যাবে। পরে অবশ্য সকলের চোখ খুলে গেল। হযরত মাওলানা মুফতী শফী (রহ.) ও হযরত মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী (রহ.)ও লেখে দিলেন মওদূদী গোমরাহ। তার অনুসরণ করা যাবে না। এর মাধ্যমে সকল উলামায়ে কেরাম এ কথার ওপর ঐক্যবদ্ধ হয়ে গেলেন যে, মওদূদী গোমরাহ। সকলের ঐক্যবদ্ধ মত চলে আসার পর দলিল তলব করা পাগলামি ছাড়া আর কী হতে পারে। একজন হক্কানি আলেম দেখান যিনি মওদুদীর চিন্তাধারাকে সহীহ বলেছেন এবং এই দাবির উপর অটুট থেকে ইন্তিকাল করেছেন। হতে পারে কেউ কেউ মওদুদীর বাহ্যিক অবস্থা দেখে ধোঁকা খেয়েছেন, কিন্তু আল্লাহ তা’আলা তাঁর নেক বান্দাদের প্রতারিত অবস্থায় মউত দেন না। বরং সকলে শেষে তাওবা করার সুযোগ পেয়েছেন এবং করেছেন। নবীদের ওপর আল্লাহ তা’আলা ওহী পাঠিয়ে দিতেন। কিন্তু যারা নবী নন তাঁদের জন্য আল্লাহ তা’আলা কুদরতিভাবেই ব্যবস্থা করে দেন। আমাদের আকাবীরদের যে কেউ এই ধোঁকার শিকার হয়েছিলেন, সকলে ইন্তিকালের পূর্বে সব কিছু বুঝতে পেরে তাওবা করেছেন। হযরত মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী (রহ.) ভুল সংশোধন বই লেখেছেন। আল্লামা বিন্নুরী (রহ.) আল উস্তাদুল মওদূদী কিতাব লিখেছেন। হযরত মুফতী শফী (রহ.) মকামে সাহাবা কিতাব লিখেছেন। হযরত মুফতী সাহেব (রহ.) নিজ কিতাবে লেখেন, আমি মওদূদীর ব্যাপারে এর পূর্বে যা লিখেছি সবই মনসূখ-রহিত। এই লেখা রহিতকারী। মওদূদী গোমরাহ এবং গোমরাহকারী। এরূপ সব ফিতনার মোকাবেলা দেওবন্দীরা ছাড়া আর কারা করেছে?উপমহাদেশ থেকে ইংরেজদের বিতাড়নের জিহাদে? ইংরেজ সরকার মুসলমানদের ইসলাম থেকে বের করার জন্য বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করেছিল। কাদিয়ানী ইংরেজ ষড়যন্ত্রের ফসল। ওয়াহাবীরা ইংরেজ ষড়যন্ত্রের ফসল। এসব ষড়যন্ত্রের মোকাবেলায়ও দেওবন্দীরা ছাড়া ময়দানে কারা ছিল? হযরত মাওলানা আনওয়ার শাহ কাশ্মীরি (রহ.) ময়দানে নেমেছিলেন। হযরত মাওলানা মাহমুদ হাসান দেওবন্দী ময়দানে নেমেছেন। কাদিয়ানীদেরকে উপমহাদেশ থেকে বিতাড়িত করা হলো। হযরত মাওলানা মাহমুদ হাসান দেওবন্দীর শাগরেদ হযরত মাওলানা ইউসুফ বিন্নুরী (রহ.), মুফতী মাহমুদ সাহেব (রহ.) পাকিস্তান সরকারের মাধ্যমে কাদিয়ানীদেরকে অমুসলিম ঘোষণা করিয়েছিলেন। উদ্ভাদ আন্দোলন আরম্ভ করেছিলেন, আর ছাত্রগণ তাতে পূর্ণতা দান করেছেন। হযরত কাসেম নানুতবী (রহ.) ও এমদাদুল্লাহ মুহাজেরে মক্কী (রহ.) ইংরেজ খেদাও আন্দোলন শুরু করেছিলেন আর হযরত হোসাইন আহমদ মাদানী (রহ.)-এর হাতে তা পূর্ণতা লাভ করেছে। এই ইংরেজদের মাধ্যমে উপমহাদেশে গাইরে মুকাল্লিদের ফিতনার অনুপ্রবেশ করেছিল। কারণ এখানে সকল মুসলমানই মুকাল্লিদছিলেন। বিশেষ করে ৯৯ শতাংশ মুসলমানই হানাফী। ইংরেজ ষড়যন্ত্রে সৃষ্ট গাইরে মুকাল্লিদদের বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম মাহমুদ হাসান দেওবন্দী (রহ.) মাঠে নামলেন। তাঁর যৌক্তিক কর্মপন্থায় গাইরে মুকাল্লিদগণ এমনভাবে ঘরে প্রবেশ করে ছিলেন যে, শত বছর ঘর থেকে বের হতে আর সাহস করেনি। সম্প্রতি সৌদির অর্থায়নে তারা নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। সুতরাং আকাবীরদের আমানত হিসেবে তাদের মোকাবেলাও দেওবন্দীদেরই ময়দানে আসতে হবে।

Loading