আরবী তারিখঃ এখন ২২ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরি মুতাবিক ২ মে ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রোজ বৃহস্পতিবার, সময় রাত ৩:৫২ মিনিট
এলানঃ-
১৪৪৫-১৪৪৬ হিজরী, ২০২৪-২০২৫ ইং এর মাসিক সুন্নতী ইজতেমা সমূহ
* ৩০-৩১ মে ২৪ ইং বৃহস্পতিবার ফজর-শুক্রবার মাগরিব পর্যন্ত সালেকীনদের জন্য
* ২৭ জুন ২৪ ইং বৃহস্পতিবার মাগরিব-ইশা মাদরাসার সকলের জন্য
* ২৫-২৬ জুলাই ২৪ ইং বৃহস্পতিবার ফজর-শুক্রবার মাগরিব পর্যন্ত সালেকীনদের জন্য
* ২৯ আগষ্ট ২৪ ইং বৃহস্পতিবার মাগরিব-ইশা মাদরাসার সকলের জন্য
* ২৬-২৭ সেপ্টেম্বর ২৪ ইং বৃহস্পতিবার ফজর-শুক্রবার মাগরিব পর্যন্ত সালেকীনদের জন্য
* ২৪ অক্টোবর ২৪ ইং বৃহস্পতিবার মাগরিব-ইশা মাদরাসার সকলের জন্য
* ২৮-২৯ নভেম্বর ২৪ ইং বৃহস্পতিবার ফজর-শুক্রবার মাগরিব পর্যন্ত সালেকীনদের জন্য
* ২৬ ডিসেম্বর ২৪ ইং বৃহস্পতিবার মাগরিব-ইশা মাদরাসার সকলের জন্য
* ৩০-৩১ জানুয়ারী ২৫ ইং বৃহস্পতিবার ফজর-শুক্রবার মাগরিব পর্যন্ত সালেকীনদের জন্য
* ২৭ ফেব্রুয়ারী ২৫ ইং বৃহস্পতিবার মাগরিব-ইশা মাদরাসার সকলের জন্য
* মার্চ ২৫ ইং এজতেমা সালেকীনদের জন্য

শাওয়ালের ছয় রোজার গুরুত্ব ও ফজিলত

পবিত্র রমজানের পরবর্তী মাস এবং চন্দ্র মাসের দশম মাস হচ্ছে শাওয়াল। শাওয়াল মাসে অনেক আমল রয়েছে এসব আমলের ফজীলত-ও অনেক বেশী। নিম্নে শাওয়াল মাসের আমল ও ফজীলত সর্ম্পকে সংক্ষিপ্তভাবে আলোকপাত করার প্রয়াস করলাম ।

শাওয়াল শব্দের বিশ্লেষণ

শাওয়াল শব্দটি ‘শাওলুন’থেকে এসেছে, যার অর্থ হচ্ছে বের হওয়া। যেহেতু এ মাসে আরববাসী আনন্দ-উল্লাসের জন্য ভ্রমণে বের হয় এজন্য শাওয়ালকে শাওয়াল বলা হয়। [গিয়াসুল্লুগাত-২৮৭]

শাওয়ালের আমল

শাওয়াল মাসের গুরত্বপূর্ণ একটি আমল হচ্ছে শাওয়ালের ‘ছয় রোজা’। রমজানের ফরজ রোজা পালনের পর শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজা রাখা মুস্তাহাব। আর এ রোজাকে শাওয়ালের ছয় রোজা বলে। এই রোজার অনেক ফজীলত রয়েছে যা হাদিস দ্বারা প্রমাণিত । রাসুল আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে এ রোজা রাখতেন এবং সাহাবায়ে কেরামগণকে ও রাখার জন্য নির্দেশ দিতেন ।

শাওয়ালের রোজার ফজীলত

এই রোজার ফজীলত সর্ম্পকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদিসের মধ্যে ইরশাদ করেন,“যারা মাহে রমজানের ফরজ রোজা রাখবে,অতপর মাহে শাওয়ালের ছয় রোজা রাখবে তারা সারা বছর রোজা রাখার সওয়াব অর্জন করবে। [মুসলিম শরীফ :১ম.খন্ড ৩৬৯পৃ:]
এ রোজার ফজীলত সম্পর্কে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  আরো ইরশাদ করেন,“ যারা পবিত্র রমজানের রোজা রাখার পর শাওয়ালের আরো ছয়টি রোজা রাখবে তারা সেই ব্যক্তির মত হয়ে যাবে যে ব্যক্তি সদ্য তার মায়ের পেঠ থেকে দুনিয়াতে আগমণ করেছে। অর্থাৎ সে শিশু যেভাবে পুত-পবিত্র তথা নিষ্পাপ, তার কোন গোনাহ নেই, যারা শাওয়ালের ছয় রোজা রাখবে তারা ও সেই নিষ্পাপ শিশুর মত হয়ে যাবে ।  [তিরমিযী শরিফ]

হযরত উবাইদুল্লাহ রা: থেকে বর্ণিত.তিনি বলেন, একদিন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করলাম ,ইয়া রাসুলাল্লাহ আমি কি সারা বছর রোজা রাখতে পারব? তখন রাসুল সা: বললেন,“তোমার উপর তোমার পরিবারের হক রয়েছে”,কাজেই তুমি সারা বছর রোজা না রেখে. রমজানের রোজা রাখ এবং রমজানের পরবর্তী মাস শাওয়ালের ছয় রোজা রাখ, তাহলেই তুমি সারা বছর রোজা রাখার সওয়াব পাবে। [তিরমিযি শরিফ:১ম খন্ড.১৫৭পৃ:]

এই হাদিসে বলা হয়েছে যে, রমজানের রোজা রাখার পর শাওয়ালের ছয়টি রোজা রাখলে সারা বছর রোজা রাখার সওয়াব পাওয়া যাবে। এই সওয়াব এভাবে যে, মহান রাব্বুল আলামিন মানবতার মুক্তির সনদ মহা গ্রন্থ আল কুরআন কারীমের সুরায়ে আনআমের ১৬০ নম্বর আয়াতে ইরশাদ করেন, “যে লোক একটি নেক কর্ম আঞ্জাম দিবে সে লোক দশগুণ বেশী সওয়াব পাবে। সে হিসেবে রমজানের ত্রিশ রোজায় তিনশত রোজার সওয়াব হয়। আর মাহে শাওয়ালের ছয় রোজায় ষাট রোজার সওয়াব হয়। এভাবে রমজানের ৩০ রোজা এবং শাওয়ালের ৬ রোজা মোট ৩৬ রোজা দশ দিয়ে গুণ দিলে ৩৬০ রোজার সমান হয়ে যায়, আর ৩৬০ দিনে এক বছর। সুতরাং ৩৬ টি রোজায় সারা রছর রোজা রাখার সওয়াব পাওয়া যায়।

শাওয়ালের রোজা রাখার নিয়ম

শাওয়ালের ছয় রোজা শাওয়াল মাসেই শুরু করে শেষ করতে হবে। ধারাবাহিকভাবে ছয় দিনে ছয় রোজা রাখা যায় আবার মাঝে ফাক রেখে পৃথকভাবেও রাখা যায়। উল্লেখ্য যে, শাওয়ালের ছয় রোজার সওয়াব তারা পাবে যারা রমজানের রোজা সঠিকভাবে পালন করেছে। কারণ রমজানের রোজা হচ্ছে ফরজ আর শাওয়ালের রোযা হল মুস্তাহাব। মুস্তাহাবের সওয়াব তখনই পাওয়া যায় যখন ফরজ পালন করা হবে ।

আমাদের সমাজ আজ বিভিন্ন ধরণের গোমরাহিতে নিমজ্জিত। অনেক লোক এমন আছে যারা রমজানের ফরজ রোজা, ফরজ নামাজ, ইত্যাদি পালন করেনা কিন্তু নফল আমল নিয়ে বাড়াবাড়ি করে। গত রমজান মাসের দুপুর বেলায় আমাদের এলাকার এক ভ্রদ্র লোকের সাথে হঠাৎ আমার দেখা, দেখলাম এই লোকটি সিগারেট খাচ্ছে, জিজ্ঞাস করলাম ভাই রমজান মাসে আপনি একি করছেন? সে আমাকে বলল ভাই আমার গ্যাস্ট্রিক যার কারণে আমি রোজা রাখতে পারিনি । ঈদুল ফিতরের কয়েকদিন পর আবার সেই লোকটির সাথে হঠাৎ আমার দেখা, সে আমাকে বলল ভাই আপনি শাওয়ালের ছয় রোজা রাখছেন কী? আমি বললাম আপনি রাখছেন? সে বলল আরে মিয়া আমি না রেখে আপনাকে বলছিনাকি। আমি তাকে বললাম ভাই এখন কি আপনার গ্যাস্ট্রিক নেই? সে বলল ভাই শাওয়ালের রোজাতো মাত্র ৬ টি এবং তার ফজীলতও বেশী এসব কারণে রাখলাম ।
এটাও জেনে রাখা ভাল যে, শাওয়াল মাসে এ ৬ টি রোজা মাসের যেকোন দিন রাখা যায়। মাসের শুরুতে রাখা যায়, আবার মাসের মধ্যে বা মাসের শেষে যেকোন সময় তথা যেকোন দিন রোজা রাখা যায়। যার যার সুযোগ-সুবিধা মত এক সাথে ছয় রোজা, আবার আলাদা আলাদা করেও রাখা যায়। এমনকি শাওয়ালের ভিতরে ছয়টি রোজা রাখলেই হবে ।

শাওয়ালের ছয়টি রোজা নিয়ে আমাদের সমাজে ভ্রান্ত কিছু ধারণা ও কুসংস্কার দেখা দিয়েছে। অনেকে মনে করে এ ছয় রোজা শুধু মাত্র মহিলারা রাখবে, বুড়ো ও পুরুষ লোক রাখবেনা। আবার কেউ কেউ মনে করে এ রোজা একবার রাখলে প্রতি বছরই রাখতে হবে। এছাড়া ও আরো বেশ কিছু কুসংস্কার সমাজে দেখা দিয়েছে ।
বাস্তবতা হচ্ছে ইসলামী শরীয়তে এহেন কোন বিধান আরোপ করেনি। ঐসব কিছু হচ্ছে কুসংস্কার ও কুপ্রথা তথা ভ্রান্ত বিশ্বাস। শাওয়ালের রোজা পুরুষ, মহিলা, যুবক, বৃদ্ধসহ সকলেই রাখতে পারবে। আবার একবার রাখলে বারবার তথা প্রতি বছর রাখতে হবে এইরকম কোন বিধি-বিধান শরীয়তে নেই । ইচ্ছা হলে প্রতি বছর রাখতে পারবেন অথবা নাও রাখতে পারবেন, এটা যার যার ইচ্ছা। এটা মুস্তাহাব, ফরজ নয়। যেহেতু রাসুলের হাদিস দ্বারা এই ছয় রোজার অনেক ফজীলত পাওয়া গেল এবং রাসুল সা. নিজেও শাওয়ালের এ ছয় রোজা রাখতেন এবং উম্মতকে রাখার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন, সেজন্য এ রোজা রাখা আমাদের জন্য উচিত। মহান রাব্বুল আলামিন আমাদের সকলকে যেন শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজা এখলাসের সাথে রাখার তাওফিক দান করেন। আমিন ।

Loading