আরবী তারিখঃ এখন ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরি মুতাবিক ২৪ এপ্রিল ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রোজ বুধবার, সময় সন্ধ্যা ৭:০১ মিনিট
এলানঃ-
১৪৪৫-১৪৪৬ হিজরী, ২০২৪-২০২৫ ইং এর মাসিক সুন্নতী ইজতেমা সমূহ
* ২৫ এপ্রিল ২৪ ইং বৃহস্পতিবার মাগরিব-ইশা মাদরাসার সকলের জন্য
* ৩০-৩১ মে ২৪ ইং বৃহস্পতিবার ফজর-শুক্রবার মাগরিব পর্যন্ত সালেকীনদের জন্য
* ২৭ জুন ২৪ ইং বৃহস্পতিবার মাগরিব-ইশা মাদরাসার সকলের জন্য
* ২৫-২৬ জুলাই ২৪ ইং বৃহস্পতিবার ফজর-শুক্রবার মাগরিব পর্যন্ত সালেকীনদের জন্য
* ২৯ আগষ্ট ২৪ ইং বৃহস্পতিবার মাগরিব-ইশা মাদরাসার সকলের জন্য
* ২৬-২৭ সেপ্টেম্বর ২৪ ইং বৃহস্পতিবার ফজর-শুক্রবার মাগরিব পর্যন্ত সালেকীনদের জন্য
* ২৪ অক্টোবর ২৪ ইং বৃহস্পতিবার মাগরিব-ইশা মাদরাসার সকলের জন্য
* ২৮-২৯ নভেম্বর ২৪ ইং বৃহস্পতিবার ফজর-শুক্রবার মাগরিব পর্যন্ত সালেকীনদের জন্য
* ২৬ ডিসেম্বর ২৪ ইং বৃহস্পতিবার মাগরিব-ইশা মাদরাসার সকলের জন্য
* ৩০-৩১ জানুয়ারী ২৫ ইং বৃহস্পতিবার ফজর-শুক্রবার মাগরিব পর্যন্ত সালেকীনদের জন্য
* ২৭ ফেব্রুয়ারী ২৫ ইং বৃহস্পতিবার মাগরিব-ইশা মাদরাসার সকলের জন্য
* মার্চ ২৫ ইং এজতেমা সালেকীনদের জন্য

মু’মিন নারীগণ যেসব আমলের মাধ্যমে জান্নাতে উচ্চ মর্যাদা লাভ করবেন! -আল্লামা মুফতি জসিমুদ্দীন দা. বা.

মহিলাদের জন্য শাহাদাতের অনুরূপ মর্যাদা

হযরত মায়মুনা (রাযি.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে মহিলা স্বামীর কথা মানে। আর তার হক আদায় করে নেক কথাকে স্বরণ করে এবং স্বামীর মালের খিয়ানত থেকে পরহেয করে, সেই মহিলারা জান্নাতে শহীদদের থেকে এক দরজাকম থাকবে। আর তার স্বামী যদি মুমিন এবং ভাল আখলাক ওয়ালা হয়, জান্নাতে ঐ স্বামী তাকে দেয়া হবে, না হয় সেই মহিলার বিবাহ শহীদের সাথে করিয়ে দিবে।

পুরুষের ও মহিলার দায়িত্ব

হযরত যমরা বিন হাবীব (রাযি.) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজের মেয়ে ফাতিমার জন্য ফায়সালা করেছেন যে, ঘরের কাজ হযরত ফাতিমা (রাযি.) আঞ্জাম দিবে এবং হযরত আলী (রাযি.)এর দায়িত্ব ঘরের বাহিরের কাজ আঞ্জাম দেওয়া।

স্বামীর কাপড় ধোয়া পরিস্কার করা সুন্নাত

হযরত আয়েশা (রাযি.) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)এর কাপড় থেকে নাপাক ইত্যাদি ধুয়ে দিতাম। তারপর রাসূলুল্লাহ্ (সা.) সে কাপড় পরিধান করে নামায পড়ার জন্য তাশরিফ নিয়ে যেতেন।

স্বামীর অযু গোসল ইত্যাদিতে সাহায্য করা

হযরত আয়েশা (রাযি.) বলেন, আমি রাত্রে রাসূলুল্লাহ (সা.)এর জন্য তিন বর্তনে (তিন ভাগে) পানি রাখতাম। ১. যে পানি দিয়ে রাসূলুল্লাহ্ (সা.) অযু-ইস্তিঞ্জা করতেন। ২. যে পানি দিয়ে রাসূলুল্লাহ্ (সা.) মিসওয়াক করতেন। ৩. যে পানি পান করতেন।

মহিলা কোন কাজে স্বামীর কথা অমান্য করবে

হযরত আয়েশা (রাযি.) থেকে বর্ণিত, আন্দাব বংশের এক মহিলা তার মেয়েকে বিবাহ দিয়েছে এবং ঐ মেয়ের মাথার চুল পড়ে গেছে। সে তাকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.)এর খেদমতে হাজির হলেন এবং বললেন, তার স্বামী বলেছে, তার মাথার চুলের সাথে অন্য মহিলার চুল মিশাতে। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সা.) বললেন, না অন্যের চুল মিলানোকারী মহিলার উপর আল্লাহর লানত। হযরত আব্দুল্লাহ্ (রাযি.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ (সা.) ইরশাদ করেন- মুসলমানদের জন্য শোনা আর মানা হল গ্রহণীয় ও উত্তম, যে পর্যন্ত গুনাহের কাজের হুকুম দেওয়া না হয়। আর যখন কোন গুনাহের হুকুম দেয়া হয়, তখন শোনা ও মানা জায়েয নেই। হযরত নাওয়াস ইবনে সামআন থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহর নাফরমানীতে কোন মাখলুকের কথা মানা যাবে না।

স্বামীর উপর স্ত্রীর হক

হযরত মুআবিয়া কুশাইরী (রাযি.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) থেকে জিজ্ঞেস করেছি যে, আমরা পুরুষদের উপর মহিলাদের কি হক রয়েছে? রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, যখন তুমি আহার করবে, তাকেও খাওয়াবে। যখন তুমি পরিধান করবে, তাকেও পরিধান করাবে, তাকে মুখে মারবে না অর্থাৎ- তাকে গালি দেবে না, আর তাকে ঘর ছাড়া তথা অন্য জায়গায় রাখিও না।হযরত আমর বিন আহওয়াছ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, মহিলাদের জন্য তোমাদের উপর এই হক, তোমরা তাদের খানা ও কাপড়ের ভালভাবে খেয়াল রাখবে।

মাসআলাঃ যেভাবে স্বামীর হক স্ত্রীর উপর আছে, সেভাবে স্ত্রীরও স্বামীর উপর হক আছে। সামর্থ অনুযায়ী আহারের ব্যবস্থা করানো, পোষাক পরিধান করানো, মারধর না করা, অশ্লীল গালমন্দ না করা, বংশ ধরে গালি না দেওয়া, স্বার্থের বাহিরে কোন কাজের হুকুম না দেওয়া, তার শারীরিক মানসিক খেয়াল করা ইত্যাদি।

কোন মহিলার উপর জান্নাতের সুঘ্রাণও হারাম

রাসূলুল্লাহ্ (সা.) ইরশাদ করেন, যে মহিলা তার স্বামী থেকে বিশেষ প্রয়োজন ও পেরেশানী ছাড়া তালাক চায় বা স্বামীকে তালাকের জন্য বাধ্য করে, তার উপর জান্নাতের সূঘ্রাণও হারাম।

কোন মহিলাকে মুনাফিক বলা হয়েছে

হযরত আবু হুরায়রা (রাযি.) থেকে বর্ণিত, যে মহিলা স্বামী থেকে পৃথক হতে চায় এবং স্বামী থেকে খোলা’ চায়, সেই মহিলাকে মুনাফিক বলা হয়েছে।হযরত জাবির (রাযি.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ (সা.) বলেন, তিন প্রকারের লোক তাদের না নামায কবুল হবে, না কোন নেকী উপরে উঠবে। ১. পালিয়ে যাওয়া গোলাম: যে পর্যন্ত মনিবের হাতে ফিরে না আসে। ২. ঐ মহিলা; যার উপর স্বীয় স্বামী নারায হয়ে যায়। ৩. আর ঐ শরাব পানকারী মাতাল; যে পর্যন্ত তার শরাবের ক্রিয়া শেষ না হয়।

মহিলাদের জন্য তার স্বামীর মর্যাদার পরিমাণ

হযরত আবু হুরায়রা (রাযি.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ (সা.) ইরশাদ করেন, আমি যদি আল্লাহ ছাড়া কাউকে সিজদা করার অনুমতি দিতাম, তাহলে মহিলাদেরকে তার নিজের স্বামীকে সিজদা করতে বলতাম।

মাসআলাঃ আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কাউকে সিজদা করা জায়েয নেই। উক্ত হাদিস দিয়ে দুটি কথা বুঝানো হয়েছে। প্রথমতঃ স্বামীর হক্বের গুরুত্ব, দ্বিতীয়তঃ আল্লাহ্ ছাড়া গায়রুল্লাহ্কে সিজদা করা জায়েয নেই।

কোন পুরুষ বা মহিলার উপর আল্লাহর অভিশাপ

হযরত আবু হুরায়রা (রাযি.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ (সা.) ইশাদ করেন, ঐ পুরুষের উপর আল্লাহর অভিশাপ, যে বলে যে, আমি বিবাহ করব না। অনুরূপ ঐ মহিলার উপরও অভিশাপ, যে বলে আমি বিবাহ্ বসব না। হযরত আবু নজিহ হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ্ (সা.) ইরশাদ করেন, যে বিবাহ করার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও বিবাহ করে না, সে আমার দল ভুক্ত নয়।

মাসআলাঃ যে বক্তি দৈহিক ও আর্থিকভাবে স্ত্রীর হক আদায় করার ক্ষমতা রাখে এবং বিবাহ না করলে গুনাহে লিপ্ত হওয়ার আশংকা থাকে, তার জন্য বিবাহ করা ফরয। আর যার নিকট দৈহিক ও আর্থিক স্ত্রীর হক আদায় করার ক্ষমতা আছে, তবে বিবাহ না করলেও গুনাহে লিপ্ত হওয়ার আশংকা না থাকে, তার জন্য বিবাহ করা সুন্নাতে মুআক্কাদা। আর স্ত্রীর হক আদয় করার ক্ষমতা না থাকলে বিবাহ করা মাকরুহ। স্ত্রীর উপর জুলুম হওয়ার উপর দৃঢ় অশংকা হলে বিবাহ করা হারাম এবং উভয় অবস্থায় রোযা রাখবে।

-উস্তাদুল হাদীস ওয়াল ফিক্বহ এবং সহকারী পরিচালক- আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।

Loading