আরবী তারিখঃ এখন ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরি মুতাবিক ২৬ এপ্রিল ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রোজ শুক্রবার, সময় দুপুর ২:০৪ মিনিট
এলানঃ-
১৪৪৫-১৪৪৬ হিজরী, ২০২৪-২০২৫ ইং এর মাসিক সুন্নতী ইজতেমা সমূহ
* ২৫ এপ্রিল ২৪ ইং বৃহস্পতিবার মাগরিব-ইশা মাদরাসার সকলের জন্য
* ৩০-৩১ মে ২৪ ইং বৃহস্পতিবার ফজর-শুক্রবার মাগরিব পর্যন্ত সালেকীনদের জন্য
* ২৭ জুন ২৪ ইং বৃহস্পতিবার মাগরিব-ইশা মাদরাসার সকলের জন্য
* ২৫-২৬ জুলাই ২৪ ইং বৃহস্পতিবার ফজর-শুক্রবার মাগরিব পর্যন্ত সালেকীনদের জন্য
* ২৯ আগষ্ট ২৪ ইং বৃহস্পতিবার মাগরিব-ইশা মাদরাসার সকলের জন্য
* ২৬-২৭ সেপ্টেম্বর ২৪ ইং বৃহস্পতিবার ফজর-শুক্রবার মাগরিব পর্যন্ত সালেকীনদের জন্য
* ২৪ অক্টোবর ২৪ ইং বৃহস্পতিবার মাগরিব-ইশা মাদরাসার সকলের জন্য
* ২৮-২৯ নভেম্বর ২৪ ইং বৃহস্পতিবার ফজর-শুক্রবার মাগরিব পর্যন্ত সালেকীনদের জন্য
* ২৬ ডিসেম্বর ২৪ ইং বৃহস্পতিবার মাগরিব-ইশা মাদরাসার সকলের জন্য
* ৩০-৩১ জানুয়ারী ২৫ ইং বৃহস্পতিবার ফজর-শুক্রবার মাগরিব পর্যন্ত সালেকীনদের জন্য
* ২৭ ফেব্রুয়ারী ২৫ ইং বৃহস্পতিবার মাগরিব-ইশা মাদরাসার সকলের জন্য
* মার্চ ২৫ ইং এজতেমা সালেকীনদের জন্য

কারা এই তথাকথিত আহলে হাদিস? মুফতি মুনসুরুল হক দা. বা.

আহলে হাদীসদেরকে আপনারা জিজ্ঞাসা করুন, ‘তোমরা কি বুখারী মানো’? কী বলবে তারা? মানে। বুখারীতে লেখা আছে, ‘একসাথে তিন তালাকে তিন তালাক’। (সহীহ বুখারী; হা.নং ৫২৫৯) তোমরা বলছো, ‘বুখারী মানো’। তাহলে এ হাদীস মানতেছো না কেনো? এবার আপনারা নিশ্চয়ই বুঝতে পারলেন, তাদের সাথে আমাদের ঝগড়াগুলো কোথায়? মনে রাখুন, তারা বলে-

১) ইজমা-ক্বিয়াস কিছু লাগবে না।

২) ফক্বীহ লাগবে না। (নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ফক্বীহ লাগবে।)

৩) ‘সাহাবীরা সত্যের মাপকাঠি না’। (নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলে গেছেন, ‘আমার সমস্ত সাহাবী সত্যের মাপকাঠি’।)

৪) আমরা যারা ইমাম মানি, তারা সবাই মুশরিক। (নাউযুবিল্লাহ!)

এসব মারাত্মক ভুলের অনুসারী হওয়ার কারণে উলামাগণ তাদের মুখোশ উম্মোচন করতে বাধ্য হচ্ছেন। দুনিয়ার সাড়ে ১৫ আনা মুসলমান অর্থাৎ সারা দুনিয়ার মুসলমান মাযহাবী। তারা হাতেগোনা কয়েকটা মানুষ লা-মাযহাবী হয়ে আমাদেরকে বলছে মুশরিক। সারা দুনিয়ার মানুষ বেঈমান হয়ে গেলো, আর অল্প কয়েকজন লা-মাযহাবী মাত্র ঈমানদার রয়ে গেলো! এখানে উল্লেখ্য যে, যদি কোনো মুসলমানকে বেঈমান বলা হয়, আর প্রকৃতপক্ষে সে বেঈমান না হয়, তাহলে যে এ ধরনের কথা বলে সে বেঈমান হয়।

তারা বুখারী ও মুসলিম-এর হাদীস মানে। বুখারী, মুসলিম, আবূ দাউদ প্রমুখ ব্যক্তিগণ মাযহাব মেনেছেন কি-না?

বুখারী, মুসলিম, তিরমিজি, ইবনে মাজাহ এ চারজন শাফিঈ ছিলেন। নাসাঈ, আবূ দাউদ হাম্বলী ছিলেন। সাহাবীদের পরে চার ইমামের যুগ। চার ইমামের পরে সিহাহ সিত্তার মুসান্নিফদের যুগ। তারা সবাই মাযহাব মেনেছেন। ইমাম আহমাদ (রহঃ) ইমাম বুখারীর সরাসরি উস্তাদ ছিলেন। তারা কেউ একথা বলেননি যে, মাযহাব মানার প্রয়োজন নেই; আমার কিতাব বগলে রাখো, আর তা দেখে দেখে আমল করো!!

আমার একটা কিতাব আছে, ‘মাযহাব ও তাকলীদ’। সেখানে আমি দেখিয়েছি যে, আজ পর্যন্ত যারা হাদীস জমা করেছেন তাদের কে কোন মাযহাবের অনুসারী ছিলেন; আজ পর্যন্ত যারা তাফসীরের কিতাব লিখেছেন তারা কে কোন মাযহাবের অনুসারী ছিলেন এবং যে কিতাব দিয়ে হাদীসকে সহীহ-যঈফ বলা হয় সে কিতাবগুলো কারা লিখেছেন।

ফাতাওয়ার কিতাবগুলো কারা লিখেছেন? মাযহাবীরা লিখেছেন। কুরআনে কারীমের যতো প্রসিদ্ধ তাফসীর-গ্রন্থ আছে সেগুলোর সবই মাযহাবী উলামাগণ লিখেছেন। উপমহাদেশে বৃটিশদের আগমনের পূর্বে আহলে হাদীসের কোনো কিতাবই পাবেন না। তখন-তো আহলে হাদীস গোষ্ঠিই ছিলো না। এরা ভুঁইফোড় গোষ্ঠি!

বিভিন্ন কিতাব রচয়িতাদের সবাই-তো মাযহাবী ছিলেন। তারা যদি সবাই মুশরিক হয়ে থাকে, তাহলে তোমরা বুখারী শরীফ দিয়ে দলীল দিচ্ছো কেনো?

তবাকাতুশ শাফিইয়্যাহ কিতাবে আল্লামা সুবকী লিখেছেন যে, ইমাম বুখারী শাফিঈ মাযহাবের ছিলেন। (তবাকাতুশ শাফিইয়্যাহ ১/৪২১) মাযহাব মানলে যদি কেউ বেঈমান হয়ে থাকে, তাহলে ইমাম বুখারী বেঈমান হয়ে গেছেন। কাজেই বেঈমানের কিতাব দিয়ে তোমরা দলীল দিচ্ছো কেনো?

এমনিভাবে, নুখবাতুল ফিক্বার, মুকাদ্দামায়ে ইবনে সালাহ-সহ উসূলে হাদীস ও তারাজীমের যেসব কিতাবের সাহায্যে হাদীস সহীহ না যঈফ নির্ণয় করা হয়-সেগুলোর লেখক-তো মাযহাবী ছিলেন। মাযহাব মানা যদি শিরক হয়ে থাকে, তাহলে মুশরিকের কিতাব দিয়ে হাদীস সহীহ না যঈফ তা সাব্যস্ত করছো কেনো?

এবার আসুন, এ লোকগুলো যে এতোগুলো অন্যায় করলো অর্থাৎ –

১) তারা ইজমা-ক্বিয়াস মানে না।

২) নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন ফক্বীহ লাগবে। তারা বলে ফক্বীহ লাগবে না।

৩) নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সাহাবীগণ সত্যের মাপকাঠি। তারা বলে, সাহাবীরা সত্যের মাপকাঠি না।

৪) নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মু’মিনের ব্যাপারে সু-ধারণা রাখতে এবং কাফির না বলতে। অথচ তারা সবাইকে মুশরিক বলছে।

৫) তারা সুন্নী মুসলমানদের মিত্র নয়। (ব্যাখ্যা সামনে আসছে।)

এবার বলুন, এ লোকগুলোর ব্যাপারে কি হুযূররা চুপ থাকবে, নাকি তাদের মুখোশ খুলে দিবে, যাতে তারা আপনাদের সবাইকে বেঈমান বানিয়ে ফেলতে না পারে?

দয়া করে আরেকটি কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন। আমেরিকা যদি কোনো দেশে বোমা মারতে চায় সরাসরি তা পারে না, বরং ঐ দেশের কিছু লোকের সাপোর্ট লাগে। কুড়াল ততোক্ষণ লাকড়ি কাটতে পারে না, যতোক্ষণ তার মধ্যে লাকড়ি না ঢুকানো হয়। আমেরিকা একা কিছু করতে পারে না, আক্রান্ত দেশের কিছুলোকের সাহায্য তার নিতে হয়। তা না হলে মুসলমানদের এতোগুলি দেশ কাফিররা ধ্বংস করলো কীভাবে?

ইরাকে যারা শী‘আ আছে তারা আমেরিকার সাথে যোগ দিয়েছিলো। বিভিন্ন দেশে এটা শুরু হয়ে গেছে। যে সকল মুসলিম দেশে বিভিন্ন খনি আছে আমেরিকা সেসব দেশকে পদানত করে খনিগুলো লুণ্ঠন করে। প্রত্যেকক্ষেত্রে দেখা গেছে, আমেরিকা সুন্নী মুসলমানদেরকে আপন করে না। তারা হয় শী‘আদেরকে আপন বানিয়ে সুন্নীদেরকে মারে, অথবা কোনো কোনো দেশে আহলে হাদীসদেরকে আপন বানিয়ে সুন্নীদেরকে মারে। এতে পরিস্কার বোঝা গেলো, এরা মুসলমানদের মধ্য থেকে কেউ নয়।

আমেরিকা আমাকে আপনাকে বিশ্বাস করে না, বরং তাদেরকে বিশ্বাস করে। আল্লাহ না করুন, বাংলাদেশকে যদি আমেরিকা ধ্বংস করতে চায় তাহলে অস্ত্র, টাকা ইত্যাদি কাকে দেবে? আপনাকে, না এদেরকে? (কাজেই গভীরভাবে চিন্তা করা দরকার যে, বর্তমানে বাংলাদেশে আহলে হাদীসদের দৌরাত্মের মূলে কী আছে?)

তারা আপনাকে আমাকে মারবে এই বলে যে, এরা কাফির; এদেরকে মারতে হবে। সুতরাং, তারা আমেরিকার বন্ধু। আমেরিকা তাদেরকে মসজিদে গিয়ে আমীন জোরে বলার জন্য পাঠিয়েছে। আমি-তো ঢাকায় বিভিন্ন মসজিদে বলে দিয়েছি, আপনারা ছোটো করে একটা সাইনবোর্ড লাগিয়ে দিন যে, এ মসজিদে সবাই আস্তে আমীন বলে। এখানে চিৎকার করে আমীন বলে বিভ্রান্তি ছড়ানোর সুযোগ নেই। যদি কেউ এ দলের হয়ে থাকেন তিনি যেনো এ মসজিদে না ঢুকেন। মোহাম্মদপুরে একটি মসজিদ আছে। আল আমীন মসজিদ। সেখানে চিৎকার করে আমীন বলার চর্চা আছে। আপনারা বলবেন, তোমারা সে মসজিদে চলে যাও। যতো পারো সেখানে গিয়ে চিৎকার করো এবং দু-পা যতো ফাঁকা করে পারো দাঁড়িয়ে নামায পড়ো, কোনো অসুবিধা নেই।

দু’পায়ের মাঝে এতো বিশাল ফাঁকা রেখে নামাযের কথা কোন হাদীসে এসেছে? কখনো শুনেছেন এরকম হাদীস? এদের সম্পর্কেই রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন। আমাদেরকে সতর্ক করেছেন। মুসলিম শরীফে উল্লেখ আছে, নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

يَكُونُ فِي آخِرِ الزَّمَانِ دَجَّالُونَ كَذَّابُونَ، يَأْتُونَكُمْ مِنَ الْأَحَادِيثِ بِمَا لَمْ تَسْمَعُوا أَنْتُمْ، وَلَا آبَاؤُكُمْ، فَإِيَّاكُمْ وَإِيَّاهُمْ، لَا يُضِلُّونَكُمْ، وَلَا يَفْتِنُونَكُمْ

অর্থঃ শেষ যামানায় কিছু ধোঁকাবাজ-মিথ্যুক প্রকাশ পাবে, যারা তোমাদেরকে এমন এমন হাদীস শোনাবে যা তোমরা ইতোপূর্বে কখনো শোননি, এমনকি তোমাদের পূর্বপুরুষ বাপ-দাদাও শোনেনি। তাদের ব্যাপারে সাবধান থেকো। তাদের কথিত হাদীস যেনো তোমাদের গোমরাহ করতে না পারে। – (সহীহ মুসলিম; হা.নং ৭)

রুকূ-সিজদায় ঘোড়ার লেজের মতো হাত তোলা বা নামাযে দু’পায়ের মাঝে বিস্তর ফাঁক রেখে দাঁড়ানো এরকম হাদীসগুলো শুনেছেন কখনো? তারা কাযা নামাযের ব্যাপারে ফাতাওয়া দেয়, ইসলামে কাযা নামায নেই। তাওবা করে নিলেই চলবে! এ জাতীয় হাদীস কখনো শুনেছেন? অথচ কাযা নামাযের কথা হাদীসের কিতাবে অসংখ্যবার উদ্ধৃত হয়েছে। (সহীহ বুখারী; হা.নং ৫৯৭, মুসনাদে আহমাদ; হা.নং ২৩৪৯, ১৬৯৭৫)

হাদীসের কিতাবগুলোতে কাযা নামাযের পদ্ধতিও বাতলে দেয়া হয়েছে। তারা আরোও বলে, আল্লাহ প্রত্যেক নবীকে দিয়ে পাঁচটি কবীরা গুনাহ করিয়েছেন! সাহাবারা নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইন্তেকালের পর গোমরাহ হয়ে গিয়েছিলেন! ইত্যাদি। কোথাও শুনেছেন এরকম হাদীস? মুসলিম শরীফের হাদীসে যাদের কথা বলে মুসলমানদের সতর্ক করা হয়েছে, দেখা গেলো এরাই তারা। হাদীসে তাদের ব্যাপারেই সতর্ক করা হয়েছে যে, ‘তাদের থেকে দূরে থাকো যাতে তারা তোমাদেরকে গোমরাহ করতে না পারে।’

এখন নিশ্চয়ই সকলে বুঝতে পারছেন, এ গোষ্ঠীর নাম আহলুল হাদীস। আর আমাদের নাম হচ্ছে, আহলুস সুন্নাতি ওয়াল জামা‘আহ। আপনারা বিচার করুন-তো কোন নামটা সঠিক? আহলে হাদীস না আহলে সুন্নাহ?

বিচার করার আগে হাদীস ও সুন্নাহর পার্থক্য বুঝতে হবে। এক সময়ে এ পার্থক্য জানার প্রয়োজন ছিলো না। কিন্তু বর্তমানে ঈমান হিফাজতের জন্য এ পার্থক্য জানা জরুরী হয়ে পড়েছে। হাদীস কী?

নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের ২৩ বছরের যাবতীয় কথা, কাজ, সরব বা মৌন সমর্থন, তার চারিত্রিক গুণাবলী ও দৈহিক অবকাঠামো ইত্যাদি সম্পর্কিত সকল বর্ণনাই হাদীস। হাদীস হচ্ছে এক ভান্ডার। আর এ ভান্ডারের একটা বিশেষ অংশ হচ্ছে সুন্নাহ। সুন্নাহ হচ্ছে, যা উম্মাহর জন্য অনুসরণযোগ্য।

হাদীসের ঐ অংশ সুন্নাহ, যার মধ্যে উম্মাহর করণীয় ও অনুসরণীয় বিষয় রয়েছে। আর যেসব হাদীসে করণীয় কিছু উল্লেখ নেই, যেমনঃ দাজ্জালের আগমন, দাব্বাতুল আরদ ইত্যাদির ভবিষ্যদ্বাণীর মাঝে করণীয় নেই। (সূরা নামল : ৮২, বুখারী; হা.নং ৭১২৪)

তাই এগুলো হাদীস বটে, কিন্তু সুন্নাহ না। আবার, হাদীসে করণীয় কোনো বিধান উল্লেখ থাকলে তখন দেখতে হবে সেটা এখনো বলবৎ আছে, নাকি মানসুখ তথা রহিত করা হয়েছে?

যেমন, বুখারী শরীফে ছয় জায়গায় এসেছে; ইমাম সাহেব বসে নামায পড়লে তোমরাও বসে ইক্তিদা করো। এ হাদীসের হুকুম আমাদের জন্যে বাকী নেই, রহিত হয়ে গেছে। দলীল হলো, ইন্তেকালের আগে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কয়েকদিন মসজিদে যেতে পারেননি। বুধবার রাত থেকে সোমবার পর্যন্ত সময়ের মধ্যে শনিবার যুহরের নামাযে রাসুল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’জন সাহাবীর কাঁধে ভর করে মসজিদে গমন করেন। তারপর তিনি বসে যুহরের নামায পড়ালেন। আর পিছনে সাহাবীগণ সবাই দাঁড়িয়ে ইক্তিদা করলেন। (সহীহ বুখারী; হা.নং ৬৮৭, সহীহ মুসলিম; হা.নং ৪১৮)

সুতরাং বোঝা গেলো, বসে ইক্তিদা করা সংক্রান্ত বুখারী শরীফের আগের হাদীস রহিত হয়ে গেছে। এখন সেটা হাদীস হিসেবে রয়ে গেছে বটে, কিন্তু অনুসরণ করা যাবে না। তাই এটা সুন্নাহ না। যদি বসে পড়ার হাদীস রহিত না হতো, তাহলে সাহাবাগণ বসে না পড়ে, দাঁড়িয়ে নামায আদায় করলেন কেনো? এজন্যে বসে ইক্তিদা করার হাদীসটি কেবলই হাদীস, সুন্নাহ নয়। অর্থাৎ অনুসরণযোগ্য নয়।

অতএব বোঝা গেলো, হাদীসের বিশাল ভান্ডার থেকে যে অংশটুকু আমাদের জন্যে আমলযোগ্য বা পালনীয় এবং তা নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যু পর্যন্ত বহাল ছিলো শুধু সে অংশটুকু সুন্নাহ। আশাকরি এ আলোচনা দ্বারা হাদীস ও সুন্নাহর পার্থক্য পরিষ্কার হয়েছে। আমরা বলি, আমাদের জামা‘আতের নাম হচ্ছে ‘আহলুস সুন্নাহ।’ ‘আহলে হাদীস’ না। কারণ আমরা সুন্নাহ অনুসরণ করি।

আহলে হাদীস যারা দাবী করে তাদের জিজ্ঞেস করবেন, আপনারা যদি হাদীসের অনুসারী হয়ে থাকেন তাহলে ১১টা বিয়ে করুন। কারণ হাদীসে আছে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ১১ জন নারীকে বিয়ে করেছিলেন। এমনকি, ৯ জন স্ত্রীকে রেখে ইন্তেকাল করার হাদীস বুখারীতেই আছে। (সহীহ বুখারী; হা.নং ২৬৮) বলুন তো, ১১ জন নারীকে বিয়ে করার অনুমতি আছে আমাদের জন্যে? না! অনুমতি নেই। ১১ জনকে বিয়ের কথা হাদীস, কিন্তু সুন্নাহ নয়। উম্মাহর অনুসরণযোগ্য নয়। সুতরাং ‘আহলে হাদীস’ নামটাই ভুল।

হাদীসের অনুসারী দাবী করলে-তো সেসব হাদীসও অনুসরণ করা জরুরী যেগুলো আমাদের জন্যে নয়, বরং রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে খাস, অথবা রহিত হয়ে গেছে। সুতরাং বুখারী শরীফে উল্লেখ থাকলেই সেটা অনুসরণযোগ্য হয়ে যায় না। বুখারীতে এমন অনেক হাদীস রয়েছে যেগুলো রহিত হয়ে গেছে, অথবা যেগুলো রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে খাস। সেগুলো সুন্নাহ নয়, বরং হাদীস। একটু আগে বলেছিলাম, স্ত্রীর সাথে মিলিত হওয়ার পর যদি বীর্যপাত না হয়, তাহলে গোসল ফরয হয় না। এ হাদীস বুখারীতে দু’জায়গায় আছে। (সহীহ বুখারী; হা.নং ১৭৯,২৯৩) অথচ এটা মানা জায়েয নয়। কেননা এটা হাদীস; কিন্তু সুন্নাহ নয়।

সারকথা, আমরা ‘হাদীসের’ অনুসারী দাবী করি না। আমরা ‘সুন্নাহর’ অনুসারী দাবী করি। হাদীসের অনুসারী বা ‘আহলে হাদীস’ দাবী করাই গলদ। এখানে উলামাগণ উপস্থিত আছেন। আমার কথায় ভুল হয়ে থাকলে বলবেন। সুতরাং প্রথমে হাদীস বাছাই করতে হবে কোনগুলো উম্মতের জন্যে প্রযোজ্য। অতঃপর সেগুলো মানতে হবে। আর সে বাছ-বিচার করার দায়িত্ব হলো মুফতীদের ও উলামায়ে কিরামের।

আপনারা নিজে নিজে বুখারীর বাংলা তরজমা পড়বেন না। কারণ বুখারীতে রহিত হাদীসগুলোর কথা আলাদা করে চিহ্নিত করা নেই। ফলে আপনি বুখারী শরীফ পড়ে মসজিদে এসে অনাকাক্সিক্ষত গোলমাল শুরু করবেন যে, আমি হাদীসে পড়ে এলাম এতোবার হাত তুলতে হয়, অথচ আমাদের হুযূররা একবারের বেশি হাত তুলছেন না। তারা কোন কিতাব পড়লো? আমি-তো বুখারী পড়েছি।

আমি বলবো, আপনি-তো বুখারী পড়ছেন না, বরং বোকামী পড়ছেন অর্থাৎ অনুবাদ পড়ে এসেছেন। মূল বুখারীর এক লাইনও-তো পড়তে পারবেন না। কারণ, সেখানে যের-যবর দেয়া নেই। আমি চ্যালেঞ্জ দিলাম, কোনো আহলে হাদীস যদি বুখারী শরীফের এক লাইন পড়ে শোনাতে পারেন, তাহলে আমি তাকে পুরস্কার দিবো। এক জায়গায় এ চ্যালেঞ্জ দেয়ার পর একজন আহলে হাদীস দাঁড়িয়ে বললো, আমি এক লাইন পড়ে দেই?

আমি তাকে কাছে ডেকে বুখারী শরীফ সামনে খুলে দিয়ে পড়তে বললাম। সে পড়া শুরু করলো এই বলে, ছানা… ছানা…। আমি বললাম, বুখারী শরীফে ছানা-জিলাপি পেলেন কোথায়? এটা কি মিষ্টির কিতাব যে ছানা-জিলাপি সব পাওয়া যাবে এখানে? সে বললো, এই যে দেখেন হুযূর, ছা নূন আলীফ লেখা আছে, তাহলে কী হবে? আমি বললাম, আরে এটা তো ‘হাদ্দাছানা’কে সংক্ষেপে লেখা হয়েছে!! এই হলো তাদের হাদীস পড়ার অবস্থা। এবার আপনারা বলুন, তাদের ‘আহলে হাদীস’ নাম দেয়াটা সহীহ আছে কিনা?

আমরা যে ইজমা-ক্বিয়াস মানি তার দলীল হলো,

الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا

অর্থঃ আমি আজকের দিনে তোমাদের জন্য ইসলামকে, আমার দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম…। – (সূরা মায়িদা; আয়াত ৩)

এ আয়াতের তাফসীর করেছেন আল্লাহ তা‘আলা আরেক আয়াত দ্বারা। আয়াতটি হলো,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ وَالرَّسُولِ

এ আয়াত হলো আগের আয়াতের তাফসীর। আল্লাহ যে বলেছেন, “আমি দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম।” প্রশ্ন হলো, পরিপূর্ণ কীভাবে হলো?

পরিপূর্ণ এভাবে হলো যে, এমন কোনো হুকুম-আহকাম ও মাসআলা থাকবে না যার কোনো সমাধান নেই। আর সেটা এভাবে যে, أَطِيعُوا اللَّهَ এটা হলো কুরআন, وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ এটা হলো সুন্নাহ, وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ এটা হলো ইজমা। অর্থাৎ ইমামগণ একমত হয়ে যে সিদ্ধান্ত দেবেন সেটা ইজমা। আর فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ وَالرَّسُولِ এটা হলো ক্বিয়াস।

উল্লিখিত আয়াতের এ তাফসীর আমি কমপক্ষে দশটি তাফসীরের কিতাবে পেয়েছি। এ আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, শরী‘আতের দলীল চারটি। এ চারটি দলীল দ্বারা ইসলাম পরিপূর্ণ হয়েছে। সুতরাং যারা এ চারটির দুটোই মানে না, তারা সমাধান করবে কীভাবে?

এ কারণে আমি এখানকার দায়িত্বশীল ব্যক্তির কাছে একটি কাগজ দিয়েছিলাম বিতরণ করার জন্য, যেখানে আমি আহলে হাদীস বন্ধুদের কাছে দশটি প্রশ্ন করেছি। তারা যদি নিজেদের দাবিতে সঠিক হয়ে থাকে তাহলে যেনো তারা এ দশটি প্রশ্নের উত্তর দেয়। আমি এ চ্যালেঞ্জ করেছি কমপক্ষে ছয় মাস হয়ে গেছে। কিন্তু কোনো জবাব পাইনি। কিছুদিন পূর্বে হজ্জে গিয়েছিলাম। সেখানে মদীনা ভার্সিটির ছাত্রদের উদ্দেশ্যে আমি বয়ান করেছিলাম। তাদেরকে বলেছিলাম, যদি তোমাদের মধ্যে কেউ আহলে হাদীস থাকে তাহলে সে এ দশটি প্রশ্নের উত্তর দিক। চার মাযহাবের যে কেউ জবাব দিতে পারবে। কারণ তারা ইজমা-ক্বিয়াস মানে। আহলে হাদীসরা পারবে না, কারণ ওরা ইজমা-ক্বিয়াস মানে না।

★আমার জানতে চাওয়া দশটি প্রশ্নের মধ্য থেকে একটি প্রশ্ন হলো, বিমানে নামায পড়া যাবে কিনা?

নিশ্চয়ই এর একটি সমাধান প্রয়োজন। আপনারা তাদেরকে কুরআন-সুন্নাহ থেকে সরাসরি এর সমাধান দিতে বলুন। যেহেতু তারা শুধু কুরআন ও হাদীস মানে, আর কুরআন-হাদীসের কোথাও বিমানে নামায পড়ার কথা উল্লেখ নেই, তাই তারা এর কোনো সমাধান দিতে পারবে না। এমন দশটি প্রশ্ন আমি তাদের উদ্দেশ্যে করেছি। তারা আজ পর্যন্ত সেগুলোর একটিরও উত্তর দিতে পারেনি। ইনশা-আল্লাহ কিয়ামত পর্যন্ত পারবে না! কারণ তারা গোমরাহ!!

Loading