সিরাজগঞ্জ জেলার নামায, সাহরী-ইফতারের স্থায়ী সময়সূচি

অনুমান করে সময়সূচি নির্ধারণ সঠিক নয়

মারকাযুল ফিকরিল ইসলামি (ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার) বাংলাদেশ বসুন্ধরা, ঢাকা এর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত “কেন্দ্রীয় দারুল ইফতা বাংলাদেশ” এর সম্মানিত মুফতিয়ানে কিরাম বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যক্তি বা সংস্থা কর্তৃক প্রকাশিত নামায ও সাহরি-ইফতারের সময়সূচিগুলোর পরস্পর গড়মিল ও বিভ্রাট লক্ষ করে আসছেন। এ গড়মিলের কারণে সাধারণ মুসলমানদের মাঝে বিভ্রান্তি পরিলক্ষিত হচ্ছে। যার আশু সমাধান খুবই জরুরী। বিষয়টির গুরুত্বের প্রতি লক্ষ্য রেখে সম্মানিত মুফতিয়ানে কিরাম বাস্তবতার ভিত্তিতে সময়সূচি নির্ধারণের শরয়ী নীতিমালা ও ভৌগলিক বিষয়াবলীকে সামনে রেখে জেলা ভিত্তিক সময়সূচি প্রনয়ণ করেছেন।

উল্লেখ্য যে, এক জেলার সময়সূচি উল্লেখ করে তার উপর অনুমান করে অন্যান্য জেলা সমূহের সময়সূচি নির্ধারণ করা ভৌগলিক ফর্মূলার নিরিখে সঠিক নয়। তাই প্রত্যেক জেলার সময়সূচি ভিন্ন ভিন্ন ভাবে প্রনয়ণ করা জরুরী।

জরুরী মাসাইল

* সূর্যোদয় এবং তারপর ১০ মিনিট, দ্বিপ্রহর এবং তার আগে-পরে ৩ মিনিট করে ৬ মিনিট এবং সূর্যাস্ত ও তারপূর্বে ১০ মিনিট সর্বপ্রকার নামায পড়া নিষেধ। তবে ঐ দিনের আসরের ফরজ নামায প্রয়োজনে উক্ত সময়ে পড়ে নিবে।
* ফজরের ফরয নামাযের পর সূর্যোদয় পর্যন্ত এবং আসরের ফরয নামাযের পর সূর্যাস্ত পর্যন্ত সুন্নত ও নফল নামায পড়া নিষেধ। কাযা নামায ও সিজদায়ে তিলাওয়াত আদায় করা যায়।
* সূর্যোদয়ের সময় হতে কমপক্ষে ১০ মিনিট পর ইশরাকের সময় শুরু হয়।

জরুরী জ্ঞাতব্য

* এ ক্যালেন্ডারে সাহরীর জন্য প্রদত্ত সময়ের ভিতরেই সাহরী শেষ করা অপরিহার্য, তবে ফযরের আযান ৫ মিনিট পরে দিবে। তাই সুবিধার জন্য পৃথকভাবে ফযর শুরুর একটি সময় দেয়া হয়েছে।
* সতর্কতামূলক সূর্যাস্তের মূল সময়ের ৩ মিনিট পর মাগরিব ও ইফতারের সময় দেয়া হয়েছে। সুতরাং প্রদত্ত সময়েই আযান ও ইফতার করবে। বিলম্বের প্রয়োজন নেই।
* নামায রোজার সময়সূচি মূলত প্রত্যক্ষ দর্শনের উপর নির্ভরশীল। কিন্ত অপারগতার ক্ষেত্রে প্রণীত সঠিক সময়সূচির উপর আস্থা রেখে আমল করা যায়।
* সময়সূচিটি মারকাযুল ফিকরিল ইসলামী বাংলাদেশ, বসুন্ধরা, ঢাকা কর্তৃক শুধুমাত্র রহমানিয়া ইমদাদুল উলুম মাদরাসা সিরাজগঞ্জ এর পক্ষ থেকে সিরাজগঞ্জ জেলার জন্য সার্বিক প্রকাশনায় অনুমোদিত।

দিক নির্দেশনায়

শাইখুল আরব ওয়াল আজম ফকিহুল মিল্লাত মুফতি আব্দুর রহমান রহ. -মুফতিয়ে আযম বাংলাদেশ
প্রতিষ্ঠাতাঃ মারকাযুল ফিকরিল ইসলামি বাংলাদেশ, বসুন্ধরা, ঢাকা।

শরয়ী নীতিমালা ও ভৌগলিক সমন্ময়ে

আল্লামা মুফতি জামালুদ্দিন সুবহানী রহ.
সাবেক গবেষক ও মুফতিঃ মারকাযুল ফিকরিল ইসলামি বাংলাদেশ, বসুন্ধরা, ঢাকা।

শরয়ী নীতিমালা ও ভৌগলিক সমন্ময়ে

আল্লামা মুফতি ইনামুল হক কাসেমী দা. বা.
শিক্ষা পরিচালক ও প্রধান মুফতিঃ মারকাযুল ফিকরিল ইসলামি বাংলাদেশ, বসুন্ধরা, ঢাকা।

সময়সুচিটির গ্রহনযোগ্যতার ঐতিহ্য ও ঐতিহাসিক নেপথ্য ঘটনা

সূর্যের গতি মেপে উদয়-অস্তের জেলাভিত্তিক বরং প্রতি ডিগ্রিভিত্তিক সময় বের করার জন্য অভিজ্ঞ প্রশিক্ষকের দ্বারস্থ হওয়া জরুরি। বিশ্বের যেকোনো শহরের পাঁচ ওয়াক্ত নামায এবং সাহরী-ইফতারের স্থায়ী ক্যালেন্ডার তৈরির প্রশিক্ষণ চালু করেন হযরতওয়ালা ফকিহুল মিল্লাত রহ.।

এর জন্য তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংগ্রহ করেন দেশের সকল জেলার সূর্য উদয়-অস্তের তালিকা, যা বিশাল আকারের দুই ভলিয়মে সংরক্ষিত। ফিকহের ছাত্রদেরকে এ বিষয়ে পারদর্শী করে তুলতে অত্যন্ত যত্নের সাথে মেহনত করাতেন হযরতওয়ালার হাতে গড়া ছাত্র মাওলানা মুফতী জামালুদ্দীন সুবহানী রহ.। হযরতওয়ালা ফকিহুল মিল্লাত রহ. এর অত্যন্ত স্নেহভাজন ছাত্র ছিলেন তিনি। ইলম-আমলের সমন্বয় তাঁর জীবনে এমনভাবে ঘটেছিল দূর অতীতেও যার নজির মেলা ভার। অল্প বয়সেই তিনি গত ২২ শা’বান ১৪৩৫ হিজরি জুমার নামায চলাকালে বসুন্ধরাতেই ইন্তেকাল করেন। প্রিয় এই ছাত্রের ইন্তেকালে হযরতওয়ালা ফকিহুল মিল্লাত রহ. যারপরনাই ব্যথিত হয়েছিলেন। সাথে আরো যোগ হয়েছিল তাঁর জানাযা ও দাফন করতে না পারার যাতনা। ওয়ারিশদের পীড়াপীড়িতে লাশ গ্রামের বাড়ি সাতকানিয়াতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

জানাযা ছাড়া প্রিয় ছাত্রকে বিদায় দিতে যে ভীষণ কষ্ট হচ্ছিল তার লক্ষণ সেদিন হযরতওয়ালার ফকিহুল মিল্লাত রহ. বেদনামাখা চেহারায় স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছিল। হুইল চেয়ারে করে নিজেই অ্যাম্বুলেন্স পর্যন্ত এগিয়ে এলেন। তাঁর সামনেই গাড়িতে লাশ তোলা হচ্ছে। দরজা বন্ধ করে অ্যাম্বুলেন্স সামনে এগিয়ে যাচ্ছে আর তিনি অশ্রুসজল দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন। ব্যথাতুর হৃদয়ে তখন কী পরিমাণ রক্তক্ষরণ হচ্ছিল, তা কেউ টের না পেলেও হযরতের চাহনি দেখে সেদিন চোখের পানি সংবরণ করা যায়নি। হৃদয়ের চাপা ক্ষোভ প্রকাশ করে সেদিন তিনি বলেছিলেন, জামাল সাহেব যদি যেখানেই মৃত্যু হবে, সেখানেই দাফনের অসিয়ত করে যেতেন, যেমনটি আমি করে রেখেছি তবে আজ কারো কথাই শুনতাম না, এখানেই দাফন করতাম।

সময়সূচির প্রধান গবেষকের ইলমি মাকাম

মুফতী জামালুদ্দীন রহ. এর ইলমী মাকাম প্রকাশ করতে গিয়ে সেদিন হযরতওয়ালা ফকিহুল মিল্লাত রহ. বলেছিলেনঃ তিনি অনেক বড় আলেম ছিলেন। আমার চেয়েও বড় আলেম ছিলেন। মনে করেছিলাম আমার পরে তিনিই মারকাযের হাল ধরবেন। কিন্ত আল্লাহ তা’আলার ইচ্ছা, তিনি আমার আগেই চলে গেলেন। নামাযের সময়সূচি নির্ণয়ে জ্যোর্তিবিদ্যার মূলনীতি বিষয়ে গভীর জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন মুফতী জামালুদ্দীন রহ.। তাঁর গবেষণার সামনে বড় বড় বিজ্ঞানী আর আবহাওয়াবিদরাও নত হয়ে যেতেন।

সময়সূচির প্রধান গবেষকের সাথে সরকারের গবেষকদের বাহাস

একবার আবহাওয়া অফিসের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা যিনি বড় আবহাওয়াবিদও ছিলেন, নামাযের চিরস্থায়ী ক্যালেন্ডারে ভুল আছে বলে দাবি তোলেন। চতুর্দিকে এ নিয়ে হৈচৈ শুরু হলে ইসলামিক ফাউন্ডেশন এগিয়ে আসে এর সমাধান করতে । বিভিন্ন পক্ষেপ নিয়ে ফাউন্ডেশনে বৈঠক বসে। সেদিন হযরতওয়ালা ফকিহুল মিল্লাত রহ. এর প্রতিনিধি হিসেবে বৈঠকে যোগদান করেন মুফতী জামালুদ্দীন রহ. ও মুফতী এনামুল হক্ব কাসেমী দা. বা.। দেশের বাঘা বাঘা আবহাওয়াবিদ, বিজ্ঞানীরা সেদিন মুফতী জামালুদ্দীন রহ. এর যুক্তিনির্ভর বক্তব্য মাথা পেতে নিতে বাধ্য হন। অবশেষে তিনি চিরস্থায়ী ক্যালেন্ডার নির্ভুল প্রমাণ করে দেখান। (উল্লেখ্য যে, সিরাজগঞ্জ জেলার মজলিসে এহইয়ায়ে সুন্নাহ বাংলাদেশ কর্তৃক প্রকাশিত সময়সূচিটি হযরত ফকিহুল মিল্লাত রহ. দিকনির্দেশনা ও মুফতি জামালুদ্দিন রহ. এর গবেষনায় প্রস্ততকৃত)

ইন্তেকালের কয়েক বছর পূর্ব থেকে তিনি চাঁদের উদয়-অস্ত, আলো হ্রাস-বৃদ্ধি নিয়ে ব্যাপক গবেষণা চালান। চন্দ্র মাসের স্থায়ী ক্যালেন্ডার তৈরি করা নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিজ্ঞানীরা অনেক গবেষণা করেছেন। ওই গবেষণার ফলে চাঁদের মাসের সম্ভাব্য শুরু-শেষ তারিখ নির্ণয় করা যায়। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে থাকে। এ বিদ্যাতে ছাত্রদের পারদর্শী করে তুলতে বিষয়টি যোগ করা হয় পাঠ্যসূচিতে।

লেখকঃ মুফতি শরিফুল আযম দা. বা., মাসিক আল আবরার, মার্চ ২০১৬, পৃষ্ঠাঃ ৩৮

সূচিটির পিডিএফ ডাউনলোড করুন

মূল্য
খুচরা মুল্য প্রতিটি ৬০/=

প্রকাশনায়

মজলিসে এহইয়ায়ে সুন্নাহ্ বাংলাদেশ
কেন্দ্রীয় কার্যালয়ঃ রহমানিয়া ইমদাদুল উলুম মাদরাসা সিরাজগঞ্জ, সার্কিট হাউজের দক্ষিণে, চকশিয়ালকোল, সিরাজগঞ্জ।
সার্বিক যোগাযোগঃ ০১৪০০-৬৭৭২৩৩

Loading