আরবী তারিখঃ এখন ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরি মুতাবিক ২৬ এপ্রিল ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রোজ শুক্রবার, সময় সকাল ৬:০৫ মিনিট
এলানঃ-
১৪৪৫-১৪৪৬ হিজরী, ২০২৪-২০২৫ ইং এর মাসিক সুন্নতী ইজতেমা সমূহ
* ২৫ এপ্রিল ২৪ ইং বৃহস্পতিবার মাগরিব-ইশা মাদরাসার সকলের জন্য
* ৩০-৩১ মে ২৪ ইং বৃহস্পতিবার ফজর-শুক্রবার মাগরিব পর্যন্ত সালেকীনদের জন্য
* ২৭ জুন ২৪ ইং বৃহস্পতিবার মাগরিব-ইশা মাদরাসার সকলের জন্য
* ২৫-২৬ জুলাই ২৪ ইং বৃহস্পতিবার ফজর-শুক্রবার মাগরিব পর্যন্ত সালেকীনদের জন্য
* ২৯ আগষ্ট ২৪ ইং বৃহস্পতিবার মাগরিব-ইশা মাদরাসার সকলের জন্য
* ২৬-২৭ সেপ্টেম্বর ২৪ ইং বৃহস্পতিবার ফজর-শুক্রবার মাগরিব পর্যন্ত সালেকীনদের জন্য
* ২৪ অক্টোবর ২৪ ইং বৃহস্পতিবার মাগরিব-ইশা মাদরাসার সকলের জন্য
* ২৮-২৯ নভেম্বর ২৪ ইং বৃহস্পতিবার ফজর-শুক্রবার মাগরিব পর্যন্ত সালেকীনদের জন্য
* ২৬ ডিসেম্বর ২৪ ইং বৃহস্পতিবার মাগরিব-ইশা মাদরাসার সকলের জন্য
* ৩০-৩১ জানুয়ারী ২৫ ইং বৃহস্পতিবার ফজর-শুক্রবার মাগরিব পর্যন্ত সালেকীনদের জন্য
* ২৭ ফেব্রুয়ারী ২৫ ইং বৃহস্পতিবার মাগরিব-ইশা মাদরাসার সকলের জন্য
* মার্চ ২৫ ইং এজতেমা সালেকীনদের জন্য

২০ রাকাআত তারাবিহ সুন্নত হওয়ার উপর ইজমায়ে উম্মত এর দালাইল সমূহ

আমাদের সমাজের কিছু লোক বলে থাকেন, তারাবির নামাজ ৮ রাকাআত, ২০ রাকাআত নয়, অথচ গত ৩০ বছর আগেও এমনটি ঘটেনি, তাই সবচেয়ে বড় তাকাজা মনে হল ২০ রাকাত তারাবির উপর ইজমায়ে উম্মত এর প্রমাণ গুলো উম্মতের সামনে উপস্থাপন করা৷ ২০ রাকাত তারাবির ইজমায়ে উম্মত এর প্রমাণসমূহ শুনে নিন! জেনে নিন!! লিখে নিন!!!

১. হযরত মোল্লা আলী কারী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন : اجمع الصحابہ رضـ علی ان التراویح عشرون رکعۃ অর্থাত : সকল সাহাবা রাঃ ২০ রাকাআত তারাবির উপর সর্বসম্মতিক্রমে, সম্মিলিতভাবে সিদ্ধান্ত প্রকাশ করেছেন বা ইজমা করেছেন৷ দেখুন : আল মিরকাত 3 খন্ড 194 পৃষ্ঠা৷

২. মোল্লা আলী কারী রহঃ লেখেন : فصار اجماعا لماروی البیھقی باسناد صحیح : انھم کانوا یقیمون علی عھد عمر بعشرین رکعۃ و علی عہد عثمان وعلی رضی اللہ عنہما অর্থাত : ২০ রাকাআত তারাবির উপর ইজমা হয়ে গেছে, কেননা ইমাম বাইহাকী রহঃ সহিহ সনদের সাথে বর্ননা করেন যে, হযরাক সাহাবায়ে কেরাম রাঃ হযরত ওমর রাঃ এর যুগে ২০ রাকাআত তারাবি পড়তেন, তেমনি ভাবে হযরত ওসমান রাঃ এর যুগে ২০ তাকাআত তারাবি পড়তেন, তেমনি ভাবে হযরত আলী রাঃ এর এর যুগেও ২০ রাকাত তারাবি পড়তেন৷ দেখুন : শরহে নেকায়া, 1 খন্ড 342 নং পৃষ্ঠা, তারাবি নামাজের অধ্যায়৷

৩. আল্লামা সাইয়্যিদ মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ আজজুবাইদী আশশাহীর বিল মুর্তাজা রহঃ বলেন :  و بالاجماع الذی وقع فی زمن عمر اخذ ابوحنیفۃ والنووی والشافعی واحمد والجمھور واختارہ ابن عبدالبر অর্থাত :  এই ইজমার ব্যাপারে যেটা হযরত ওমর রাঃ এর খেলাফতের সময় হয়েছিল, হযরত ইমাম আবু হানিফা রহঃ, হযরত ইমাম নববী রহঃ, হযরত ইমাম শাফি রহঃ, হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহঃ এবং জমহুুর উলামায়ে কিরাম ২০ রাকাত তারাবিকেই গ্রহণযোগ্য মনে করেছেন এবং এই বিষয়টিকে আল্লামা ইবনে আব্দুল বার রহঃও পছন্দ করেছেন৷ দেখুুন : শরহে ইহইয়াউল উলুম, ইতহাফুস সাদাতিল মুত্তাকিন 2 খন্ড, পৃষ্ঠা নং 422

৪. হযরত ইমাম তিরমিজি রহঃ বলেন : و اکثر اہل العلم علی ماروی عن علی و عمر و غیرھما من اصحاب النبی صلی اللہ علیہ و سلم عشرین رکعۃ অর্থাত : অধিকাংশ আহলে ইলমদের সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হলো, তারাবির নামাজ ২০ রাকাত,  যেমনটি হযরত আলী রাঃ,  হযরত ওমর রাঃ এবং অন্যান্য অনেক সাহাবা রাঃ এর দ্বারা বর্ণিত, দেখুন : সুনানে তিরমিজি, খন্ড নং 1 পৃষ্ঠা নং 166

৫. প্রসিদ্ধ ফকিহ আল্লামা আবু বকর আল কাসানি রহঃ এই ইজমার আলোচনা এভাবে করেন যে : و الصحیح قول العامۃ لماروی ان عمر رضی اللہ عنہ جمع ابی بن کعب فیصلی بھم فی کل لیلۃ عشرین رکعۃ ولم ینکر علیہ احدفیکون اجماعامنھم علی ذلک অর্থাত : এবং সর্বসাধারণ উলামায়ে কিরামের কথাই সত্য, তারাবীর নামাজের ব্যাপারে এভাবে বর্ণিত হয়েছে যে, হযরত উমর রাঃ হযরত উবাই ইবনে কাব রাঃ এর নামাজে হজরাত সাহাবায়ে কিরম রাঃ গনকে রমাযানুল মুবারকের প্রতি রাত্রে একত্র করতেন এবং হযরত উবাই ইবনে কাব রাঃ সকলকে নিয়ে ২০ রাকাত তারাবির নামাজ পড়তেন, কিন্তু ২০ রাকাত তারাবি পড়তে কেউ অস্বীকার করেননি, এভাবে হজরাত সাহাবায়ে কেরাম রাঃ ২০ রাকাত তারাবির উপর ইজমা করে ফেলেন৷ দেখুন : বাদাইউস সানায়ে খন্ড নং 1 পৃষ্ঠা নং 644

৬. আল্লামা আবু জাকারিয়া ইয়াইহয়া নববী রহঃ বলেন : اعلم ان صلاۃ التراویح سنۃ باتفاق العلماء وھی عشرون رکعۃ অর্থাত : তারাবির নামাজ উলামায়ে কিরামগণের সর্বসম্মতিক্রমে সুন্নত এবং এটা 20 রাকাত৷ দেখুন : কিতাবুল আযকার পৃষ্ঠা 226

৭. আল্লামা ইবনে আব্দুল বার মালেকী রহঃ বলেন : و ھو قول جمھور العلماء وبہ قال الکوفیون والشافعی واکثر الفقھاء وھوالصحیح عن ابی بن کعب من غیر خلاف من الصحابۃ অর্থাত : জমহুর উলামায়ে কেরামের মতামত অনুযায়ী তারাবির নামাজ ২০ রাকাত এবং একই মতামত গ্রহণ করেছেন আহলে কুফা, হযরত ইমাম শাফী রহঃ এবং অধিকাংশ ফুক্বাহায়ে কেরাম, এবং একই বর্ণনা হযরত উবাই ইবনে কাব রাঃ থেকেও সহীহ সনদে বর্ণিত আছে যে, হযরাত সাহাবায়ে কেরামগন রাঃ কেউই ২০ রাকাত তারাবির বিরোধিতা করেননি৷ দেখুন : উমদাতুল কারী শরহে সহীহ বুখারী, খন্ড নং ৮ পৃষ্ঠা নং 246

৮. আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী রহঃ বলেন : و ھی عشرون رکعۃ ھو قول الجمھور و علیہ عمل الناس شرقا وغربا অর্থাত : ২০ রাকাত তারাবির জমহুর উলামাদের মতামত এবং ২০ রাকাত তারাবি পূর্ব-পশ্চিম তথা পুরা উম্মতের আমল৷ দেখুন : রদ্দুল মুহতার, খন্ড নং 2 পৃষ্ঠা নং 495

৯. ফকিহুন নফস, কুতুবুল ইরশাদ হযরত মাওলানা শাহ রশিদ আহমদ গাঙ্গুহী রহঃ বলেন : الحاصل ثبوت بست رکعت باجماع صحابہ رضی اللہ عنہ در آخر زمان عمر رضی اللہ عنہ ثابت شد پس سنت باشد و کسے کہ از سنت آہ انکار دارد خطا ست অর্থাত : মোট কথা এই যে, ২০ রাকাত তারাবির নামাজ নিয়ে হযরাত সাহাবায়ে কেরামগণ হযরত ওমর রাঃ এর জমানায় ইজমা হয়েছে এটা প্রমানিত, তাই এটাই সুন্নত৷ যদি কেউ এটাকে সুন্নত অস্বীকার করে তাহলে সে ভুলের মধ্যে আছে৷ দেখুন : আল হক্কুস সরিহ, পৃষ্ঠা নং 14

১০. রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন : তোমরা আমার সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরো এবং আমার সঠিক পথের অনুসারী খুলাফাদের সুন্নাহকেও আঁকড়ে ধরো। দেখুন : তিরমিযী শরীফ, খন্ড নংং 2 পৃষ্ঠা নং 108 যেহেতু হযরত উমর রাঃ এর জামানায় ইজমায়ে উম্মত এর মাধ্যমে ২০ রাকাত তারাবিহ প্রমাণিত, আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরাত সাহাবায়ে কেরামের রাঃ সুন্নাহ সমূহকেও আঁকড়ে ধরতে বলেছেন, তাই ২০ রাকাত তারাবিহর দলিল আরো কঠিন ভাবে প্রমানিত হল৷

বাংলাদেশসহ উপমহাদেশের আহলে হাদীস ভাইয়েরা কোন ধরনের দলিল প্রমাণ ছাড়াই ৮ রাকাআত তারাবির স্লোগান দিয়ে আসছেন, তারা যে সমস্ত প্রমান পেশ করে থাকেন, তা তাহাজ্জুদ নামাজের প্রমাণ হিসেবে গৃহীত, তারাবীর নামাজের প্রমাণ নয়৷ তাই তা পরিত্যাজ্য৷ আসলে উম্মতের আমাল নষ্ট করার জন্য এটি ইহুদী-নাসারাদের একটি গোপন চক্রান্ত, যা আহলে হাদীস ভাইদের মাধ্যমে ইহুদি নাসারারা বাস্তবায়ন করার অপকৌশল চালিয়ে যাচ্ছে৷ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে রমাযান মাসের হেফাজতের সাথে সাথে সঠিকভাবে তারাবিহর নামাজ পড়ে আ’মালের হেফাজত করার তৌফিক দান করুন, আমিন৷

Loading