আরবী তারিখঃ এখন ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরি মুতাবিক ২৫ এপ্রিল ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রোজ বৃহস্পতিবার, সময় ভোর ৫:২৪ মিনিট
এলানঃ-
১৪৪৫-১৪৪৬ হিজরী, ২০২৪-২০২৫ ইং এর মাসিক সুন্নতী ইজতেমা সমূহ
* ২৫ এপ্রিল ২৪ ইং বৃহস্পতিবার মাগরিব-ইশা মাদরাসার সকলের জন্য
* ৩০-৩১ মে ২৪ ইং বৃহস্পতিবার ফজর-শুক্রবার মাগরিব পর্যন্ত সালেকীনদের জন্য
* ২৭ জুন ২৪ ইং বৃহস্পতিবার মাগরিব-ইশা মাদরাসার সকলের জন্য
* ২৫-২৬ জুলাই ২৪ ইং বৃহস্পতিবার ফজর-শুক্রবার মাগরিব পর্যন্ত সালেকীনদের জন্য
* ২৯ আগষ্ট ২৪ ইং বৃহস্পতিবার মাগরিব-ইশা মাদরাসার সকলের জন্য
* ২৬-২৭ সেপ্টেম্বর ২৪ ইং বৃহস্পতিবার ফজর-শুক্রবার মাগরিব পর্যন্ত সালেকীনদের জন্য
* ২৪ অক্টোবর ২৪ ইং বৃহস্পতিবার মাগরিব-ইশা মাদরাসার সকলের জন্য
* ২৮-২৯ নভেম্বর ২৪ ইং বৃহস্পতিবার ফজর-শুক্রবার মাগরিব পর্যন্ত সালেকীনদের জন্য
* ২৬ ডিসেম্বর ২৪ ইং বৃহস্পতিবার মাগরিব-ইশা মাদরাসার সকলের জন্য
* ৩০-৩১ জানুয়ারী ২৫ ইং বৃহস্পতিবার ফজর-শুক্রবার মাগরিব পর্যন্ত সালেকীনদের জন্য
* ২৭ ফেব্রুয়ারী ২৫ ইং বৃহস্পতিবার মাগরিব-ইশা মাদরাসার সকলের জন্য
* মার্চ ২৫ ইং এজতেমা সালেকীনদের জন্য

সহি হাদিসের আলোকে তারাবীহ ২০ রাকাআত, সাহাবায়ে কিরামগনের সমাধান

তারাবীহের রাকআত সংখ্যার ব্যাপারে নতুন করে দ্বিমত পোষণ করার কোন অবকাশ নেই।

কারণ এ ব্যাপারে চৌদ্দশত বছর পূর্বেই সমস্ত সাহাবায়ে কেরামের ঐক্যমত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়ে গিয়েছে। যার কারণে আয়িম্মায়ে আরবাআ সহ মুজতাহিদীনের এ ব্যাপারে কারো কোনো দ্বিমত নেই। থাকতে পারে না।

আর সাহাবায়ে কেরাম যদি জানতেন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশ রাকআত তারাবীহর নামাজ পড়েন নি , তাহলে তারা কখনও ২০ রাকআতের উপরে ঐক্যমত পোষণ করতে পারতেন না।

২০ রাকআত তারাবীহের নামাযের ব্যাপারে সমস্ত সাহাবায়ে কেরামের ঐক্যমত পোষণ করার ব্যাপারে কিছু প্রমাণ নিম্নে উল্লেখ করা হলো :

* সুনানে আবু দাউদ খন্ড :১ পৃষ্ঠা: ২০২ হাদিস নম্বর: ১৪২৯ এ উল্লেখ রয়েছে :

ان عمر بن الخطاب رضي الله عنه جمع الناس على ابي بن كعب فكان يصلي لهم عشرين ركعة.

হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু সমস্ত মুসলমানদেরকে উবাই ইবনে কা’ব রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহুর পিছনে তারাবীর নামাজের ব্যাপারে একত্রিত করেছেন আর তিনি তাদেরকে বিশ রাকাত নামায পড়াতেন।

আবু দাউদ শরীফের এই হাদীসটি শুধু দেওবন্দী সংস্করণে উল্লেখ রয়েছে বলে লামাযহাবী কিছু শায়খরা যা বলেন, তা একটি মারাত্মক মিথ্যাচার।

হযরত ইমাম যাহাবী রাহিমাহুল্লাহ লিখিত সিয়ারু আ’লামিন নুবালা কিতাবটির তৃতীয় খন্ডে, ২৪২ পৃষ্ঠায় তিনি হুবহু এভাবেই হাদীস শরীফটি উল্লেখ করেছেন। ইমাম যাহাবীর জন্ম ৬৭৩ হিজরী ও ওয়াফাত ৭৪৮ হিজরীতে। ইমাম যাহাবী ওই ব্যক্তি যার কিতাব অধ্যায়ণ না করলে এইযুগে হাদীস এর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রায় অসম্ভব।

আবু দাউদ শরীফের দেওবন্দী সংস্করণের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ তার বর্ণনাটি প্রমাণ করে হযরত ইমাম যাহাবী রাহিমাহুল্লাহের সামনে আবু দাউদ শরীফের যে নুছখা অর্থাৎ সংস্করণটি বিদ্যমান ছিল , সেখানেও ২০ রাকআত তারাবীর কথাই উল্লেখ ছিল।

* মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক খন্ড ৪, পৃষ্ঠা : ২৬১ তে উল্লেখ রয়েছে: হযরত ওমর রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহু এর যামানায় সকল মুসলমানগন তেইশ রাকআত নামায পড়তেন।

* মুআত্তা ইমাম মালেকের ৪০ নম্বর পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে :

হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর যামানায় সকল সাহাবী ও তাবেয়ীগণ রমজানে ২৩ রাকাত (তারাবীহ ও বিতর) নামায পড়তেন।

* আল মুগনী ১/১৬৭ তে উল্লেখ রয়েছে :

انه ما فعله عمر و اجمع عليه الصحابة رضي الله عنهم في عصر هم احق واولي بالاتباع

বিশ রাকআতের আমলটি হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু করেছেন এবং ওই যুগে সমস্ত সাহাবায়ে কেরাম তার উপরে ঐক্যমত্য পোষণ করেছেন। কাজেই এটিই সঠিক ও অনুসরণ করার জন্য বেশী উপযুক্ত।

* এরশাদুস সারী ৩/৪২৬ তে উল্লেখ রয়েছে:

وقد عدوا ماوقع في زمن عمر رضى الله تعالى عنه كالاجماع

হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর যুগের অবস্থা ইজমা অর্থাৎ সর্বসম্মত ঐক্যমত্য পর্যায়ে গণ্য।

* মোল্লা আলী কারী রাহমাতুল্লাহ আলাইহি মিরকাত ৩/৪২৬ এ উল্লেখ করেন :

اجمع الصحابة على ان التراويح عشرون ركعة.

তারাবীহের নামায বিশ রাকআত, এর উপর সকল সাহাবায়ে কেরামের ইজমা অর্থাৎ ঐক্যমত্য সংঘটিত হয়েছে।

* শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহিমাহুল্লাহ উল্লেখ করেন:

فراي كثير من العلماء ان ذلك (عشرين ركعة) هو السنة لانه اقامه بين المهاجرين والانصار ولم ينكر


অসংখ্য আলেম এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে এটিই ( ২০ রাকাত তারাবীহ ) সুন্নত। কেননা ইবনে কা’ব রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু মুহাজির ও আনসার সাহাবীগণের মধ্যে বিশ রাকাত পড়িয়েছেন , আর কোনো একজনও তাতে আপত্তি করেননি।

(মাজমুআতুল ফাতাওয়া , ইবনে তাইমিয়া ২৩/১১২-১১৩)

সাহাবায়ে কেরামের ২০ রাকাতের উপর ঐক্যমত পোষণ করার পর থেকে মক্কা ও মদীনায় ধারাবাহিকভাবেই ২০ রাকাত তারাবীর নামাযের জামাআত চলে আসছে। ১২৪৬ হিজরীতে লা-মাযহাবীদের আবির্ভাব হওয়ার আগে এই ইজমার বিরুদ্ধে কখনো কেহই কোনো মন্তব্য করেননি। করা সম্ভবও নয়।

কারণ, ইজমা অমান্যকারীদের শাস্তির ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন :

ومن يشاقق الرسول من بعد ماتبين له الهدى ويتبع غير سبيل المؤمنين نوله ما تولى ونصله جهنم وساءت مصيرا.

আর কারো নিকট সৎপথ প্রকাশ হওয়ার পর সে যদি রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মুমিনদের পথ ছাড়া অন্য পথ অনুসরণ করে, তবে যেদিকে সে ফিরে যায় সে দিকেই তাকে আমরা ফিরিয়ে দেব এবং তাকে জাহান্নামে দগ্ধ করাব, আর তা কতই না মন্দ আবাস।
(সূরা নিসা , আয়াত : ১১৫)

সাহাবায়ে কেরামের ইজমার চেয়ে বেশী গুরুত্ববহ ও শক্তিশালী উম্মতের আর কোন ইজমা হতে পারে ?

সুনানে তিরমিযীর একটি প্রসিদ্ধ হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন: এই উম্মতের মধ্যে ৭৩টি দল হবে। যার মধ্যে ৭২টি দলই জাহান্নামী হবে। শুধুমাত্র একটি দল হবে নাজাত প্রাপ্ত। তাঁরা কারা? সাহাবায়ে কেরামের এমন প্রশ্নের উত্তরে আল্লাহর রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাঁরা ওই সমস্ত ব্যক্তি যারা আমার ও আমার সাহাবায়ে কেরামের সুন্নতের উপরে চলবে।
(মিশকাত ১/৩০ হাদীস নম্বর: ১৭১)

সাহাবায়ে কেরাম সকলেই কত রাকাত তারাবীহ পড়েছেন? অবশ্যই বিশ রাকাত। সাহাবায়ে কেরাম কি আল্লাহর রাসূলের আমল না দেখেই সকলেই ২০ রাকআতের উপর একমত হয়েছিলেন ? কখনো না। হতেই পারে না।
কাজেই যারা সাহাবায়ে কেরামের আদর্শ থেকে ফিরে যাবে, তারা কোন পথের অনুসারী এটা সহজেই অনুমান করা যায়।

হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন, “তুমি যে রাস্তায় চলবে , শয়তান সে রাস্তায় চলতে পারবে না।”

বুখারী ও মুসলিম শরীফে বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে।
যদি ধরা হয় ২০ রাকাত তারাবীহের নামায হযরত ওমরের সুন্নত, তা হলেও তা ত্যাগ করা শয়তানের প্ররোচনা ছাড়া আর কিছুই হতে পারে না। শয়তান নিজেও হযরত ওমরের রাস্তায় চলে না, চলতে পারে না, অন্যদেরকেও চলতে দেয় না।

একটি প্রসিদ্ধ হাদীসে আছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন : আমার ইন্তেকালের পরে তোমরা যারা জীবিত থাকবে উম্মতের মধ্যে অনেক মত পার্থক্য দেখতে পাবে, তখন তোমরা আমার আদর্শ আর খোলাফায়ে রাশেদীনের আদর্শকে আঁকড়ে ধরবে। তাহলে কখনো পথভ্রষ্ট হবে না।

(মুসনাদে আহমদ , সুনানে আবু দাউদ , সুনানে তিরমিযী , সুনানে ইবনে মাজাহ )

মিশকাত ১/২৯-৩০, হাদিস নম্বর: ১৬৯

কেহ প্রশ্ন করতে পারেন আচ্ছা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কত রাকাত তারাবীহ পড়েছেন?
তো এর উত্তর স্পষ্ট। তিনি ২০ রাকআত তারাবীহই পড়েছেন। আর না হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণ সকলেই এর উপর একমত হতেন না। সাহাবায়ে কেরামের ইজমার পর এ ব্যাপারে অন্য কিছু তালাশ করার কোনো প্রয়োজনই নেই।
তবুও এ প্রসঙ্গে রাসূলের ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) একটি মারফূ হাদীস উল্লেখ করছি।

عن ابن عباس رضي الله تعالى عنهما ان رسول الله صلى الله عليه وسلم كان يصلي في رمضان عشرين ركعة و الوتر

হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজান মাসে ২০ রাকআত তারাবীহ ও বিতির পড়তেন। ( মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ৫/ ২২৫ হাদীস নম্বর : ৭৭৭৪ )

উলূমে হাদীস সম্পর্কে অজ্ঞ লোকেরাই এ হাদীসকে দুর্বল বলতে পারে।
উসূলে হাদীসের কিতাবে স্পষ্ট লেখা আছে কোনো হাদীসের সনদের মধ্যে দুর্বলতা থাকলেও উম্মত যদি আমলের জন্য সেই হাদীসটিকে গ্রহণ করে নেয়, তাহলে তা মুতাওয়াতির পর্যায়ের বিশুদ্ধ হাদীসের স্থলাভিষিক্ত হয়ে যায়। (আননুকাত আলা কিতাবি ইবনিস সালাহ লি ইবনি হাজার, ফাতহুল মুগীছ, তাদরীবুর রাবী, সবগুলো কিতাবেই তা স্পষ্ট লেখা আছে )

উল্লেখ্য যে, দালায়েল একত্রিত করা আমার উদ্দেশ্য নয়, আর না হলে অনেকগুলো দলীল এখানে উল্লেখ করা যেতো।

সারকথা হলো :

২০ রাকআত তারাবীহ উম্মতের মাঝে তাওয়াতুর এর সাথে আমল হয়ে আসছে।

তাওয়াতুর চার প্রকার :

১) তাওয়াতুরে ইসনাদ, যেমন খতমে নবুয়তের হাদীস। একশত পঞ্চাশ জন সাহাবী থেকে বর্ণিত রয়েছে।
২) তাওয়াতুরে তবকাহ, যেমন এই কোরআন যেটা আমরা পড়ি সেটাই আল্লাহর নাযিলকৃত কিতাব। এ বিষয়টি তাওয়াতুরে তবকাফ দ্বারা প্রমাণিত।
৩) তাওয়াতুরে তাআমুল এটাকে তাওয়ারুছও বলে। যেমন ২০ রাকাত তারাবীর নামায।
৪) তাওয়াতুরে কদরে মুশতারাক। যেমন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই ওয়া সাল্লাম এর কোরআন ছাড়াও আরো মু’জিযা প্রাপ্তির বিষয়।

অতএব মুতাওয়াতির এ আমলটির বিরোধিতা করা কখনোই উচিত নয় ।

আট রাকআত পড়ে পালিয়ে যাওয়া:

মজমূউ ফাতাওয়া লি ইবনি বায ১১/৩২৫ এ উল্লেখ রয়েছে :

বিন বায রাহিমাহুল্লাহকে একজন জিজ্ঞাসা করেছেন, কোনো ইমাম যদি বিশ রাকাত তারাবীহ ও তিন রাকাত বিতর পড়ান। তার পিছনে কোনো মুসল্লী আট রাকাত পড়ে চলে যায়, এ কাজটা কি সুন্নাহ মোতাবেক সহীহ হবে ?

তিনি উত্তর দিয়েছেন, না ‌। সহীহ হবে না । ইমামের সঙ্গে ইমামের নামাজের শেষ পর্যন্ত থাকাই সহীহ সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত । কাজেই কেউ যদি আট রাকাতের প্রবক্তাও হয়, সে বিশ রাকআতের ইমামের পিছনে দাঁড়ালে, বিশ রাকআত পড়েই যেতে হবে ।
এ প্রসঙ্গে তিনি দলীল হিসেবে একটি হাদীসও উল্লেখ করেছেন ।

আট রাকআতের দলীল :

আট রাকাআত তারাবীর কোনই সহীহ দলিল নেই ‌। হযরত জাবের রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত মুসনাদে আবী ইয়ালার ১৮০২ নম্বর হাদীস দিয়ে যে দলীল দেওয়া হয়, তা অনেক কারণে দুর্বল :

১) এই বর্ণনায় ঈসা ইবনে জারিয়া নামে একজন রাবী রয়েছেন, যিনি অত্যন্ত দুর্বল ।
দেখুন :

الكامل في ضعفاء الرجال ، تهذيب التهذيب ، كتاب الضعفاء الصغير للبخاري ، كتاب الضعفاء والمتروكين لابن الجوزي, ديوان الضعفاء والمتروكين للذهبي

২) ইয়াকুবে কুমমী । তিনিও দুর্বল । দেখুন মীযানুল ই’তিদাল ৭/৩৭৮

* সহীহ ইবনে হিব্বান এর ২৫৪৯ নম্বর হাদীস দ্বারা যে দলীল দেওয়া হয়, সেটাও অত্যন্ত দুর্বল ।

যথারীতি দুজন দুর্বল রাবী, ঈসা ইবনে জারিয়া ও ইয়াকুব কুমমী এ সনদেও বিদ্যমান রয়েছেন ‌। আবার বর্ণনাটিতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ নামাযটি পড়েছেন , তা উল্লেখ নেই ‌‌। হযরত উবাই বিন কা’ব রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর কথা উল্লেখ রয়েছে , যিনি নিজেই২০ রাকাত তারাবীর ইমামতি করতেন । আবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই ওয়া সাল্লাম ঘটনা শোনার পর, এ ব্যাপারে সমর্থন বুঝায় এমন কিছুই বলেননি । রমজান শব্দটিও এখানে উল্লেখ নেই । যে সনদে রমজান শব্দ উল্লেখ রয়েছে , সেটা মুদরাজ ।

মুয়াত্তা ইমাম মালেক এর ১১ রাকাত এর হাদীস দিয়ে যেটা দলিল দেওয়া হয় এটা একটি ভুল রেওয়ায়েত । একজন রাবী ভুলক্রমে বিশ্ এর স্থলে ১১ বলে ফেলেছেন । দেখুন যুরকানী শরহুল মুয়াত্তা । সেখানে হাফেজ ইবনে আব্দুল বার রাহিমাহুল্লাহ এর উদ্ধৃতিসহ উল্লেখ রয়েছে…
অবশ্য ইমাম বায়হাকী রাহিমাহুল্লাহ তার আসসুনানুল কুবরা গ্রন্থে এ বর্ণনা সম্পর্কে বলেন যে, হতে পারে প্রাথমিকভাবে অভ্যস্ত করার জন্য ১১ রাকাতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, তবে পরবর্তীতে ২০ রাকআতের উপরেই স্থির হয়েছে…

এতগুলো দুর্বলতা রয়েছে আট রাকাত তারাবীর দলীলে । সহীহ হাদীসের প্রবক্তারা এমন একটি ডবল/ট্রিপল দুর্বল দলীলের উপরে নির্ভর করে কীভাবে আট রাকাত তারাবীহ পড়েন?

আসলে রমজান মাসে অতিরিক্ত বেশী নফল পড়ার গুরুত্ব থাকলেও, শয়তান কিছু ভাইদেরকে প্ররোচনা দিয়ে নামায থেকে দূরে রাখার জন্য এ ধরনের কাজের পেছনে লাগিয়ে দেয়।

একটি ধোকা :

আট রাকাত তারাবীর স্বপক্ষে কোন সহীহ হাদীস না পেয়ে, অগত্যা তারা বুখারী শরীফে বর্ণিত তাহাজ্জুদ সংক্রান্ত একটি হাদীস দিয়ে মানুষকে ধোকা দেওয়ার চেষ্টা করে।

একজন লোকের ধারণা ছিলো, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই ওয়া সাল্লাম রমজান মাসে হয়তো অতিরিক্ত তাহাজ্জুদ পড়েন। তিনি এ সম্পর্কে হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহাকে প্রশ্ন করলে হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা বললেন , রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজান ও রমজানের বাইরে অন্যান্য মাসে এগারো রাকাতের বেশী পড়তেন না । চার রাকাত পড়তেন প্রশ্নাতীত সুদীর্ঘ ও সুন্দর । তারপর আবার চার রাকাত প্রশ্নাতীত সুন্দর ও সুদীর্ঘ আদায় করতেন ।
অতঃপর তিন রাকাত বিতর পড়তেন ।

(সহীহুল বুখারী ১/১৫৪ হা: ১১৩৬)

এই হাদীসটিকে আমাদের কিছু ভাইয়েরা আট রাকাত তারাবীর দলীল হিসেবে পেশ করার চেষ্টা করেন। যা মূর্খতা ও অজ্ঞতার শামিল।

বিষয়টি আপনারাই চিন্তা করে দেখুন তো !

১) মা আয়েশা রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহা ইন্তেকাল করেছেন আটান্ন হিজরীতে। আর হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু সমস্ত সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে মসজিদে নববীতে, রসূলের জায়নামাজে, হযরত আয়েশা সিদ্দিকার হুজরা শরীফের পাশেই ২০ রাকাত তারাবীর জামাআত শুরু করেছেন চৌদ্দ হিজরীতে।
বিশ রাকাত তারাবীর জামাআত হযরত আয়েশা সিদ্দিকার হুজরা শরীফের পাশে, রাসুলের জায়নামাজে, মসজিদে নববীতে শুরু হওয়ার পরও আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা ৪৪ বছর জীবিত ছিলেন । এই হাদিসটি দ্বারা যদি আট রাকাত তারাবীহ প্রমাণ হতো, তাহলে মা আয়েশা সিদ্দীকা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা সাহাবায়ে কেরামকে অবশ্যই বলতেন, যে ওগো নবী সাহাবীরা! আপনারা ২০ রাকাত তারাবীহ কেন পড়েন? অথচ আমার কাছে আট রাকআত তারাবীর একটি সহীহ হাদীস রয়েছে !

আর হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহার এ হাদীসটি সম্পর্কে সাহাবায়ে কেরাম কি অবগত ছিলেন না ? অবশ্যই ছিলেন। তবে এহাদীসটি তাহাজ্জুদ সংক্রান্ত। তারাবীহ সম্পর্কে নয়। তাই তাঁরা ২০ রাকাতের উপরেই ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলেন।

কিন্তু ধারাবাহিকভাবে মানুষকে আমল থেকে দূরে সরানোর চক্রান্তকারী লা-মাযহাবী শায়খরা এতটাই কপাল পোড়া যে তারা সেই হাদীসটি দিয়েই এখন সরল মানুষদেরকে ধোকা দিয়ে যাচ্ছে ।

২) এই হাদিসে রমজান ও রমজান ছাড়া বাকি এগারো মাসেও এই এগারো রাকাত পড়ার কথা উল্লেখ রয়েছে….

অতএব এখানে ওই নামাযই উদ্দেশ্য হবে যেটি বারো মাস পড়া হয় । বারো মাস ‌। তারাবীর নামায তো শুধু রমজানেই পড়া হয়ে থাকে । তাই এই হাদীসে তারাবীর নামায উদ্দেশ্য হতে পারে না।

৩) এখানে চার রাকাত করে নামাজ পড়ার কথা উল্লেখ আছে । অথচ তারাবীর নামায দুই রাকাত করে পড়া হয়।

৪) হাদীসটিতে উল্লেখ রয়েছে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই নামাযটি রাত্রের শেষাংশে, ঘুম থেকে উঠে আদায় করেছেন। অথচ তারাবীহ রাতের প্রথম অংশে আদায় করা হয়ে থাকে ।

অতএব, এ হাদীস দিয়ে তারাবীর রাকাত সংখ্যার ব্যাপারে দলীল দেওয়ার চেষ্টা করা , ধোকাবাজি ছাড়া আর কিছু না।

আরো একটি ধোকা :

তারা যখন উপরোক্ত হাদীসটিকে তাহাজ্জুদ সংক্রান্ত মেনে নেওয়া ছাড়া কোনো গত্যন্তর দেখে না, তখন তারা অন্য একটি ধোকার আশ্রয় নেয় । বলে যে, তাহাজ্জুদ ও তারাবীহ একই নামায ।

এটা যে মারাত্মক ধোকা, তা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট…. কারণ তাহাজ্জুদ ও তারাবীহ যে পৃথক পৃথক নামায , তা বলার অপেক্ষা রাখে না ।

ইমাম বুখারী , ইমাম মুসলিম , ইমাম নাসায়ী, ইমাম আবু দাউদ, ইমাম তিরমিযী, ইমাম ইবনে মাজাহ, ইমাম মালেক , ইমাম মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহি আলাইহিম, তাঁরা সকলেই নিজ নিজ কিতাবে তাহাজ্জুদ ও তারাবীর পৃথক পৃথক বাব ( অধ্যায় ) কায়েম করেছেন ‌। এমনকি মিশকাত শরীফের মধ্যেও তাহাজ্জুদ ও তারাবীহ এর পৃথক পৃথক অধ্যায় রয়েছে ‌।

তারাবীহ এর নামাযকে কিয়ামে রমাজান বলে । আর তাহাজ্জুদের নামাযকে কিয়ামুল লাইল বা সালাতুল লাইল বলা হয় ।

তাহাজ্জুদের নামায কোরআন দ্বারা প্রমাণিত এবং তা ইসলামের শুরু থেকেই ছিল । আর তারাবীহের নামায হাদীস দ্বারা প্রমাণিত । দ্বিতীয় হিজরীতে রোযা ফরজ হওয়ার পর তারাবীহের নামাযের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে । তারাবীহের নামাজ জামাআতে পড়া হয় , আর তাহাজ্জুদের জামাআত নেই । এ দুটি নামাযের সময়ও ভিন্ন ।

এরকম অনেকগুলো পার্থক্য রয়েছে তাহাজ্জুদ ও তারাবীহের মাঝে ।
অতএব , তাহাজ্জুদ ও তারাবীহকে একই নামাজ বলা, মারাত্মক মূর্খতা ছাড়া কিছুই নয় ।

বুখারী শরীফের একটি হাদীসে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তারাবীর নামাযের প্রতি ভিন্নভাবে উৎসাহিত করেছেন । যার দ্বারা বুঝা যায় তারাবীহ সারাবছরের তাহাজ্জুদ নামায থেকে পৃথক একটি নামায ।

হাদীসটি নিম্নে উল্লেখ করা হলো :

حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ، قَالَ حَدَّثَنِي مَالِكٌ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ حُمَيْدِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ “‏ مَنْ قَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ ‏”‏‏

আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত: তিনি বলেন যে, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেনঃ যে ব্যক্তি রমজানের রাতে ঈমানের সাথে পূণ্যের আশায় রাত জেগে ইবাদত করে ( তারাবীহের নামায আদায় করে ), তার পূর্বের সব গুনাহ্‌ ক্ষমা করে দেয়া হয় ।

(সহীহুল বুখারী, হাদীস নম্বর: ৩৭)

ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তারাবীহ ও তাহাজ্জুদকে পৃথক পৃথক ভাবে আদায় করতেন ।

(আর হাদয়ুস সারী মুকাদ্দিমাতু ফতহিল বারী )

যারা তারাবীহ ও তাহাজ্জুদকে একই নামায বলে, মূলতঃ তারা তারাবীর নামাযকেই অস্বীকার করে।



একটি জালিয়াতি :

লা-মাযহাবী বন্ধুরা তাদের জালিয়াতির মারাত্মক প্রমাণ দিয়েছেন, তাদের প্রকাশনী তাওহীদ পাবলিকেশন্স থেকে ছাপা বঙ্গানুবাদ সহীহুল বুখারীর দ্বিতীয় খন্ড, ৩৪৩ নম্বর পৃষ্ঠায়।

সেখানে বিশ রাকাত তারাবীর সহীহ হাদীসকে জাল প্রমাণ করতে গিয়ে ইয়াহইয়া বিন সাঈদ, ইয়াযীদ ইবনে খুসাইফা, খালিদ বিন মাখলাদ এর মত বোখারী শরীফের রাবীদেরকেও মিথ্যুক ও অগ্রহণযোগ্য বলে আখ্যা দিয়েছেন ।
উদ্দেশ্য হলো: তারা যদি মিথ্যাবাদী হন , তাহলে তাদের বর্ণিত বিশ রাকাত তারাবীর সহীহ হাদীসকে দুর্বল বা জাল বলা যাবে…

দেখুন, কত বড় ধৃষ্টতা ! কত মারাত্মক মূর্খতা !

তাওহীদ পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত বঙ্গানুবাদ বোখারী শরীফের প্রথম প্রকাশ থেকে ষষ্ঠ প্রকাশ পর্যন্ত এরকম জালিয়াতিই তারা করে গেছেন। এখন আমাদের সমালোচনার পর হয়তোবা এ পৃষ্ঠাগুলো উধাও করে দিতে পারেন।

বুদ্ধিমানের তারাবীহ :

একলোক ঢাকা যাবে ৷ কিন্তু সে ঢাকার গাড়ির টিকেটের মূল্য জানেনা । একলোককে জিঞ্জাসা করলো ৷ সে বললো: ঢাকার টিকেট ২০০ টাকা ৷ আরেকজনকে জিঞ্জাসা করলো ৷ সে বললো: ৫০০ টাকা ৷

বন্ধুরা বলুন তো! সে বাড়ী থেকে টিকেট ক্রয়ের জন্য কত টাকা নিয়ে বের হওয়া বুদ্ধিমত্মার পরিচয় হবে?
নিশ্চয় বলবেন- ৫০০ টাকা ৷ তাইনা?
কারণ ৫০০ টাকা সঙ্গে নিলে টিকেট যদি ৫০০ টাকা হয় তাহলে তো কোন কথাই নেই । আর যদি টিকেটের দাম ২০০ টাকাও হয় ,তবুও সমস্যা নেই ৷ অতিরিক্ত ৩০০ টাকা পাথেয় হিসেবে নিজের পকেটেই থাকবে ৷ সফরে গুরুত্বপূর্ণ কাজে লাগানো যাবে ৷

পক্ষান্তরে সে যদি সঙ্গে মাত্র ২০০ টাকা নিয়ে যায় ৷ গিয়ে দেখলো – টিকেটের মূল্য ৫০০ টাকা ৷ তাহলে ? ইজ্জতো যাবেই ৷ টিকিট কাউন্টারে গিয়ে ধমক খেতে হবে। টিকেটও মিলবেনা ৷ মধ্যখানে তার বাড়ী হতে বাসষ্ট্যান্ড পর্যন্ত আসা যাওয়ার রিক্সা ভাড়াটাও লস ৷ ঠিক না ?

এখন বুঝি : তারাবীহ ২০ রাকাত ৷ ৮ রাকাত নয় ৷ ছিল না কোন কালেও ৷ ৮ রাকআতের বিদআতটি লামাযহাবীরাই শুরু করেছে ৷ বিশুদ্ধ হাদীস থেকে এ আলোচনা আমি অনেকবার করেছি ৷

কিছুক্ষণের জন্য যদি ধরে নেয়া হয় ৷ উভয়পক্ষেই দলীল আছে ৷ আমরা কোনটা করবো?

তাহলে আসুন! তারাবীহ ৮ না ২০ রাকাত, এ ব্যাপারে সন্দেহ….?

বুদ্ধিমানের পরিচয় হবে ২০ রাকাতকে গ্রহণ করা । কারণ আপনি ২০ রাকাত তারাবীহ নিয়ে আখেরাতে গেলেন ৷ আল্লাহর দরবারে গিয়ে জানতে পারলেন : তারাবীহ আসলেই ২০ রাকাত ৷ তাহলে তো কোন কথাই নেই ।

আর যদি গিয়ে দেখলেন তারাবীহ ৮ রাকাত । তবুও ক্ষতি নেই ৷ অতিরিক্ত ১২ রাকাত আপনার আমলনামাতেই থাকবে । এগুলোর দ্বারা আখেরাতে মর্যাদা বাড়বে ৷ উচ্চ মাকাম নসীব হবে ৷ কারণ রমজানে যত বেশী ইবাদত তত বেশী লাভ ৷ যে ব্যক্তির আমলনামায় নফল ইবাদত যত বেশী হবে, আখেরাতে তার তত বেশী তরক্কী আর পদোন্নতি হবে ।

পক্ষান্তরে আপনি আখেরাতে যদি ৮ রাকাত তারাবীহ নিয়ে গেলেন । আল্লাহর দরবারে গিয়ে দেখলেন- তারাবীহ ৮ রাকাত নয় বরং ২০ রাকআত । তখন? কোথায় যাবে ইজ্জত?কোথায় মিলবে আর ১২ রাকাত নামায? যে শায়েখরা আপনাকে ১২ রাকাত নামায ছেড়ে দেওয়ার গুনাহে লিপ্ত করেছে তাদের মধ্যে কাউকে কি খুঁজে পাওয়া যাবে ???

আখেরাতের হিসাবের পূর্বে দুনিয়ার হায়াত থাকতেই গোঁড়ামো ত্যাগ করে একটুও কি চিন্তা-ভাবনা করা উচিৎ না যে , কোন পথটি আমি গ্রহণ করবো ?

তাই বলছিলাম বুদ্ধিমানরা তারাবীহ পড়বে ২০ রাকআত…

রমজান মাসে অন্ততঃ নফল ইবাদত কম করার মত বোকামিটা তারা করবে না…..

আট রাকাত তারাবীহ বিদআত :

ইমাম তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি জামে’ তিরমিযীতে যা উল্লেখ করেছেন তার দ্বারা আট রাকাত তারাবীহ স্পষ্ট বিদ’আত প্রমাণ হয় ।

ইমাম তিরমিযী রাহিমাহুল্লাহ ইন্তেকাল করেন ২৭৯ হিজরী সনে । তিনি তাঁর কিতাব জামে’ তিরমিযীতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সময় থেকে নিয়ে ইমাম তিরমিযীর ইন্তেকাল এর পূর্ব পর্যন্ত অর্থাৎ হিজরী তৃতীয় শতাব্দীর প্রায় শেষ প্রান্ত পর্যন্ত তারাবীহ নামাযের রাকাত সংখ্যার ব্যাপারে উম্মতের কী আমল ছিল, তা বর্ণনা করেছেন ।

সেখানে তিনি দুইটি অভিমত উল্লেখ করেছেন :

এক. মদীনাতে আমল হতো ৪১ রাকাত, বিতির সহ । ( এরমধ্যে মূল ২০ রাকাত । এরসঙ্গে মাঝখানের কিছু নফল যুক্ত হয়ে বিতির সহ সর্বমোট ৪১ রাকাত । তার প্রেক্ষাপট রয়েছে সেটা যারা হাদীস পড়েন তাদের সবারই জানা। মক্কাবাসীরা চার রাকাত পরপর তওয়াফ করতেন এর বিপরীতে মদীনাবাসীরা মাঝখানে চার রাকাত করে নফল পড়তেন। ওদিকে এশার পরের দুই রাকাত সুন্নত এবং সবশেষে তিন রাকাত বিতির সহ সর্বমোট ৪১ রাকাত । )

দুই. অধিকাংশ উলামায়ে উম্মতের অভিমত হচ্ছে তারাবীহর নামায ২০ রাকাত ।

সেখানে তিনি ২০ রাকাতের নীচে কোনো বর্ণনাই উল্লেখই করেননি ।

( জামে’ তিরমিযী ১/১৬৬)

এর দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে ২০ রাকাতের নিচে তারাবীর নামাযের কোনো আমলই উম্মতের মধ্যে হিজরী তৃতীয় শতাব্দী পর্যন্তও বিদ্যমান ছিল না ।

অতএব, আট রাকআত তারাবীহ এর আমলটি বিদ’আত । যা পরবর্তীতে সৃষ্টি হয়েছে । আমলটি সৃষ্টি হওয়ার পর তার দলীল খুঁজে তাতবীক দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে ।

শায়খ আব্দুল্লাহ আল-মানী হাফিজাহুল্লাহু তাআলা অবশ্য বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন যে , সৌদিতেও শেখ বিন বাযের একটি ভুল ফতোয়ার পর থেকে কিছু কিছু স্থানে আট রাকআত তারাবীহ শুরু হয়েছে ।

শায়েখের বয়ানটি নেটে পাওয়া যাবে ।

উল্লখ্য যে সিহাহে ছিত্তাহ এর মধ্য হতে মাত্র দু’টি কিতাবে তারাবীর রাকাত সম্পর্কে স্পষ্ট আলোচনা করা হয়েছে …

১) সুনানে আবু দাউদ ১/২০২
২) জামে’ তিরমিযী ১/১৬৬

আর এ দু’টি কিতাবেই ২০ রাকাতেরই উল্লেখ রয়েছে ।

আর ইমাম বুখারী রাহিমাহুল্লাহ এর সহীহ বুখারীতে তারাবীর রাকাত সম্পর্কে স্পষ্ট করে কোন কিছু উল্লেখ না থাকলেও, তার রচিত কিতাব আততারীখুল কাবীর ৯ম খন্ডের ২৮ নম্বর পৃষ্ঠায় ২০ রাকাত তারাবীর কথা স্পষ্টভাবেই উল্লেখ রয়েছে । তাতে বোঝা যায় ইমাম বুখারী রাহিমাহুল্লাহও ২০ রাকাত তারাবীহ পড়তেন ।
হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি ইমাম বুখারীর জীবনীতে লিখেছেন যে , ইমাম বুখারী রাহিমাহুল্লাহ তারাবীহ ও তাহাজ্জুদকে পৃথক পৃথক ভাবে আদায় করতেন ।

তারাবীহ শব্দটিও বুঝায় যে তা আট রাকাত হতে পারে না । কারণ তারবীহা বলা হয় চার রাকাতকে । তারাবীহ শব্দটি তার বহুবচন । আরবীতে বচন তিনটি , একবচন, দ্বিবচন , বহুবচন ।
অতএব তারাবীহ শব্দ থেকে বোঝা যায় যে এ নামাযটি আট রাকাত নয়, হতে পারে না । হাদীসের পূর্ববর্তী কিতাবগুলোতে এ নামাযটিকে পাঁচ তারবীহা অর্থাৎ ২০ রাকআত স্পষ্ট করেও উল্লেখ করা হয়েছে ।


তারাবীহের নামাযে খতমে কুরআন :

লা-মাযহাবী কিছু শায়খরা রমজান মাসে তারাবীহতে এমনকি খতমে কোরআনকেই বিদ’আত ও নাজায়েজ বলে ফতোয়া দিয়েছেন ।

এ কথাটি তাদের অজ্ঞতা ও মূর্খতাকে আরো বলিষ্ঠভাবে প্রমাণ করে দিয়েছে ।

এর উত্তরে কিতাবুল আযকার সহ অনেক কিতাবের বর্ণনা থাকলেও, আমি এখানে শুধু তাদেরই অত্যন্ত মান্যবর বিন বায রাহিমাহুল্লাহর কিতাব মাজমূউ ফাতাওয়া লি ইবনে বায থেকে একটি উদ্ধৃতি উল্লেখ করছি :

তিনি তার এই কিতাবটির এগারো নম্বর খন্ডে, ৩৩১ নম্বর পৃষ্ঠায় রমজানের খতমে কোরআনকে মুস্তাহাব বলেছেন আর এর প্রমাণ হিসেবে বুখারী শরীফের ছয় নম্বর হাদীসটিকে উল্লেখ করেছেন, যেখানে হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম এর সঙ্গে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কোরআন দাওর করার বর্ণনা এসেছে ।

তাই রমাজানে খতমে কোরআনকে বিদআত আখ্যা দেওয়াকে অজ্ঞতা আর মূর্খতা ছাড়া কী বলা যাবে?

——————-+++——————-

Loading