আরবী তারিখঃ এখন ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরি মুতাবিক ২৯ এপ্রিল ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রোজ সোমবার, সময় সকাল ১১:০৬ মিনিট
এলানঃ-
১৪৪৫-১৪৪৬ হিজরী, ২০২৪-২০২৫ ইং এর মাসিক সুন্নতী ইজতেমা সমূহ
* ৩০-৩১ মে ২৪ ইং বৃহস্পতিবার ফজর-শুক্রবার মাগরিব পর্যন্ত সালেকীনদের জন্য
* ২৭ জুন ২৪ ইং বৃহস্পতিবার মাগরিব-ইশা মাদরাসার সকলের জন্য
* ২৫-২৬ জুলাই ২৪ ইং বৃহস্পতিবার ফজর-শুক্রবার মাগরিব পর্যন্ত সালেকীনদের জন্য
* ২৯ আগষ্ট ২৪ ইং বৃহস্পতিবার মাগরিব-ইশা মাদরাসার সকলের জন্য
* ২৬-২৭ সেপ্টেম্বর ২৪ ইং বৃহস্পতিবার ফজর-শুক্রবার মাগরিব পর্যন্ত সালেকীনদের জন্য
* ২৪ অক্টোবর ২৪ ইং বৃহস্পতিবার মাগরিব-ইশা মাদরাসার সকলের জন্য
* ২৮-২৯ নভেম্বর ২৪ ইং বৃহস্পতিবার ফজর-শুক্রবার মাগরিব পর্যন্ত সালেকীনদের জন্য
* ২৬ ডিসেম্বর ২৪ ইং বৃহস্পতিবার মাগরিব-ইশা মাদরাসার সকলের জন্য
* ৩০-৩১ জানুয়ারী ২৫ ইং বৃহস্পতিবার ফজর-শুক্রবার মাগরিব পর্যন্ত সালেকীনদের জন্য
* ২৭ ফেব্রুয়ারী ২৫ ইং বৃহস্পতিবার মাগরিব-ইশা মাদরাসার সকলের জন্য
* মার্চ ২৫ ইং এজতেমা সালেকীনদের জন্য

নতুন মসজিদ নির্মাণের শরয়ী বিধান ও পরিচালনার আদর্শ-নীতি

আল্লাহ তাআলা বলেনঃ তুমি এতে (মুনাফিকদের নির্মিত ইবাদতখানায়) কখনো দাঁড়িয়ো না (নামাজ পড়ো না)। প্রথম দিন থেকেই যে মসজিদের ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে তাকওয়ার ওপর, সেটাই তোমার নামাজের জন্য অধিক যোগ্য। -সুরা  তাওবা, আয়াত: ১০৮

তাফসির : আগের আয়াতে মুসলমানদের মসজিদবিমুখ করার জন্য মুনাফিকদের ইবাদতখানা নির্মাণ বিষয়ে আলোচনা ছিল। এই আয়াতে সে ইবাদতখানায় নামাজ আদায় বিষয়ে বর্ণনা করা হয়েছে।

আলোচ্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা মহানবী সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে মসজিদে জেরার তথা মুনাফিকদের ইবাদতখানায় নামাজ আদায় করতে নিষেধ করেছেন এবং মসজিদে কোবায় নামাজ আদায় করতে উৎসাহী করেছেন। মসজিদে কোবা কী? নবী করিম সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিজরত করে মদিনায় পদার্পণ করার প্রাক্কালে কোবা নামক স্থানে পৌঁছে যে মসজিদ নির্মাণ করেছেন, তা-ই মসজিদে কোবা। মসজিদে কোবার বিশেষত্ব কী? এই আয়াত থেকে জানা যায়, মসজিদে কোবার দুটি বিশেষত্ব রয়েছে:

এক. এটি নির্মিত হয়েছে তাকওয়া ও খোদাভীতির ওপর ভিত্তি করে।

দুই. সেখানে এমন লোক আছেন, যাঁরা পবিত্রতা অর্জন ভালোবাসেন এবং পবিত্রতা অর্জনকারীদের পছন্দ করেন।তা ছাড়া এটি ইসলামের ইতিহাসের প্রথম মসজিদ।

এক মসজিদের কাছে অন্য মসজিদ নির্মাণ : মুফতি শফি রহ. লিখেছেন, বর্তমান যুগে কোনো মসজিদের কাছাকাছি অন্য মসজিদ নির্মাণ করা হলে এবং এর পেছনে যদি মুসলমানদের বিভক্ত করা ও আগের মসজিদে মুসল্লি হ্রাস করার অসৎ ইচ্ছা থাকে, তাহলে এতে মসজিদ নির্মাতার সওয়াব তো হবেই না, বরং বিভেদ সৃষ্টির কারণে সে গুনাহগার হবে। তা সত্ত্বেও শরিয়ত মতে, সে জায়গাকে মসজিদ বলা হবে এবং মসজিদের বিধিবিধান এর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। একে ধ্বংস করা কিংবা আগুন লাগিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া জায়েজ হবে না। -মা’আরেফুল কুরআন

একটি স্থান কখন মসজিদ হিসেবে স্বীকৃত হয় : যখন কোনো স্থানে মসজিদ তৈরি করা হয়, মৌখিক বা লিখিতভাবে ওয়াক্ফ করা হয়, নামাজ পড়ার অনুমতি দেওয়া হয়, আজান ও ইকামতের ব্যবস্থা করা হয় এবং ব্যক্তির সম্পত্তি থেকে ওই মসজিদকে রাস্তা ইত্যাদি থেকে পৃথক করা হয়, তখন সর্বসম্মতিক্রমে এটি মসজিদ বলে বিবেচিত হয়; যদি ওয়াক্ফনামা লিপিবদ্ধ করা না-ও হয়। (ফতোয়ায়ে মাহমুদিয়া : ১৪/৩৯১)

এক মসজিদ থেকে অন্য মসজিদের দূরত্ব : যদি কোনো মসজিদে মুসল্লিদের স্থান সংকুলান না হয়, তাহলে আরেকটি মসজিদ নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এ ক্ষেত্রে সতর্কতা হলো, এতটুকু দূরত্বে মসজিদ নির্মাণ করবে, যাতে এক ইমামের কিরাতের সঙ্গে অন্য মসজিদের ইমামের কিরাত সাংঘর্ষিক না হয়। তবে উভয় মসজিদের মাঝখানে যদি কেবল একটি দেয়াল থাকে, তবু উভয় স্থানে পৃথক জামাত আদায় করা বৈধ। (ফতোয়ায়ে মাহমুদিয়া : ১৪/৪১০)

মসজিদে জেরার বা জেদবশত মসজিদ নির্মাণ : মসজিদে জেরারের সংজ্ঞা হলো, যে মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে লোক দেখানোর জন্য, লৌকিকতা প্রদর্শনের জন্য বা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্যে কিংবা অপবিত্র ও অবৈধ অর্থে যেটি নির্মাণ করা হয়েছে, শরিয়ত মতে তা মসজিদে জেরারের অন্তর্ভুক্ত (মাদারেকুত তানজিল : ২/১১১)।

তবে হ্যাঁ, স্বাভাবিক নিয়ম মেনে, ওয়াক্ফ করে এক মসজিদের পাশে অন্য মসজিদ নির্মাণ করা হলে সেখানে নামাজ আদায় বৈধ। (তানবিরুল আবসার : ৪/৩৫১-৩৫২)

স্মরণ রাখতে হবে, শরিয়তের শর্ত মেনে যে মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে, কঠিন সমস্যা (মুসল্লির সংকুলান না হওয়া, মসজিদ অনেক পুরনো হয়ে যাওয়া ইত্যাদি) ছাড়া তা ভেঙে ফেলা জায়েজ নয়। এমন পরিস্থিতিতে পুরনো মসজিদের সংস্কার করলে কোনো অসুবিধা নেই। (রদ্দুল মুহতার : ৪/৩৫৮)

মতানৈক্য, চিন্তা ও আদর্শগত পার্থক্য এবং ফিতনা-ফ্যাসাদ থেকে মুক্ত থাকার জন্য পৃথক মসজিদ নির্মাণ দোষের কিছু নয়। এমন মসজিদকে মসজিদে জেরার আখ্যা দেওয়া অনুচিত। -ফতোয়ায়ে মাহমুদিয়া : ১৪/৪৩২)

হারাম টাকা দ্বারা মসজিদ নির্মাণ করা হলে তাতে নামায মাকরূহের সহিত শুদ্ধ হালাল টাকা দ্বারা পুনর্নির্মাণের ভেঙে ফেলা জরুরি। অন্যথায় পুনর্নির্মাণের চেষ্টা চালিয়ে যাবে। -রদ্দুল মুহতার 1/658

হারাম মাল দ্বারা কোনো মসজিদ-মাদরাসা করা হলে উক্ত মাদরাসায় পড়াশোনা করার দ্বারা সাওয়াব থেকে বঞ্চিত হবে এবং মসজিদে নামায আদায় করার দ্বারা নামায আদায় হলেও মাকরূহ হবে। -কেফায়াতুল মুফতি 7/29

শরীয়তের দৃষ্টিতে মসজিদের মুতাওয়াল্লী দ্বীনদার, পরহেজগার, আমানতদার, নিষ্ঠাবান, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকীদায় বিশ্বাসী ও সুন্নাতের অনুসারী হওয়া জরুরি। বিদ’আতে জড়িত, ভ্রান্ত মতবাদের অনুসারী মুতাওয়াল্লী হওয়ার উপযুক্ত নয়। কমপক্ষে এক মুষ্ঠির নিচে দাড়ি না কাটা ও দ্বীনদার-পরহেজগার হওয়া জরুরি। -কেফায়াতুল মুফতি 7/180

মসজিদের মুতাওয়াল্লী হওয়ার জন্য ওয়াফ্ফ সম্পত্তি ও মসজিদের কার্যাদি পরিচালনার ওপর শরীয়তসম্মত জ্ঞান থাকা অপরিহার্য। অনুরূপ কমিটির সদস্য ও মসজিদের কর্মকর্তা হওয়ার জন্য ফাসেক না হওয়া, আমানতদার হওয়া একান্ত জরুরি। ফাসেক ব্যক্তিকে মসজিদ কমিটির সদস্য, মুতাওয়াল্লী ও কর্মকর্তা নিয়োগ না করা বা স্বেচ্ছায় না হওয়া উভয়টা শরীয়তের আলোকে অপরিহার্য। -আল বাহরুর রায়েক 5/226

মসজিদের মতো পবিত্র ঘরের ফান্ডের টাকা হেফাজত ও সংরক্ষণের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা না থাকলে প্রয়োজনে শরিয়া সম্মত ব্যাংকে টাকা জমা রাখার অনুমতি আছে। তবে সেভিংস অ্যাকাউন্টে না রেখে কারেন্ট অ্যাকাউন্টে টাকা জমা রাখবে, যাতে সুদের লেনদেন করতে না হয়। -ফতোয়ায়ে মাহমুদিয়া : 2004

Loading