আরবী তারিখঃ এখন ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরি মুতাবিক ২৫ এপ্রিল ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রোজ বৃহস্পতিবার, সময় বিকাল ৩:৫৬ মিনিট
এলানঃ-
১৪৪৫-১৪৪৬ হিজরী, ২০২৪-২০২৫ ইং এর মাসিক সুন্নতী ইজতেমা সমূহ
* ২৫ এপ্রিল ২৪ ইং বৃহস্পতিবার মাগরিব-ইশা মাদরাসার সকলের জন্য
* ৩০-৩১ মে ২৪ ইং বৃহস্পতিবার ফজর-শুক্রবার মাগরিব পর্যন্ত সালেকীনদের জন্য
* ২৭ জুন ২৪ ইং বৃহস্পতিবার মাগরিব-ইশা মাদরাসার সকলের জন্য
* ২৫-২৬ জুলাই ২৪ ইং বৃহস্পতিবার ফজর-শুক্রবার মাগরিব পর্যন্ত সালেকীনদের জন্য
* ২৯ আগষ্ট ২৪ ইং বৃহস্পতিবার মাগরিব-ইশা মাদরাসার সকলের জন্য
* ২৬-২৭ সেপ্টেম্বর ২৪ ইং বৃহস্পতিবার ফজর-শুক্রবার মাগরিব পর্যন্ত সালেকীনদের জন্য
* ২৪ অক্টোবর ২৪ ইং বৃহস্পতিবার মাগরিব-ইশা মাদরাসার সকলের জন্য
* ২৮-২৯ নভেম্বর ২৪ ইং বৃহস্পতিবার ফজর-শুক্রবার মাগরিব পর্যন্ত সালেকীনদের জন্য
* ২৬ ডিসেম্বর ২৪ ইং বৃহস্পতিবার মাগরিব-ইশা মাদরাসার সকলের জন্য
* ৩০-৩১ জানুয়ারী ২৫ ইং বৃহস্পতিবার ফজর-শুক্রবার মাগরিব পর্যন্ত সালেকীনদের জন্য
* ২৭ ফেব্রুয়ারী ২৫ ইং বৃহস্পতিবার মাগরিব-ইশা মাদরাসার সকলের জন্য
* মার্চ ২৫ ইং এজতেমা সালেকীনদের জন্য

এক নযরে নামাজের সকল ফরয, ওয়াজিব, সুন্নত, মুসতাহাব সমূহ ও নারীদের নামাজের পার্থক্য


نحمدہ و نصلي علي رسوله الکریم اما بعد

নামাজ হলো সকল ইবাদাত এর মাথা, নামাাজ ঠিক থাকল, সব ঠিক থাকল, নামাজ কেউ ঠিক মতো পরল, তো এই নামাজ তাকে সব ধরনের অপকর্ম থেকে হেফাজত করবে৷ আর নামাজ কেউ পরল না, নামাজে গলত হয়ে গেল, তো আস্তে আস্তে সব কাজে গলত শুরু হয়ে যাবে৷ এজন্য নামাজের দুরস্তি বিশেষ প্রয়োজন৷ শুধু নামাজের সুন্নত, মুস্তাহাব্বাত বা ফরাইজ জানলে হবে না, এগুলো কোন মুত্তাবেয়ে সুন্নত থেকে আমলী মশকের মাধ্যমে ঠিক করে নিতে হবে৷ নইলে এমনি এমনি আমল করা সম্ভব নয়, এজন্য আমরা এখান থেকে ইনশাআল্লাহ নামাজ এর মৌলিক মাসাইল গুলো জেনে নেব, আর কোন আল্লাহওয়ালাকে আমলে মশক করিয়ে নেব, ইনশাআল্লাহ৷

নামাযের বাহিরে ৭টি ফরজ, যেগুলোকে নামজের শর্ত বলা হয়।

১। শরীর পবিত্র থাকা (সুনানে আবী দাউদ, ৬৫০)
২। কাপড় পবিত্র থাকা (সুরা মুদ্দাসিসর, ৪)
৩। নামজের স্থান পবিত্র থাকা (সুরা হজ, ২৬)
৪। সতর ঢাকা (সুরা আরাফ, ৩১)
৫। কেবলামুখি হওয়া (সুরা বাকারাহ, ১৪৪)
৬। ওয়াক্ত মতো নামাজ পড়া
৭। নামাজের নিয়ত করা (সুরা বায়্যিনাহ, ৫)

নামাজের ভিতরের ছয়টি ফরজ,  নামজের রোকন বলা হয়।

১। তাকবিরে তাহরিমা( আল্লহু আকবার) বলা
২। কিয়াম করা (দারিয়ে নামাজ পড়া)
৩। কেরাত পড়া
৪। রুকু করা
৫। দুই সেজদা করা
৬। শেষ বৈঠক কর।(হেদায়া-১/৯৭)

নামজের ওয়াজিব ২১ টি

১। তাকবিরে তাহরিমা বলার সময় আল্লাহু আকবার বলা (আদ্দুররুল মুখতার-মাআ শামী-২/২৭৮)
২। সুরা ফাতেহা পড়া
৩। সূরা ফাতেহার সাথে অন্য সূরা মিলানো
৪। ফজর নামজের প্রথম দুই রাকাত কেরাতে জন্য নির্দিষ্ট করা
৫। কেরাতের পূর্বে সূরা ফাতেহা পড়া
৬। সূরা ফাতেহা একাধিকবার না পড়া (হিন্দিয়া-১/১২৮)
৭। যেহরী (উচ্চস্বরে কেরাত পড়া হয় এমন) নামজে উচ্চস্বরে কেরাত পড়া
৮। সিররী (অনুচ্চস্বরে কেরাত পড়া হয় এমন) নামজে অনুচ্চস্বরে কেরাত পড়া।(ফাতাওয়া শামী-২১৫)
৯। নামাজের রোকন সমূহ ধিরস্থিরভাবে আদায় করা, রুকু সিজদায় এক তাসবিহ পরিমান দেরি করা৷ ( হিন্দিয়া-১/১২৯)
১০। রুকু থেকে উঠে সোজা হয়ে ইত্বমিনানের সাথে দাঁড়ানো (শামী-২/১৫৮)
১১। সেজদার মাঝে কপাল ও নাক জমিনের সাথে লাগিয়ে রাখা। (শামী-২/২০৪)
১২। প্রত্যেক রাকাতে এক সেজদার পর অপর সেজদা করা (শামী -২/১৫৩)
১৩। উভয় সেজদার মাঝে ইত্বমিনানের সাথে বসা। (শামী-২/১৫৮)
১৪। প্রথম বৈঠক করা ।(বাদায়েউস সানায়ে-১/৩৯৯)
১৫। প্রথম বৈঠক ও শেষ বৈঠকে তাশাহ্যুদ পড়া। (শামী -২/১৫৯)
১৬। প্রথম বৈঠকের পরে বিলম্ব নাকরে তৃতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়ানো । (মারাকিল ফালাহ-১৩৬)
১৭। নামজের ক্রিয়া সমূহের মাঝে তারতীব রক্ষা করা। |(হালবী কাবীর-২৯৭)
১৮। সালাম শব্দ দ্বারা নামাজ শেষ করা। (আদ্দুররুল মুখতার মাআ শামী-২/১৬২)
১৯। বেতের নামাজে দোয়ায়ে কুনুত পড়া। (আদ্দুররুল মুখতার মাআ শামী-২/১৬৩)
২০। দুই ঈদের নামজে অতিরিক্ত ছয় তাকবির বলা। (আদ্দুররুল মুখতার মাআ শামী-২/১৬৩)
২১। দুই ঈদের নামজেট দ্বিতীয় রাকাতে রুকুর তাকবীর বলা।(মারাকিল ফালাহ-৯৩)

নামজের সুন্নত ৫১ টি
দাড়ানো অবস্থায় সুন্নত ১১ টি

১. উভয় পায়ের আঙ্গুলসমূহ কিবলামুখী করে সোজা হয়ে দাঁড়ানো, পুরুষদের উভয় পায়ের মধ্যে নিয়ে চার আঙুল, ঊর্ধ্বে একবিঘত পরিমাণ ফাঁকা রাখা হবে স্বাভাবিক পরিমাণ । দেখুনঃ বুখারী শরীফঃ ২/৯২৪ হা. ৬২৫১, তিরমিযী শরীফঃ ১/৬৬ হাদিস নং ৩০৪

* মহিলাদের দাড়ানো অবস্থায় উভয় পায়ের মাঝে চার আঙ্গুল ফাকা রাখা সুন্নত।
দেখুনঃ এমদাদুল আহকামঃ ১/৪৬৬, ফাতহুল কদীরঃ ১/২৯৬, হাশিয়াতুত তাহতাবীঃ ২৬২, ফাতাওয়া শামীঃ ১/৪৪৪, আল ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহুঃ ২/৭০

২. তাকবীরে তাহরীমার সময় চেহারা কিবলার দিকে রেখে নজর সিজদার স্থানে রাখা এবং হাত উঠানোর সময় মাথা না ঝুঁকানো। দেখুনঃ মুস্তাদরাকে হাকেমঃ ১/৪৭৯ হাদিস নং ১৭৬১, তিরমিযী শরীফঃ ১/৬৬ হাদিস নং ৩০৪

৩. উভয় হাত কান পর্যন্ত উঠানো। অর্থাৎ উভয় হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলির মাথা কানের লতি পর্যন্ত উঠানো।
দেখুনঃ মুসলিম শরীফঃ ১/১৬৮ হাদিস নং ৩৯১

* মহিলাগণ তাদের হাত বুক বা কাঁধ পর্যন্ত উঠাবে এবং কাপড়ের ভেতর থেকে হাত বাহির করবে না।
দেখুনঃ তিরমিযী শরীফঃ ১/২২২ হাদিস নং ১১৭৩, তাবরানী কাবীরঃ ৯/১৪৪ হাদিস নং ১৭৪৯৭, ২২/২০ হাদিস নং ২৮

৪. হাত উঠানোর সময় আঙ্গুলসমূহ ও হাতের তালু কিবলামুখী রাখা। দেখুনঃ তিরমিযী শরীফঃ ১/৫৬ হাদিস নং ২৪০, তাবরানী আউসাতঃ ৮/৪৪ হাদিস নং ৭৮০১
৫. আঙ্গুলসমূহ স্বাভাবিক রাখা অর্থাৎ একেবারে মিলিয়েও না রাখা আবার বেশি ফাঁকাও না রাখা। দেখুনঃ মুস্তাদরাকঃ ১/২৩৪ হাদিস নং ৮৫৬
৬. ইমামের তাকবীরে তাহরীমার সাথে সাথে মুক্তাদীর তাকবীরে তাহরীমা বলা। তবে যেন ইমামের তাকবীরে তাহরীমার পূর্বে মুক্তাদীর তাকবীরে তাহরীমার নিঃশ্বাস সমাপ্ত না হয় তা লক্ষ রাখতে হবে। এরূপ হলে মুক্তাদীর নামায ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। পুরো নামাজের সকল তাকবীর এক আলিফ থেকে অধিক টানা যাবে না। অবশ্য হদর এবং তারতীলের পার্থক্য থাকবে। দেখুনঃ বুখারী শরীফঃ ১/১০১ হাদিস নং ৭৩৪, মুসলিম শরীফঃ ১/১৭৭ হাদিস নং ৪১৪-৪১৫, ফাতাওয়ায়ে শামীঃ ১৪৮০
৭. হাত বাঁধার সময় ডান হাতের তালু বাম হাতের পিঠের পাতার ওপর রাখা। দেখুনঃ নাসাঈ শরীফঃ ১/১০২ হাদিস নং ৮২৮
৮. ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি ও কনিষ্ঠাঙ্গুলি দ্বারা গোলাকার বৃত্ত বানিয়ে বাম হাতের কবজি শক্তভাবে ধরা।
দেখুনঃ তিরমিযী শরীফঃ ১/৫৯ হাদিস নং ২৫২, নাসাঈ শরীফঃ ১/১০২ হাদিস নং ৮৮৬, ইবনে মাজাহ শরীফঃ ৫৬ হাদিস নং ৮১১, মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বাঃ ১/৩৪৩ হাদিস নং ৩৯৪২

৯. অবশিষ্ট তিন আঙুল বাম হাতের ওপর স্বাভাবিকভাবে বিছিয়ে রাখবে।

* মহিলাগণ ডান হাতের তালু বাম হাতের পিঠের ওপর স্বাভাবিকভাবে রাখবে। পুরুষের মতো শক্ত করে ধরবে না। দেখুনঃ তিরমিযী শরীফঃ ১/৫৯ হাদিস নং ২৫২, নাসাঈ শরীফঃ ১/১০২ হাদিস নং ৮৮৬, ইবনে মাজাহ শরীফঃ ৫৬ হাদিস নং ৮১১, মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বাঃ ১/৩৪৩ হাদিস নং ৩৯৪২

১০. নাভির নিচে হাত বাঁধা। দেখুনঃ মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বাঃ ১/৩৯০ হাদিস নং ৩৯৫৯

* মহিলাগণ কাপড়ের ভেতরে সিনার উপর স্তনের নিচে হাত বাধা। দেখুনঃ আলবাহরুর রাইকঃ ১/৩২১, মারাকীল ফালাহঃ ১৪১ পৃষ্ঠা

১১. সানা পড়া। দেখুনঃ আবু দাউদ শরীফঃ ১/১১৩ হাদিস নং ৭৭৫, ৭৭৬

কিরাআতের সুন্নত ৭টি

১. প্রথম রাকাআতে ছানা পড়ার পর পূর্ণ اَعُوْذُ بِاللّٰهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ পড়া।
দেখুনঃ আবু দাউদ শরীফঃ ১/১১১ হাদিস নং ৭৬৪, ইবনে মাজাহ শরীফঃ ১/৪৪৩ হাদিস নং ৮০৭
২. প্রতি রাকাআতে সূরা ফাতিহা ও সূরা মিলানোর পূর্বে পূর্ণ بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ পড়া। দেখুনঃ নাসাঈ শরীফঃ ১/১০৪ হাদিস নং ১০৪
৩. সূরা ফাতিহার পর ইমাম, মুক্তাদি বা একাকী নামাযী সবাই অতি নিঃশব্দে ‘আমীন’ বলা।
দেখুনঃ বুখারী শরফিঃ ১/১০৮ হাদিস নং ৭৮২, মুস্তাদরাকে হাকেমঃ ২/২৩২, হাদিস নং ২৯১৩, সুনানে দারাকুতনীঃ ১/২৬৩ হাদিস নং ১২৫৬
৪. ফজর এবং যুহরের নামাযে তিওয়ালে মুফাসসাল অর্থাৎ সূরা ‘হুজুরাত’ থেকে সূরা বুরূজ’ পর্যন্ত যেকোনো সূরা পড়া। আসর এবং ইশার নামাযে আউসাতে মুফাসসাল অর্থাৎ সূরা তারিক’ থেকে সূরা ‘লাম-ইয়াকুন’ পর্যন্ত যেকোনো সূরা পড়া। মাগরিবে কিসারে মুফাসসাল অর্থাৎ সূরা ‘ইযা-যুলযিলাৎ’ থেকে সূরা ‘নাস’ পর্যন্ত থেকে যেকোনো একটি সূরা পড়া অথবা অন্য বড় সূরা থেকে এ পরিমাণ ক্বিরাআত পাঠ করা। দেখুনঃ নাসাঈ শরীফঃ ১/১১৩ হাদিস নং ৯৮২, মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাকঃ ২/১০৪ হাদিস নং ২৬৭২
৫. ফজরের প্রথম রাক’আত দ্বিতীয় রাকাআত অপেক্ষা লম্বা করা। অন্যান্য ওয়াক্তে উভয় রাকাআতে ক্বিরাআতের পরিমাণ সমান রাখা উচিত। দেখুনঃ মুসলিম শরীফঃ ১/১৮৬ হাদিস নং ৪৫১, ৪৫২
৬. ক্বিরাআত অত্যন্ত তাড়াতাড়ি বা একেবারে ধীর গতিতে না পড়া, বরং মধ্যম গতিতে পড়া। দেখুনঃ মুসলিম শরীফঃ ১/২৫৩ হাদিস নং ৭৩৩
৭. ফরয নামাযের তৃতীয় এবং চতুর্থ রাকাআতে শুধু সূরা ফাতিহা পড়া। দেখুনঃ বুখারী শরীফঃ ১/১০৭ হাদিস নং ৭৭৬, মুসলিম শরীফঃ ১/১৮৫ হাদিস নং ৪৫১

রুকুতে সুন্নত ৮টি

১. তাকবীর বলতে বলতে রুকুতে যাওয়া। দেখুনঃ বুখারী শরীফঃ ১/১০৮ হাদিস নং ৭৮৯
২. উভয় হাত দ্বারা শক্তভাবে হাঁটু ধরা। দেখুনঃ বুখারী শরীফঃ ১/১০৯ হাদিস নং ৭৯০
৩. হাতের আঙ্গুলসমূহ ফাঁকা করে ছড়িয়ে রাখা। দেখুনঃ আবু দাউদ শরীফঃ ১/১০৬ হাদিস নং ৭৩১, মুসনাদে আহমদঃ ৪/১২০ হাদিস নং ১৭০৮৫

* মহিলাগণ উভয় হাত হাঁটুর ওপর স্বাভাবিকভাবে রাখবে, পুরুষদের মতো শক্ত করে ধরবে না এবং আঙ্গুলগুলো মিলিয়ে রাখবে। রুকুতে উভয় পায়ের গোড়ালী পরিপূর্ণ মিলিয়ে রাখা। দেখুনঃ মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাকঃ ৩/১৩৭ হাদিস নং ৫০৬৯, ফাতাওয়া শামীঃ ১/৫০৪

৪. উভয় হাত সম্পূর্ণ সোজা রাখা, কনুই বাঁকা না করা। দেখুনঃ আবু দাউদ শরীফঃ ১/১০৭ হাদিস নং ৭৩৪

* মহিলাগণ তাদের উভয় বাহু পাঁজরের সঙ্গে মিলিয়ে রাখবে। দেখুনঃ মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাকঃ ৩/১৩৭ হাদিস নং ৫০৬৯

৫. পায়ের গোছা, হাঁটু ও উরু সম্পূর্ণ সোজা রাখা। হাঁটু সামনের দিকে বাঁকা না করা।
দেখুনঃ আবু দাউদ শরীফঃ ১/১২৫ হাদিস নং ৮৬৩, মুসনাদে আহমদঃ ৪/১১৯ হাদিস নং ১৭০৮০
৬. মাথা, পিঠ ও কোমর সমান রাখা, উঁচু-নিচু না করা। দেখুনঃ বুখারী শরীফঃ ১/১১৪ হাদিস নং ৮২৮, মুসলিম শরীফঃ ১/১৯৪ হাদিস নং ৪৯৮

* মহিলাগণ রুকুতে পুরুষদের তুলনায় কম ঝুঁকবে, হাতের আঙ্গুলগুলোর মাথা হাটু পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়াই যথেষ্ট। দেখুনঃ মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাকঃ ৩/১৩৭ হাদিস নং ৫০৬৯, মারাকীল ফালাহঃ ১৪১ পৃষ্ঠা, উমদাতুল ফিকহঃ ২/১১৪
৭. রুকুতে কমপক্ষে তিনবার রুকুর তাসবীহ سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيْمِ পড়া। দেখুনঃ আবু দাউদ শরীফঃ ১/১২৯ হাদিস নং ৮৮৬ সহীহ ইবনে খুজায়মাঃ ১/৩৩৪ হাদিস নং ৬৬৮
৮. রুকু থেকে উঠতে ইমাম سَمِعَ اللّٰهُ لِمَنْ حَمِدَهٗ পরবে, মুক্তাদি رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ ও মুনফারিদ উভয়টি পরবে। দেখুনঃ বুখারী শরীফঃ ১/১০১ হাদিস নং ৭৩৩, ৭৮৯

রুকু থেকে উঠে সম্পূর্ণ সোজা হয়ে এক তাসবীহ পরিমাণ স্থিরভাবে দাঁড়ানো জরুরি। দেখুনঃ বুখারী শরীফঃ ১/১১০ হাদিস নং ৮০১, ৮০২

সিজদায় সুন্নত ১২টি

১. তাকবীর বলতে বলতে রুকুতে যাওয়া। দেখুনঃ বুখারী শরীফঃ ১/১১০ হাদিস নং ৮০৩
২. সিজদায় যাওয়ার সময় প্রথমে উভয় হাঁটু মাটিতে রাখা। দেখুনঃ নাসাঈ শরীফঃ ২/২০৬ হাদিস নং ১০৮৯, আবু দাউদ শরীফঃ ১/১২২ হাদিস নং ৮৩৮
৩. তারপর হাঁটু থেকে আনুমানিক এক হাতের চেয়ে একটু বেশি সামনে উভয় হাত রাখা এবং হাতের আঙ্গুলসমূহ কিবলামুখী করে সম্পূর্ণরূপে মিলিয়ে রাখা। দেখুনঃ বুখারী শরীফঃ ১/১১৪ হাদিস নং ৮২৮, সহীহ ইবনে খুজায়মাঃ ১/৩২৪ হাদিস নং ৬৪২, ৬৪৩

* মহিলাগণ অত্যন্ত জড়সড় ও সংকুচিত হয়ে সিজদা করবে। দেখুনঃ মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বাঃ ১/২৪২ হাদিস নং ২৭৭৯
৪. তারপর উভয় বৃদ্ধাঙ্গুলির মাথা বরাবর নাক রাখা। দেখুনঃ মুসনাদে আহমাদঃ ৪/৩১৮ হাদিস নং ১৮৮৯৪
৫. তারপর কপাল রাখা। দেখুনঃ মুসনাদে আহমদঃ ৪/৩১৭ হাদিস নং ১৮৮৮০
৬. অতঃপর দুই হাতের মাঝে সিজদা করা এবং দৃষ্টি নাকের অগ্রভাগের দিকে রাখা।
দেখুনঃ মুসলিম-১/১৭৩ হাদিস নং ৪০১, মুস্তাদরাকে হাকেমঃ ১/৪৭৯ হাদিস নং ১৭৬১
৭. সিজদায় পেট উরু থেকে পৃথক রাখা। দেখুনঃ মুসলিম শরীফঃ ১/১৯৪ হাদিস নং ৪৯৬, আবু দাউদ শরীফঃ ১/১০৭ হাদিস নং ৭৩৫

* মহিলাগণ উভয় রানের সঙ্গে পেট মিলিয়ে রাখবে। দেখুনঃ মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বাঃ ১/২৪২ হাদিস নং ২৯৯৯
৮. পাঁজরদ্বয় থেকে উভয় বাহু পৃথক রাখা। দেখুনঃ বুখারী শরীফঃ ১/১১২ হাদিস নং ৮০৭

* মহিলাগণ বাহুদ্বয় যথাসাধ্য পাঁজরের সাথে মিলিয়ে রাখবে। দেখুনঃ মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বাঃ ১/১৩৮ হাদিস নং ২৭৮১
৯. কনুই মাটি ও হাঁটু থেকে পৃথক রাখা। দেখুনঃ বুখারী শরীফঃ ১/১১৩ হাদিস নং ৮২২

* মহিলাগণ কনুই মাটিতে মিলিয়ে রাখবে এবং পায়ের পাতাগুলো দাঁড়ানো না রেখে ডান দিকে বের করে মাটিতে বিছিয়ে রাখবে। আর আঙ্গুলগুলো যথাসাধ্য কিবলামুখী রাখবে। দেখুনঃ মারাসীলে আবী দাউদঃ ১১৯ হাদিস নং ৮৭
১০. সিজদায় কমপক্ষে তিনবার সিজদার তাসবীহ سُبْحَانَ رَبِّيَ الْاَعْليٰ পড়া। দেখুনঃ আবু দাউদ শরীফঃ ১/৫৪২ হাদিস নং ৮৭০
১১. তাকবীর বলতে বলতে সিজদা হতে ওঠা। দেখুনঃ বুখারী শরীফঃ ১/১১৪ হাদিস নং ২৫
১২. সিজদা থেকে উঠতে প্রথমে কপাল, তারপর নাক, তারপর উভয় হাত, তারপর উভয় হাঁটু উঠানো।
দেখুনঃ মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাকঃ ২/১৭৭ হাদিস নং ২৯৫৮

* দাঁড়ানো অবস্থা থেকে সিজদায় যাওয়ার সময় হাঁটু মাটিতে লাগার আগ পর্যন্ত বুক সম্পূর্ণ সোজা রাখা জরুরি। অপারগতা ছাড়া বুক ঝুঁকিয়ে সিজদায় গেলে একাধিক রুকু হয়ে সুন্নতের খেলাফ হবে। দু’সিজদার মাঝে সম্পূর্ণ সোজা হয়ে এক তাসবীহ পরিমাণ স্থির হয়ে বসা জরুরি। সাহাবাগণের রা. আমল এমনই ছিলো।

বৈঠকে সুন্নত ১৩টি

১. বাম পা বিছিয়ে তার ওপর বসা। ডান পা সোজাভাবে দাঁড়িয়ে রাখা উভয় পায়ের আঙুলসমূহ সাধ্যমতো কিবলার দিকে মুড়িয়ে রাখা। দেখুনঃ বুখারী শরীফঃ ১/১১৪ হাদিস নং ৮২৭, মুসলিম শরীফঃ ১/১৯৪-১৯৫ হাদিস নং ৪৯৮

* মহিলাগণ বাম নিতম্বের ওপর বসবে এবং উভয় পা ডান দিকে বের করে কিবলামুখী করত মাটিতে বিছিয়ে রাখবে। ডান রানকে বাম রানের উপর রাখা। দেখুনঃ মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বাঃ ১/২৭১ হাদিস নং ২৮০৮, মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাকঃ ৩/১৩৯ হাদিস নং ৫০৭৫, আলবাহরুর রাইকঃ ১/৩২১, উমদাতুল ফিকহঃ ২/১১৪
২. উভয় হাত রানের ওপর হাঁটু বরাবর করে রাখা এবং দৃষ্টি দুই হাঁটুর মাঝ বরাবর রাখা। পুরুষগণ হাতের আঙ্গুলগুলো স্বাভাবিকভাবে রাখবে। দেখুনঃ মুসলিম শরীফঃ ১/২১৬ হাদিস নং ৫৮০, আবু দাউদ শরীফঃ ১/১৪২ হাদিস নং ৯৯০

* মহিলাগণ হাতের আঙ্গুলগুলো মিলিয়ে রাখবে। দেখুনঃ মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বাঃ ১/২৭০ হাদিস নং ২৭৯৪
৩. তাশাহুদ এর মধ্যে اَشْهَدُ বলার সঙ্গে সঙ্গে মধ্যমা ও বৃদ্ধাঙ্গুলির মাথা এক সাথে মিলিয়ে গোলাকার বৃত্ত বানানো এবং অনামিকা ও কনিষ্ঠাঙ্গুলিদ্বয় মুড়িয়ে রাখা এবং لَا اِلٰهَ বলার সময় শাহাদাত আঙুল সামান্য উঁচু করে ইশারা করা। অতঃপর اِلَّا اللّٰهُ বলার সময় আঙুলের মাথা সামান্য ঝুঁকানো, হাঁটুর সাথে না লাগানো। দেখুনঃ আবু দাউদ শরীফঃ ১/১০৫ হাদিস নং ৭২৬, নাসাঈ শরীফঃ হাদিস নং ১২৭৩
৪. আখেরী বৈঠকে তাশাহুদ পড়ার পর দরূদ শরীফ পাঠ করা। দেখুনঃ বুখারী শরীফঃ ১/৪৭৭, হাদিস নং ৩৩৭০, তিরমিযী শরীফঃ ২/১৮৬ হাদিস নং ৩৪৭৭
৫. দরূদ শরীফের পর দু’আয়ে মাছুরা পড়া। দেখুনঃ বুখারী শরীফঃ ১/১১৫ হাদিস নং ৮৩৪, তিরমিযী শরীফঃ ১/১৩০ হাদিস নং ৫৯৩
৬. উভয় দিকে সালাম ফিরানো। দেখুনঃ মুসলিম শরীফঃ ১/১৮১ হাদিস নং ৫৮২, তিরমিযী শরীফঃ ১/৬৫ হাদিস নং ২৯৫
৭. ডান দিকে আগে সালাম ফিরানো। উভয় সালাম কিবলার দিক থেকে আরম্ভ করা এবং সালামের সময় দৃষ্টি কাঁধের দিকে রাখা। দেখুনঃ মুসলিম শরীফঃ ১/২১৬ হাদিস নং ৫৮২, তিরমিযী শরীফঃ ১/৬৬ হাদিস নং ২৯৬
৮. ইমাম উভয় সালামে মুক্তাদী, ফেরেশতা ও নামাযী জ্বিনদের প্রতি সালাম করার নিয়ত করা।
দেখুনঃ মুসলিম শরীফঃ ১/১৮১ হাদিস নং ৪৩১, মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাকঃ ২/২২২ হাদিস নং ৩১৪১
৯. মুক্তাদীগণ উভয় সালামে ইমাম, অন্যান্য মুসল্লী, ফেরেশতা ও নামাযী জিনদের প্রতি সালাম করার নিয়ত করা।
দেখুনঃ মুসলিম শরীফঃ ১/১৮১ হাদিস নং ৪৩১, ইবনে মাজাহ শরীফঃ ১/৬৫-৬৬ হাদিস নং ৯২২, মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাকঃ ২/২২৩-২২৪ হাদিস নং ৩১৪৯, ৩১৫২
১০. একাকী নামাযী ব্যক্তি শুধু ফেরেশতাগণের প্রতি সালাম করার নিয়ত করা। দেখুনঃ মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাকঃ ২/২২১ হাদিস নং ৩১৪০
১১. মুক্তাদীগণ ইমামের সালাম ফিরানোর সাথে সাথে অবিলম্বে সালাম ফিরানো। দেখুনঃ বুখারী শরীফঃ ১/১১৬ হাদিস নং ৮৩৮
১২. ইমাম সালাম ফিরানোর সময় দ্বিতীয় সালাম প্রথম সালাম অপেক্ষা আস্তে বলা এবং প্রথম সালাম অপেক্ষা দ্বিতীয় সালামে মদ কম করা। দেখুনঃ তিরমিযী শরীফঃ ১/৬৬ হাদিস নং ২৯৭, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবাহঃ ১/৩০০ হাদিস নং ৩০৫৭
১৩. ইমামের দ্বিতীয় সালাম ফিরানো শেষ হলে মাসবূকের ছুটে যাওয়া নামায আদায়ের জন্য দাঁড়ানো।
দেখুনঃ মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাকঃ ২/২২৫ হাদিস নং ৩১৫৬

নামাজের মুস্তাহাব সমূহ ৭টি

১। দাঁড়ানো অবস্থায় সেজদার স্থানের দিকে, রুকু অবস্থায় উভয় পায়ের পাতার উপর, সেজদার সময় নাকের দিকে, বৈঠকের সময় কোলের দিকে দৃষ্টি রাখা।(বাদায়েউস সানায়ে-১/৫০৩)
২। তাকবীরে তাহরিমা বলার সময় হাত চাদর থেকে বাহিরে বের করে রাখা।
৩। সালাম ফিরানোর সময় উভয় কাঁধের উপর দৃষ্টি রাখা।(মারাকিল ফালাহ-১৫১)
৪। নামাজে মুস্তাহাব পরিমান ক্বেরাত( ফজর ও যোহরে তিওয়ালে মুফাস্যাল,সূরা হুজরাত থেকে সূরা বুরুজ পর্যন্ত।আছর ও ইশাতে আওসাতে মুফাস্যাল, সূরা তরেক থেকে বায়্যিনা পর্যন্ত। মাগরীবে কিসারে মুফাস্যাল সূরা যিলযাল থেকে শেষ পর্যন্ত।)পড়া।(ফাতাওয়া শামী-২/২৬১)
৫। জুমআর দিন ফজরের নামাজে প্রথম রাকাতে সূরা আলিফ,লাম,মিম সেজদা ও দ্বিতীয় রাকাতে সূরা দাহর পড়া।(ফাতাওয়া শামী-২/২৬৫)
৬।যথা সম্ভব কাঁশি ও ঢেকুর চেপে রাখা।(ফাতাওয়া শামী-২/১৭৬)
৭। হাই আসলে মুখ বন্ধ রাখার চেষ্টা করা।(ফাতাওয়া শামী-২/১৭৭)

Loading

1 thought on “এক নযরে নামাজের সকল ফরয, ওয়াজিব, সুন্নত, মুসতাহাব সমূহ ও নারীদের নামাজের পার্থক্য”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *