আরবী তারিখঃ এখন ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরি মুতাবিক ২৫ এপ্রিল ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রোজ বৃহস্পতিবার, সময় বিকাল ৪:২৭ মিনিট
এলানঃ-
১৪৪৫-১৪৪৬ হিজরী, ২০২৪-২০২৫ ইং এর মাসিক সুন্নতী ইজতেমা সমূহ
* ২৫ এপ্রিল ২৪ ইং বৃহস্পতিবার মাগরিব-ইশা মাদরাসার সকলের জন্য
* ৩০-৩১ মে ২৪ ইং বৃহস্পতিবার ফজর-শুক্রবার মাগরিব পর্যন্ত সালেকীনদের জন্য
* ২৭ জুন ২৪ ইং বৃহস্পতিবার মাগরিব-ইশা মাদরাসার সকলের জন্য
* ২৫-২৬ জুলাই ২৪ ইং বৃহস্পতিবার ফজর-শুক্রবার মাগরিব পর্যন্ত সালেকীনদের জন্য
* ২৯ আগষ্ট ২৪ ইং বৃহস্পতিবার মাগরিব-ইশা মাদরাসার সকলের জন্য
* ২৬-২৭ সেপ্টেম্বর ২৪ ইং বৃহস্পতিবার ফজর-শুক্রবার মাগরিব পর্যন্ত সালেকীনদের জন্য
* ২৪ অক্টোবর ২৪ ইং বৃহস্পতিবার মাগরিব-ইশা মাদরাসার সকলের জন্য
* ২৮-২৯ নভেম্বর ২৪ ইং বৃহস্পতিবার ফজর-শুক্রবার মাগরিব পর্যন্ত সালেকীনদের জন্য
* ২৬ ডিসেম্বর ২৪ ইং বৃহস্পতিবার মাগরিব-ইশা মাদরাসার সকলের জন্য
* ৩০-৩১ জানুয়ারী ২৫ ইং বৃহস্পতিবার ফজর-শুক্রবার মাগরিব পর্যন্ত সালেকীনদের জন্য
* ২৭ ফেব্রুয়ারী ২৫ ইং বৃহস্পতিবার মাগরিব-ইশা মাদরাসার সকলের জন্য
* মার্চ ২৫ ইং এজতেমা সালেকীনদের জন্য

হানাফী মাযহাব মোতাবেক সকল উভচর প্রাণীকে হারাম বা মাকরূহ বলা হয় কেনো?

উভচর প্রাণীগুলো খাওয়া জায়েজ কীনা সেই বিষয়ে ইখতিলাফ থাকলেও হানাফীরা কয়েকটি উসুলের ভিত্তিতে সকল উভচর প্রাণী খাওয়া কে হারাম বা মাকরূহ বলেছেন ৷

উসুল নং ১ঃ—সকল উভচর প্রাণী ই নোংড়া প্রকৃতির হয় ৷ আর নোংড়া প্রাণীদের বিষয়ে কুরআনে এসেছে:- وَ یُحِلُّ لَہُمُ الطَّیِّبٰتِ وَ یُحَرِّمُ عَلَیۡہِمُ الۡخَبٰٓئِثَআর, যিনি পবিত্র বস্তু কে হালাল করেন। এবং নোংড়া কে হারাম করেন (⁷সুরা আরাফঃ ১৫৭)

উসুল নং ২ঃ- «كُلُّ ذِي نَابٍ مِنَ السِّبَاعِ، فَأَكْلُهُ حَرَامٌ» رَوَاهُ مُسْلِمٌ রাসুলুল্লাহ সঃ সকল প্রকার দাঁত ও নখরযুক্ত হিংস্র জন্তু খেতে হারাম/নিষেধ করেছেন ৷(বুখারীঃ ৫৭৮০, মুসলিমঃ ১৯৩৩, আবূ দাউদঃ ৩৮০২,,তিরমিজীঃ১৪৭৪,,১৪৮৫,,দারেমীঃ২০২০)

আর, সর্বক্ষনিক পানিতে বসবাসকারী একমাত্র মাছ ব্যতিত সকল উভচর প্রাণী হয়তো নোংড়া হয়, নতুবা হিংস্র/বিষাক্ত প্রজাতীর হয় ৷৷সূরা মায়িদাহ আয়াতঃ ৯৬ এর সমুদ্রের শিকার অথবা রাসূলুল্লাহর সঃ বলা সমূদ্রের মৃত প্রাণীও হালাল— মোতাবেক আল্লাহ তায়ালা “সর্বদাই সমুদ্রের মধ্যেই বসবাস করা শিকার” কে খাওয়া হালাল করেছেন ৷ অথচ, একমাত্র মাছ ব্যতিত কোনো উভচর প্রাণী ই সর্বদাই সমুদ্রে বসবাসকারী শিকার নয়, বরং সমূদ্র এবং স্থল উভয়েই বসবাসকারী «শিকারী» ৷

যেমনভাবে হযরত উমর রাঃ বলেছেন:- قَالَ عُمَرُ صَيْدُهُ مَا اصْطِيدَ، وَطَعَامُهُ مَا رَمَى بِهِ সুরা মায়েদার ৯৬ নং আয়াতের صَيْدُه হলোঃ যা শিকার করা হয়, আর طَعَامُه হলোঃ সমুদ্র যাকে নিক্ষেপ করে।সুতরাং সমূদ্রের সেই প্রাণীগুলোই হালাল হবে, যেটা সর্বদাই পানিতে বা সমূদ্রেই থাকে ৷ সমূদ্র বা স্থলভাগ উভয়তেই বসবাসকারী প্রাণী উক্ত হুকুমের আওতাভুক্ত নয় ৷

উসুল নং ৩ঃ—উভচর প্রাণী খাওয়া নিষিদ্ধ অথবা মাকরূহ—এ বিষয়ে হাদীস রয়েছে ৷حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ كَثيِرٍ، أَخْبَرَنَا سُفْيَانُ، عَنِ ابْنِ أَبِي ذِئْبٍ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ خَالِدٍ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ الْمُسَيِّبِ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عُثْمَانَ: أَنَّ طَبِيبًا سَأَلَ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ ضِفْدَعٍ يَجْعَلُهَا فِي دَوَاءٍ، فَنَهَاهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ قَتْلِهَا صحي আব্দুর রাহমান ইবনু উসমা (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। একদা এক ডাক্তার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ব্যাঙ দিয়ে ঔষধ তৈরী সম্পর্কে প্রশ্ন করলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ব্যাঙ হত্যা করতে নিষেধ করলেন।[আবু দাউদ, হা/৩৮৭১,,৫২৬৯,,নাসাঈ,হা/৪৩৫৬]মূলনীতি হলো- যেটা হত্যা করে ঔষুধ বানানো হারাম/নিষেধ, সেটা খাওয়াও হারাম/নিষেধ ৷৷৷↓6360 – وَحَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ خُزَيْمَةَ قَالَ: ثنا مُسْلِمُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ , قَالُوا: ثنا حَمَّادُ بْنُ سَلَمَةَ , قَالَ ثنا حَمَّادٌ وَهُوَ ابْنُ أَبِي سُلَيْمَانَ , عَنْ إِبْرَاهِيمَ , عَنِ الْأَسْوَدِ عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أُهْدِيَ لَهُ ضَبٌّ فَلَمْ يَأْكُلْهُ. فَقَامَ عَلَيْهِمْ سَائِلٌ فَأَرَادَتْ عَائِشَةُ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا أَنْ تُعْطِيَهُ فَقَالَ لَهَا النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَتُعْطِينَهُ مَا لَا تَأْكُلِينَ؟»

হযরত আয়েশা রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একবার রাসূল সাঃ এর কাছে একটি দ্বব (গুইসাপ প্রজাতির প্রাণী) হাদিয়া স্বরূপ পাঠানো হল। নবীজী সাঃ সেটি খেলেন না। তখন একটি ভিক্ষুক আসে। হযরত আয়েশা রাঃ তখন সেটি ভিক্ষুককে দিয়ে দিতে চাইলেন। রাসূল সাঃ তখন বললেনঃ তুমি কি তাকে এমন জিনিস দিবে যা তুমি নিজে খাও না?

(তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-৬৩৬০}↓حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَوْفٍ الطَّائِيُّ، أَنَّ الْحَكَمَ بْنَ نَافِعٍ، حَدَّثَهُمْ حَدَّثَنَا ابْنُ عَيَّاشٍ، عَنْ ضَمْضَمِ بْنِ زُرْعَةَ، عَنْ شُرَيْحِ بْنِ عُبَيْدٍ، عَنْ أَبِي رَاشِدٍ الْحُبْرَانِيِّ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ شِبْلٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم نَهَى عَنْ أَكْلِ لَحْمِ الضَّبِّ ‏.‏ ‘আবদুর রহমান ইবনু শিবল (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দ্ববের (গুইসাপ প্রজাতির প্রাণীর) গোশত খেতে নিষেধ করেছেন। (সুনানে আবু দাউদ, হা/ ৩৭৯৬,সিলসিলাহ সহীহাহ হা/২৩৯০ )

উল্লেখ্য, দ্বব বা গুইসাপ প্রজাতির উক্ত প্রাণী খাওয়া নিষেধ বলতে হারাম উদ্দেশ্য নয়, বরং মাকরূহ উদ্দেশ্য ৷ কেননাঃ-রাসুলুল্লাহ সঃ বলেছেন:—لاَ آكُلُهُ وَلاَ أُحَرِّمُهُওটা আমি খাই না এবং তা (খাওয়া) হারামও বলি না। (সহীহ মুসলিমঃ ৪৯২১,, ৪৯২২,,৪৯২৩)অন্যত্র এসেছেঃ- হযরত জাবির বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ: عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، أَنَّ النَّبِيَّ ـ صلى الله عليه وسلم ـ لَمْ يُحَرِّمِ الضَّبَّ وَلَكِنْ قَذِرَهُ وَإِنَّهُ لَطَعَامُ عَامَّةِ الرِّعَاءِ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গুইসাপ হারাম করেননি, কিন্তু তা অপছন্দ করেছেন। (মুসনাদে আহমাদ, হা/ ১৪২৭৪)দ্বব বলা হয় গুইসাপ প্রজাতীর এমন প্রাণী, যেগুলো ঘাস, লতা এবং ছোট পোকা মাকড় খায়। পানিতে সাতার কাটতে পারে, তবে বসবাস করে মরুভুমির ডাঙ্গায়। . আর গুইসাপ বলা হয় এক বিষাক্ত ও হিংস্র প্রাণী কে, যেটা সাপ ইত্যাদি শিকার করে খায়। বেশীরভাগ সময়ই পানিতে থাকে. তবে ডাঙ্গায়ও থাকে।। আর উপরে মূলনীতি বলা হয়েছে যে, উভচর যেটা বিষাক্ত বা হিংস্র প্রাণী হবে, সেটাই হারাম। সুতরাং বিভিন্ন যৌক্তিক এবং দালিলিক উসুলের আলোকেই হানাফীরা সকল উভচর প্রাণীকে হারাম বা মাকরূহ বলে থাকেন ৷

আল্লাহ বুঝার তাওফীক দান করুন – আমিন।

Loading