আরবী তারিখঃ এখন ৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরি মুতাবিক ১৬ এপ্রিল ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রোজ মঙ্গলবার, সময় বিকাল ৩:০১ মিনিট
এলানঃ-
১৪৪৫-১৪৪৬ হিজরী, ২০২৪-২০২৫ ইং এর মাসিক সুন্নতী ইজতেমা সমূহ
* ২৫ এপ্রিল ২৪ ইং বৃহস্পতিবার মাগরিব-ইশা মাদরাসার সকলের জন্য
* ৩০-৩১ মে ২৪ ইং বৃহস্পতিবার ফজর-শুক্রবার মাগরিব পর্যন্ত সালেকীনদের জন্য
* ২৭ জুন ২৪ ইং বৃহস্পতিবার মাগরিব-ইশা মাদরাসার সকলের জন্য
* ২৫-২৬ জুলাই ২৪ ইং বৃহস্পতিবার ফজর-শুক্রবার মাগরিব পর্যন্ত সালেকীনদের জন্য
* ২৯ আগষ্ট ২৪ ইং বৃহস্পতিবার মাগরিব-ইশা মাদরাসার সকলের জন্য
* ২৬-২৭ সেপ্টেম্বর ২৪ ইং বৃহস্পতিবার ফজর-শুক্রবার মাগরিব পর্যন্ত সালেকীনদের জন্য
* ২৪ অক্টোবর ২৪ ইং বৃহস্পতিবার মাগরিব-ইশা মাদরাসার সকলের জন্য
* ২৮-২৯ নভেম্বর ২৪ ইং বৃহস্পতিবার ফজর-শুক্রবার মাগরিব পর্যন্ত সালেকীনদের জন্য
* ২৬ ডিসেম্বর ২৪ ইং বৃহস্পতিবার মাগরিব-ইশা মাদরাসার সকলের জন্য
* ৩০-৩১ জানুয়ারী ২৫ ইং বৃহস্পতিবার ফজর-শুক্রবার মাগরিব পর্যন্ত সালেকীনদের জন্য
* ২৭ ফেব্রুয়ারী ২৫ ইং বৃহস্পতিবার মাগরিব-ইশা মাদরাসার সকলের জন্য
* মার্চ ২৫ ইং এজতেমা সালেকীনদের জন্য

হযরত আলি রা. ও হযরত মুআবিয়া রা. এর মধ্যে ইখতেলাফ কি ছিল? –মুফতি রেজাউল করিম আবরার

হযরত আলি রাযি. এবং হযরত মুআবিয়া রাযি. এর মধ্যকার ইখতেলাফ ছিল, উসমান রাযি. এর হত্যাকারীর কেসাস গ্রহণকে কেন্দ্র করে। অন্যথায় মুআবিয়া রাযি. এটা স্বীকার করতেন যে, আলি রাযি. তাঁর থেকে শ্রেষ্ঠ এবং খেলাফতের অধিক হকদার। তিনি খেলাফত নিয়ে ইখতেলাফও করেননি এবং আলি রা. জীবিত থাকতে খেলাফত দাবি করেননি।

ইয়াহইয়া বিন সুলাইমান জুফি হাসান সনদে বর্ণনা করেন যে,
عَنْ أَبِي مُسْلِمٍ الْخَوْلَانِيِّ أَنَّهُ قَالَ لِمُعَاوِيَةَ أَنْتَ تُنَازِعُ عَلِيًّا فِي الْخِلَافَةِ أَوْ أَنْتَ مِثْلُهُ قَالَ لَا وَإِنِّي لَأَعْلَمُ أَنَّهُ أَفْضَلُ مِنِّي وَأَحَقُّ بِالْأَمْرِ وَلَكِنْ أَلَسْتُمْ تَعْلَمُونَ أَنَّ عُثْمَانَ قُتِلَ مَظْلُومًا وَأَنا بن عَمِّهِ وَوَلِيُّهُ أَطْلُبُ بِدَمِهِ فَأْتُوا عَلِيًّا فَقُولُوا لَهُ يَدْفَعُ لَنَا قَتَلَةَ عُثْمَانَ فَأَتَوْهُ فَكَلَّمُوهُ فَقَالَ يَدْخُلُ فِي الْبَيْعَةِ وَيُحَاكِمُهُمْ إِلَيَّ فَامْتَنَعَ مُعَاوِيَةُ

আবু মুসলিম খাওলানি থেকে বর্ণনা করেন, তিনি মুআবিয়া রা.-এর নিকট এসে বলেন, আপনি আলি রা.-এর খেলাফত নিয়ে ঝগড়া করেন! আপনি কি তাঁর মতো?
তিনি বললেন, না। আমি জানি তিনি আমার চেয়ে বেশি হকদার। কিন্তু তুমি কি জানো না উসমান রা.-কে মাজলুম অবস্থায় হত্যা করা হয়েছে। আমি তাঁর চাচাতো ভাই এবং অভিভাবক। আমি কি তাঁর রক্তপান চাইব না? তুমি গিয়ে তাঁকে উসমান রা.-এর হত্যাকারীদের আমার হাতে সোপর্দ করে দেওয়ার কথা বলল। এরপর তিনি আলি রা.-এর নিকট এসে উসমান রা.-এর হত্যাকারীদের সোপর্দ করতে বললেন। কিন্তু আলি রা. সোপর্দ করলেন না।’ (ফাতহুল বারি: ১৩/৮৬)

আলি রা. এবং মুআবিয়া রা.-এর মধ্যখানে ইখতেলাফের মূল কারণ ছিল এটি। খলিফা নির্ধারণ বা অপসারণ নিয়ে কোনো মতভেদ ছিল না উভয়ের মাঝে। ইবনে হাজম রাহ. এ বিষয়ে বলেন,

وَأما أَمر مُعَاوِيَة رَضِي الله عَنهُ فبخلاف ذَلِك وَلم يقاتله عَليّ رَضِي الله عَنهُ لامتناعه من بيعَته لِأَنَّهُ كَانَ يَسعهُ فِي ذَلِك مَا وسع ابْن عمر وَغَيره لَكِن قَاتله لامتناعه من إِنْفَاذ أوامره فِي جَمِيع أَرض الشَّام وَهُوَ الإِمَام الْوَاجِبَة طَاعَته فعلي الْمُصِيب فِي هَذَا وَلم يُنكر مُعَاوِيَة قطّ فضل عَليّ واستحقاقه الْخلَافَة لَكِن اجْتِهَاده اداه إِلَى أَن رأى تَقْدِيم أَخذ الْقود من قتلة عُثْمَان رَضِي الله عَنهُ على الْبيعَة وَرَأى نَفسه أَحَق بِطَلَب دم عُثْمَان ….. وَأصَاب فِي ذَلِك الْأَثر الَّذِي ذكرنَا وَإِنَّمَا أَخطَأ فِي تَقْدِيمه ذَلِك على الْبيعَة فَقَط فَلهُ أجر الِاجْتِهَاد فِي ذَلِك

অর্থাৎ আলি রা. মুআবিয়া রা.-এর সঙ্গে যুদ্ধ করেন এ কারণে যে, তিনি তাঁর নির্দেশ সিরিয়ায় বাস্তবায়ন করছিলেন না। অথচ তিনি ছিলেন খলিফা। তাঁর আনুগত্য করা মুআবিয়া রা.-এর ওপর ওয়াজিব। মুআবিয়া রা. কখনো আলি রা.-এর শ্রেষ্ঠত্ব এবং তিনি যে খলিফা হওয়ার অধিক হকদার, সেটি অস্বীকার করেননি। তাঁর ইজতেহাদ ছিল আগে উসমান রা.-এর হত্যার বদলা নিতে হবে। তিনি নিজেকে রক্তপণ দাবির অধিক উপযুক্ত মনে করেছেন। তাঁর এ দাবি সঠিক ছিল। কিন্তু ভুল করেছেন তিনি বায়আতের আগে হত্যার বদলা চেয়েছেন। এ কারণে তিনি ইজতেহাদের সওয়াব পাবেন। (আল ফাসলু ফিল মিলালি ওয়ান নাহলি: ৪/১৬০)

এ কথাটি আমাদের ভাল করে মনে রাখতে হবে। উভয় সাহাবির মাঝে ইজতেহাদি মতানৈক্য ছিল। যার কারণে মুআবিয়া রাযি. ভুল করলেও তিনি একটি সওয়াবের অধিকারী হবেন। আলি রাযি. আহলে বায়ত হওয়ার কারণে মুআবিয়া রাযি. সহ্য না করতে পেরে বিরোধীতা করেছেন, এটি শিয়াদের বানানো মিথ্যা এবং বানোয়াট ইতিহাস।

রেজাখানিদের একটি দল আমার কাছে মনে হয় পুরোপুরি শিয়া হয়ে গেছে। বর্তমানে মুহাররাম আসলেই তারা কারবালার প্রসঙ্গ টেনে মুআবিয়া রাযি. কে তীব্র ভাষায় গালিগালাজ করে। এমনকি তাঁর ইসলামগ্রহণ নিয়েও সন্দেহ পোষণ করে!

মুআবিয়া রাযি. ইতিহাসের একটি স্পর্শকাতর পাঠ। এখানে এসে বহু মানুষের পদস্খলন হয়েছে। বিশেষত শিয়ারা তাঁর ব্যাপারে এত বেশি মিথ্যা অভিযোগের স্তুপ বানিয়েছে যে, আপনি সচেতন পাঠক না হলে যে কোন সময় বিভ্রান্তিতে পড়ে যাবেন। এজন্য ইতিহাস পড়ার আগে ইতিহাস থেকে কোন বর্ণনা গ্রহণযোগ্য হবে? সে মূলনীতি সম্পর্কে বিস্তর জানাশুনা থাকা চাই।

Loading