আরবী তারিখঃ এখন ৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরি মুতাবিক ১৯ এপ্রিল ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রোজ শুক্রবার, সময় ভোর ৫:৩৮ মিনিট
এলানঃ-
১৪৪৫-১৪৪৬ হিজরী, ২০২৪-২০২৫ ইং এর মাসিক সুন্নতী ইজতেমা সমূহ
* ২৫ এপ্রিল ২৪ ইং বৃহস্পতিবার মাগরিব-ইশা মাদরাসার সকলের জন্য
* ৩০-৩১ মে ২৪ ইং বৃহস্পতিবার ফজর-শুক্রবার মাগরিব পর্যন্ত সালেকীনদের জন্য
* ২৭ জুন ২৪ ইং বৃহস্পতিবার মাগরিব-ইশা মাদরাসার সকলের জন্য
* ২৫-২৬ জুলাই ২৪ ইং বৃহস্পতিবার ফজর-শুক্রবার মাগরিব পর্যন্ত সালেকীনদের জন্য
* ২৯ আগষ্ট ২৪ ইং বৃহস্পতিবার মাগরিব-ইশা মাদরাসার সকলের জন্য
* ২৬-২৭ সেপ্টেম্বর ২৪ ইং বৃহস্পতিবার ফজর-শুক্রবার মাগরিব পর্যন্ত সালেকীনদের জন্য
* ২৪ অক্টোবর ২৪ ইং বৃহস্পতিবার মাগরিব-ইশা মাদরাসার সকলের জন্য
* ২৮-২৯ নভেম্বর ২৪ ইং বৃহস্পতিবার ফজর-শুক্রবার মাগরিব পর্যন্ত সালেকীনদের জন্য
* ২৬ ডিসেম্বর ২৪ ইং বৃহস্পতিবার মাগরিব-ইশা মাদরাসার সকলের জন্য
* ৩০-৩১ জানুয়ারী ২৫ ইং বৃহস্পতিবার ফজর-শুক্রবার মাগরিব পর্যন্ত সালেকীনদের জন্য
* ২৭ ফেব্রুয়ারী ২৫ ইং বৃহস্পতিবার মাগরিব-ইশা মাদরাসার সকলের জন্য
* মার্চ ২৫ ইং এজতেমা সালেকীনদের জন্য

জামিআ রাহামানিয়ার প্রতিষ্ঠা, এখন পর্যন্ত যা হলো, দখল নিয়ে মিডিয়ার তরুণদের তথ্য বিভ্রাট

শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক (র.) আমাদের শ্রদ্ধেয় এবং মান্যবর ব্যক্তি ছিলেন। ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি মুহাম্মদপুর জামেয়া মুহাম্মদিয়া মাদরাসা থেকে বেরিয়ে মুফতি মনসুরুল হককে নিয়ে মুহাম্মদপুরের ঐতিহাসিক সাত মসজিদের পাশে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন জামিআ রহমানিয়া আরাবিয়া মাদরাসা। এই প্রতিষ্ঠান গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ সরকারের জয়েন্ট স্টক কোম্পানি কর্তৃক ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দের ১০ অক্টোবর নিবন্ধনপ্রাপ্ত হয়।
এই মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতালগ্নে যখন শায়খুল হাদিস তাঁর প্রিয় ছাত্র মুফতি মনসুরুল হককে সাথে নিয়ে মাদরাসার জন্য জায়গা খুঁজছিলেন তখন একপর্যায়ে তারা যোগাযোগ করেন শায়খুল হাদিস আল্লামা নুর উদ্দিন গহরপুরী (র.)-এর সাথে। অবশেষে শায়খে গহরপুরী (র.)-এর অনুরোধে ১২ নভেম্বর ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দে আলী এন্ড নুর রিয়েল এস্টেটের সত্ত্বাধিকারী দুই ভাই হাজী মুহাম্মদ আলী ও হাজী নুর হুসাইন সাত মসজিদের পাশে আলী এন্ড নুর রিয়েল এস্টেটের মধ্যে ৩৭৭১/৮৮ দলিলমূলে ১০ কাঠা জমি এবং ৬ ডিসেম্বর ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দে ৩২০০/৯২ দলিল মূলে আরও ৬ কাটা জমি মাদরাসার নামে ওয়াকফ করে দিলেন। ওয়াকফ রেজিস্টারী নং ১৯৫৮৮। সেই সময় জমিতে পাঁচতলা ভবন নির্মিত হয়। প্রতিষ্ঠালগ্নে মাদরাসা পরিচালনার জন্য যে কমিটি গঠিত হয়, এর সভাপতি ছিলেন তেজগাওয়ের বিশিষ্ট ব্যবসায়ি ইন্জিনিয়ার মুহাম্মদ আব্দুল মালিক। তিনি সাংবিধানিক নিয়মে ওয়াকফের মুতাওয়াল্লিও নির্বাচিত হন। উল্লেখ্য ইন্জিনিয়ার মুহাম্মদ আব্দুল মালিক নুরানী ওয়াকফ এস্টেটেরও মুতাওয়াল্লি ছিলেন। মাদরাসার প্রতিষ্ঠাকালিন প্রিন্সিপাল ছিলেন মুফাস্সিরে কোরআন মাওলানা আব্দুল গাফ্ফার (র.)। ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দের ১৫ জুন কমিটির ৩১তম অধিবেশনে অসুস্থতার কারণে তাঁকে অভ্যাহতি দিয়ে প্রিন্সিপাল করা হয় মাওলানা আলী আসগরকে। তখনও শায়খুলহাদিস আল্লামা আজিজুল হক (র.) জামিআ রহমানিয়ার শায়খুলহাদিস হিসাবে সিনিয়র শিক্ষকের মর্যাদায়। ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে ১১ তারিখে কমিটির ৪৯ নং অধিবেশনে মাওলানা আলী আসগর নিজ দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করলে শায়খুলহাদিস আল্লামা আজীজুল হক (র.) প্রিন্সিপাল নিযুক্ত হলেন।
প্রতিষ্ঠালগ্নে কথা ছিলো মাদরাসা সম্পূর্ণ রাজনীতিমুক্ত থাকবে। কিন্তু দেখাগেলো ছাত্রদেরকে একটি রাজনৈতিক দলের মিটিং, মিছিল, লং মার্চ ও রোড মার্চে নিয়ে পড়ালেখার অনেক ক্ষতি করা হচ্ছে। ছাত্ররা মাঝেমধ্যে গ্রেফতারও হয়। একপর্যায়ে মাদরাসা পরিচালনা কমিটি এসব ব্যাপারে অবগত হয়ে ভবিষ্যতের জন্য প্রিন্সিপালকে সতর্ক করেন। কিন্তু তা কার্যকর হলো না, অবশেষে ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দের ১লা আগষ্ট কমিটির ৮৯ নং অধিবেশনে শায়খুলহাদিস আল্লামা আজিজুল হক (র.) স্বেচ্ছায় প্রিন্সিপালের পদ থেকে পদত্যাগ করেন এবং ওয়াদা করেন মাদরাসার শিক্ষক ও মুরুব্বি হিসাবে দায়িত্ব পালন করবেন। অতপর মাওলানা বাহাউদ্দীন অস্থায়ী প্রিন্সিপাল নিয়োগ হন। এরপর শুরু হয় শায়খুলহাদিসের সাথে মাদরাসা কর্তৃপক্ষের শিতল সংঘাত এবং কিছুটা বিশৃঙ্খলা। আভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলার নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারায়১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দের ১৭ নভেম্বর কমিটির ৯২ নং অধিবেশনে মাওলানা বাহাউদ্দীনকে অস্থায়ী প্রিন্সিপালের দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দেয়া হয়। নতুন অস্থায়ী প্রিন্সিপাল নিয়োগ হলেন মাওলানা হিফজুর রহমান। মাদরাসার শিক্ষা কার্যক্রম যথারীতি চলতে থাকে। ২০০০ খ্রিস্টাব্দের ৬ নভেম্বও মোতাবেক ২৮ শে রমযান ১৪২০ হিজরি আল্লামা আজীজুল হক (র.) মুহাম্মাদপুর সাত মসজিদে আসেন এবং মসজিদে ইতিকাফরত মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা হিফজুর রহমান, মুফতী মনসূরুল হক এবং পরিচালনা কমিটির কিছু সদস্যের সামনে পরিচালনা কমিটির বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে রমযানের পর নতুন বছর মাদরাসা খুললে ছাত্র শিক্ষকদের মজলিসে পরিচালনা পরিষদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেয়ার এবং পরিচালনা কমিটি ভেঙ্গে দেয়ার হুমকি দেন বলে মাদরাসার পরিচালনা কমিটি দাবী করেন। তারা সাথে তাও বলেন যে, অথচ তিনি এ ব্যাপারে সাংবিধানিক কোন অধিকার রাখেন না।
তাদের তথ্যানুসারে জানা যায়, এ ঘটনার প্রেক্ষিতে মাদরাসার পরিচালনা পরিষদ ২০০০ খ্রিস্টাব্দের ১১ জানুয়ারী একটি ৯৪ নং অধিবেশনের আহŸান করে বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শায়খুলহাদিসকে উপস্থিত হয়ে নিজের বক্তব্য উপস্থাপনের অনুরোধ করেন। কিন্তু তিনি আসেননি। পরে বিস্তারিত আলোচনার পর আল্লামা আজিজুল হক (র.)-কে পড়ানোসহ সার্বিক দায়িত্ব থেকে সাময়িকভাবে অবসর দেয়া হয়। যথারীতি মাদরাসার নতুন বছর শুরু হয় এবং পড়াশোনা চলতে থাকে। অতঃপর বেসরকারী মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড বেফাকের চেয়ারম্যান মাওলানা নুরুদ্দিন গওহরপুরী (র.) পরিচালনা কমিটির নিকট সুপারিশ করেন আল্লামা আজিজুল হক (র.)-কে অন্য কোন দায়িত্ব না দিয়ে শুধুমাত্র একটি ক্লাস নেয়ার অনুমতি প্রদান করতে। ২০০০ খ্রিস্টাব্দের ৫ ফেব্রæয়ারি কমিটির ৯৬ নং অধিবেশনে পরিচালনা পরিষদ আল্লামা আজিজুল হক (র.)-কে প্রতিদিন শুধুমাত্র একটি ক্লাস করার অনুমতি দেন। ক্লাস চলতে থাকে।
২০০০ খ্রিস্টাব্দের ৬ মে বিকালে ঘটেগেলো সেই লালাবাগের কাহিনী। শায়খুলহাদিসকে সামনে রেখে কয়েকশত উচ্ছৃঙ্খল লোক চলে আসেন মাদরাসা দখলে। পরিচালনা পরিষদের স্থায়ী সদস্যদের প্রতিবাদে তারা চলে যান। তখন শায়খুলহাদিস নূরুদ্দীন গওহরপুরী (র.) বিদেশ সফরে ছিলেন। বসুন্ধরা ইসলামী রিসার্চ সেন্টার-এর পরিচালক মাওলানা মুফতি আব্দুর রহমান, এবং যাত্রাবাড়ি মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা মাহমূদুল হাসান- এর মধ্যস্থতায় সাময়িকভাবে বিষয়টি শেষ হয়। কিন্তু ভিতরে ভিতরে সংঘাত চলতে থাকে। মাদরাসার কমিটির বক্তব্য অনুযায়ি ২০০০ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসের ১ লা তারিখ দিবাগত রাত তিনটায় একদল মানুষ লাঠি-সোটা এবং অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এসে মাদরাসা দখল করে নিলো। দখলের পর তারা পরিচালনা কমিটি বাতিল ঘোষণা করেন। তবে তারা নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে পারেননি কমিটি ও ছাত্রদের পদক্ষেপের কারণে। এ পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে পরিচালনা পরিষদ ২০০০ খ্রিস্টাব্দের ০২ জুলাই এক জরুরী অধিবেশনে মিলিত হন এবং উক্ত ১০০ নং অধিবেশনে মাদরাসার সুষ্ঠু পরিচালনা এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। যারমধ্যে শায়খুলহাদিস আল্লামা আজিজুল হককে চ‚ড়ান্ত অবসরের বিষয়টিও ছিলো। আরও ছিলো, অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দানকারী শায়খুলহাদিসের ছেলে মাওলানা মাহফুজুল হক, নাতি মাওলানা হাসান আহমাদ, শিক্ষক মাওলানা আশরাফুজ্জামানকে শিক্ষকতার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি এবং উচ্ছৃঙ্খল সকল ছাত্রকে মাদরাসা থেকে বহিষ্কার এবং আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ ইত্যাদি। এইদিন পরিচালনা কমিটির এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর জামি‘আ রাহমানিয়া পরিচালনার লক্ষ্যে জামিআর মজলিসে শুরা (উপদেষ্টা পরিষদ) সম্প্রসারণ করেন। এরমধ্যে ছিলেন; আল্লামা আহমদ শফি (র.), মুফতি মাওলানা আব্দুর রহমান (র.), শায়খুলহাদিস মাওলানা মাহমুদুল হাসান, শায়খুলহাদিস মাওলানা নূরুদ্দিন গওহরপুরী (র.), মাওলানা নূর হুসাইন কাসেমী (র.), হযরত মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস (ফরিদাবাদ মাদরাসা) সহ অন্যান্য আরও। তারা এ ব্যাপারে দু‘তিনবার বৈঠক করেন এবং সকল বিষয় বিস্তারিতভাবে অবগত হন। ২০০০ খ্রিস্টাব্দের ১৩ আগষ্ট বসুন্ধরা ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারে আল্লামা আজীজুল হক (র.)-সহ তাঁর লোকদের সাথে বৈঠক করে সকলকে একত্রে রাখার স্বার্থে আল্লামা আজীজুল হক (র.)-কে জামিআ রাহমানিয়ার খিদমতে যোগদানের জন্য আহবান জানান। জবাবে শায়খুল হাদিস জামিআ রাহমানিয়ায় না যাওয়ার সিদ্ধান্ত উপস্থাপন করেন এবং মজলিসে শুরার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। অতঃপর শায়খুলহাদিসকে নেতৃত্বে রেখে তাঁর ছেলে ও নাতিরা মোহাম্মদী হাউজিং -এ একটি ভাড়াকৃত বাড়িতে জামিআ রহমানিয়া নামে একটি মাদরাসা চালু করেন। এরপর জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং চারদলীয় বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসে। কর্তৃপক্ষের ভাষ্যমতে; চারদলীয় জোট ক্ষমতায় আসার অল্প কয়েক দিন পর অর্থাৎ ২০০১ খ্রিস্টাব্দের ৩ নভেম্বর সরকারী বাহিনী, নিজের দলের কর্মী, প্রায় তিনশত জামাত-শিবির কর্মী, এবং কিছু বিএনপি. কর্মীর সহযোগিতায় বিকেল তিনটা’র সময় মেইন গেটের তালা ভেঙে তারা মাদরাসা দখল করে নেয়। তখন তাদের কাছে ব্যাপক অস্ত্র ছিলো, তারা বোমাবাজি করে এবং ছাত্র-শিক্ষকদের মারধোর করে মাদরাসা থেকে বের করে দেন। তখন শায়খুল হাদিসের ছেলে-নাতি ও মারকাযুল ইসলামী’র চেয়ারম্যান মাওলানা শহিদুল ইসলাম প্রমূখ মাদরাসায় অবস্থান করতে থাকেন। ঘটনার মুহূর্তেও কমিটির লোকজন বহুবার থানায় যোগাযোগ করে কোন ফল পায়নি। এমন কি ঘটনার পরের রাতেও কমিটির লোকজন দীর্ঘ ৪/৫ ঘন্টা থানায় অপেক্ষা করার পর থানা কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেয় মামলা গ্রহণ করা হবে না। কমিটির লোকেরা স্থানীয় এম.পি’র সাথে যোগাযোগ করে বিষয়টি তদন্ত করে সুষ্ঠু বিচারের দাবী জানান। তারপরে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথেও কমিটির লোকজন সাক্ষাত করে ব্যর্থ হন। পরেরদিন শায়খুল হাদিসের স্বাক্ষরে দৈনিক ইনকিলাবের শেষ পাতায় প্রচার করা হয় যে, কমিটি মেয়াদ উর্ত্তীর্ণ হওয়ায় তা বিলুপ্ত করে একটি সাধারণ পরিষদ গঠন করা হলো। এতে বছিলার জনৈক আব্দুল মালেককে আহবায়ক বানিয়ে একটি আহবায়ক কমিটির ঘোষণা দেওয়া হয়। অথচ সংবিধান অনুযায়ি তেজগাঁও-এর ইন্জিনিয়ার আব্দুল মালিক হলেন মাদরাসার মুতাওয়াল্লি এবং সভাপতি। এ বিষয়ে মাদরাসা কমিটি থানায় মামলা করতে গেলে প্রথমত থানা তা গ্রহণ করেনি। পরিচালনা কমিটি এ ব্যাপারে ২০০১ খ্রিষ্টাব্দের ৭ নভেম্বর প্রেসক্লাবে একটি সাংবাদিক সম্মেলন করেন, যা ৮ তারিখের দৈনিক ইনকিলাব, প্রথম আলো, যুগান্তর, ইত্তেফাক এবং ৯ তারিখের দৈনিক জনকন্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। পরিশেষে থানা মামলা গ্রহণ করে। কিন্তু শায়খুলহাদিস সরকারের সাথে সম্পর্কিত থাকায় মামলার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে থাকে এবং বারবার এস আই বদলী করা হয়। সর্বশেষ এস আই কর্তৃক রিপোট পেশ করা হয়। এতে দখলের কথা স্বীকার করলেও স্বাক্ষীর অভাবে আসামীদের শনাক্ত করা সম্ভব হলো না। অবশ্য ভবিষ্যতে আসামীদের শনাক্ত করা সম্ভব হলে মোকাদ্দামাটি পুনর্জীবিত করা যাবে।’ এরপর মাদরাসা কমিটি কোর্টে এ ব্যাপারে একটি মামলা দায়ের করেন, যার নম্বার ৪১০/২০০১ এবং দখলদারদের কার্যক্রমের উপর ইনজাংশন প্রার্থনা করেন। আদালত প্রথম আদেশেই উক্ত আহŸায়ক কমিটির কার্যক্রমের উপর ইনজাংশন জারী করেন। পরবর্তীতে উক্ত মামলা প্রাথমিক আদালত রায় প্রদান করেন যে, ‘আহবায়ক কমিটিকে অবৈধ কমিটি বলা যায় না।’ মাদরাসা কমিটি উক্ত রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপীল করেন, যার নম্বার ৮৩৬/২০১১। উক্ত আপীলে দীর্ঘ শুনানীর পর হাইকোর্ট মাদরাসা পরিচালনা কমিটিকে বৈধ কমিটি এবং আহবায়ক কমিটি ও তাদের পরবর্তী সিদ্ধান্তসমূহ বাতিল ঘোষণা করে রায় দেয়। উক্ত রায়ের বিরুদ্ধে শায়খুলহাদিসের পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টে আপীল করা হলে কোর্ট তা খারিজ করে দেয়।
জামিআ রাহমানিয়া আরাবিয়া ওয়াক্ফ সম্পত্তির উপর অবস্থিত, যা সরকারী আইন অনুযায়ী বাংলাদেশ ওয়াক্ফ প্রশাসক কার্যালয় থেকে তালিকাভুক্ত করার নিয়ম। সে মতে কমিটির পক্ষ থেকে ১০ ফেব্রæয়ারী ২০০২ খ্রিস্টাব্দে তালিকাভুক্তির আবেদন করলে শায়খুলহাদিস আজিজুল হক (র.)-এর পক্ষ থেকে তাঁকে সভাপতি দাবী করে মুতাওয়াল্লী ঘোষণার আবেদন দাখিল করেন। ২১ জুলাই ২০০৭ খ্রিস্টাব্দে ওয়াক্ফ প্রশাসক বিস্তারিত তদন্ত সাপেক্ষে হাজী আহমদ ফজলুর রহমানকে মুতাওয়াল্লী ঘোষণা করে ওয়াকিফের ২১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিকে তালিকাভুক্তির ঘোষণা করেন, যার নিবন্ধন নং ১৯৫৮৮। এই সময় শায়খুলহাদিসের আবেদন বাতিল করে তাদেরকে ‘রাহমানিয়া ভবন’ থেকে উচ্ছেদ করার জন্য ডিসি ঢাকাকে পত্র প্রেরণ করেন, সে মতে ডিসি ঢাকা তাঁকে উচ্ছেদ করার আদেশ প্রদান করেন। পরে শায়খুলহাদিসের পক্ষ থেকে ওয়াক্ফ প্রশাসক-এর আদালতে হেরে যাওয়ার পর কমিটির তালিকাভুক্তির বিরুদ্ধে মাননীয় জেলা জজ বরাবর আপীল করেন। (মিস আপীল নং ৮৭/০৭)। জেলা জজ দীর্ঘ শুনানীর পর ২৫ অক্টোবর ২০০৭ খ্রিস্টাব্দে আপিল বাতিল ও নামঞ্জুর করে জেলা জজের আদেশ বহাল রাখেন। শায়খুলহাদিসের পক্ষ থেকে রায়ের ১ম অংশের বিরুদ্ধে সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে সিভিল রিভিশন ৪৫৩৭/০৭ দায়ের করলে আদালত ২১ নভেম্বর ২০০৭ খ্রিস্টাব্দে তা খারিজ ও বাতিল করে জেলা জজের আদেশ বহাল রাখে। এরপর শায়খুলহাদিসের পক্ষ থেকে জেলা জজ-এর চ‚ড়ান্ত রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে সিভিল রিভিশন ৫৭২২/০৭ দায়ের করেন, কিন্তু কমিটি মুভ করার পর তারা যখন দেখলেন যে, এ মামলায় তিনি নিশ্চিত হেরে যাবেন; তখন ০৭ আগষ্ট ২০০৮ খ্রিস্টাব্দে মামলাটি তুলে নিতে বাধ্য হোন। এরপরও তারা থেমে থাকেননি, জেলা জজ কর্তৃক তাদের আপিল খারিজ হওয়ার পর এর বিরুদ্ধে ১০ আগষ্ট ২০০৮ খ্রিস্টাব্দে সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট বিভাগে রীট (৬০৯৮/০৮) করেন এবং দীর্ঘ শুনানীর পর ২০ আগষ্ট ২০০৯ খ্রিস্টাব্দে বিচারপতি রীটটি খারিজ করে দেন এবং উচ্ছেদের অর্ডার বহাল রাখেন। রীট খারিজ হওয়ার পর ০১ সেপ্টেম্বর ২০০৯ খ্রিস্টাব্দে তারা সুপ্রিম কোর্টে (প.স.ঢ়) – র সিঙ্গেল বেঞ্চে আপীল করেন (মামলা নং ৬৮৪/০৯)। ১৫ সেপ্টেম্বর ২০০৯ খ্রিস্টাব্দে আপীলটি দোতরফা শুনানীর পর খারিজ করে দেন এবং উচ্ছেদ -এর অর্ডার বহাল রাখেন। এরপর তারা মাননীয় প্রধান বিচারপতিসহ চারজন বিজ্ঞ মহোদয়ের ফুল বেঞ্চে আপীল করেন (মামলা নং ১৬৬/২০১০ খ্রি.)। ০৯ মার্চ ২০১০ খ্রিস্টাব্দে তাও খারিজ হয়ে যায় এবং উচ্ছেদ অর্ডার বহাল থাকে। তবে বারবার উচ্ছেদের অর্ডার দেয়ার পরও অজ্ঞাত কারণে তা বাস্তবায়িত হয়নি। সর্বশেষ আদালত সাবেক রায়গুলোর ভিত্তিতে জুন ২০২১ খ্রিস্টাব্দে আবার নির্দেশ দেয় অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের জন্য। ২০ বছর পর এই নির্দেশ বাস্তবায়ন হলো ১৫ জুলাই ২০২১ খ্রিস্টাব্দে।

স্বয়ং শায়খুল হাদিস বলেছিলেন, শায়খুল হাদিস কোনদিন মনেপ্রাণে এই সব মামলা-মোকদ্দমার পক্ষে ছিলেন না। তিনি ইংল্যান্ড সফরে আমাকে বলেছিলেন, দেশে এসে মুফতি মনসুর সাহেবের সাথে তাঁকে নিয়ে বসতে। কিন্তু শর্ত ছিলো তাঁর সন্তানরা জানতে পারবে না। আমি তাঁর সন্তানদের চোখের আড়ালে এমন কাজ ঢাকায় করতে পারবো না জেনেই আর অগ্রসর হইনি। তবে শায়খুলহাদিস নিজেও জানতেন মনসুর সাহেব হুজুর সত্যের পক্ষে। কিন্তু বয়স হলে মানুষ যে অসহায় হয় সেখান থেকে কিছু করা যায় না। আল্লাহপাক শায়খুলহাদিসকে ক্ষমা করুন এবং তাঁর সন্তানসহ আমাদের সবাইকে হেদায়ত দান করুন ।

ইতিমধ্যে উপরোক্ত বিষয় সমূহ না জানার কারণে ফেসবুক বা সোশ্যাল মিডিয়া উত্তাল হয়ে আছে কিছু তরুণ উন্মাদ যুবকদের কারণে, তারা ঐক্যের নামে বিভিন্ন মুরুব্বীদের বদনাম করে যাচ্ছেন, শেষ ভাবে মুফতি মনসুরুল হক সাহেবের। আহমাদুল্লাহ আশরাফ নামের এক যুবক আলেমকে এসংক্রান্ত ফিতনা ছরাতে দেখা গেছে, তাকে ইতিপূর্বেও বিভিন্ন মুরুব্বিদের নিয়ে কটুক্তি ছরাতে দেখা গেছে, আল্লাহ তাআলা সবাইকে মাফ করুন, হেদায়েত দান করুন, ফেতনা থেকে হেফাজত করুন, আমীন।

Loading