আরবী তারিখঃ এখন ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরি মুতাবিক ১৯ এপ্রিল ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রোজ শুক্রবার, সময় রাত ১০:২৯ মিনিট
এলানঃ-
১৪৪৫-১৪৪৬ হিজরী, ২০২৪-২০২৫ ইং এর মাসিক সুন্নতী ইজতেমা সমূহ
* ২৫ এপ্রিল ২৪ ইং বৃহস্পতিবার মাগরিব-ইশা মাদরাসার সকলের জন্য
* ৩০-৩১ মে ২৪ ইং বৃহস্পতিবার ফজর-শুক্রবার মাগরিব পর্যন্ত সালেকীনদের জন্য
* ২৭ জুন ২৪ ইং বৃহস্পতিবার মাগরিব-ইশা মাদরাসার সকলের জন্য
* ২৫-২৬ জুলাই ২৪ ইং বৃহস্পতিবার ফজর-শুক্রবার মাগরিব পর্যন্ত সালেকীনদের জন্য
* ২৯ আগষ্ট ২৪ ইং বৃহস্পতিবার মাগরিব-ইশা মাদরাসার সকলের জন্য
* ২৬-২৭ সেপ্টেম্বর ২৪ ইং বৃহস্পতিবার ফজর-শুক্রবার মাগরিব পর্যন্ত সালেকীনদের জন্য
* ২৪ অক্টোবর ২৪ ইং বৃহস্পতিবার মাগরিব-ইশা মাদরাসার সকলের জন্য
* ২৮-২৯ নভেম্বর ২৪ ইং বৃহস্পতিবার ফজর-শুক্রবার মাগরিব পর্যন্ত সালেকীনদের জন্য
* ২৬ ডিসেম্বর ২৪ ইং বৃহস্পতিবার মাগরিব-ইশা মাদরাসার সকলের জন্য
* ৩০-৩১ জানুয়ারী ২৫ ইং বৃহস্পতিবার ফজর-শুক্রবার মাগরিব পর্যন্ত সালেকীনদের জন্য
* ২৭ ফেব্রুয়ারী ২৫ ইং বৃহস্পতিবার মাগরিব-ইশা মাদরাসার সকলের জন্য
* মার্চ ২৫ ইং এজতেমা সালেকীনদের জন্য

আলেমদের ক্ষেত্রে ‘মাওলানা’ শব্দের ব্যবহার, -মাওলানা আঃ কাদির মাসুম

‘মাওলানা’ শব্দটি ‘মাওলা’ ও ‘না’ দুই আরবী শব্দের সমাস। ‘না’ অর্থ আমরা বা আমাদের। আর ‘মাওলা’ শব্দের প্রায় ৩০ টি অর্থ রয়েছে, যেমন: ১. প্রভু, ২. বন্ধু, ৩. সাহায্যকারী, ৪. মনিব, ৫. দাস, ৬. চাচাতো ভাই, ৭. প্রতিনিধি, ৮. অভিভাবক, ৯. নিকটবর্তী, ১০. আত্মীয়, ১১. নেতা, ১২. গুরু, ১৩. প্রতিপালক, ১৪. সর্দার, ১৫. প্রেমিক, ১৬. প্রতিবেশী, ১৭. আনুগত্য, ১৮. প্রার্থনা, ১৯. নিরবতা, ২০. ইবাদত ২১. দন্ডায়মান ইত্যাদি।(সূত্র: ইমাম ইবনুল কায়্যিমকৃত ‘বাদায়িউল ফাওয়ায়িদ’৪/৯৭৮, থানভীকৃত ‘ফাতাওয়ায়ে আশরাফিয়া’ পৃ. ৭০, বাবুল ফিকহ, ফতওয়া নং-৩১, লাখনভীকৃত ‘উমদাতুর রিআয়াহ’ ২/৩২৮, লিছানুল আরব ৮/৪৫২, আসসিহাহ পৃ. ৮২০, আলকামূসুল মুহীত ২/৬২৩, আলমিসবাহুলমুনীর পৃ. ৫৯১, মাকায়িছুল্লুগাহ ২/৫৪৯)কুরআন ও হাদিসের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন অর্থে ‘মাওলা’ শব্দটি ব্যবহার হয়েছে। বিভিন্ন বস্তুর উপর এ শব্দটিকে প্রয়োগ করা হয়েছে। এমনকি সুরা হাদিদে জাহান্নামকেও ‘মাওলা’ বলা হয়েছে। এরশাদ হচ্ছে-ﻣﺄﻭﻯﻜﻢ ﺍﻟﻨﺎﺭ ﻫﻰ ﻣﻮﻻﻛﻢ ﻭ ﺑﺌﺲ ﺍﻟﻤﺼﻴﺮঅর্থাৎ তোমাদের ঠিকানা হল জাহান্নাম, এটাই তোমাদের মাওলা (চূড়ান্ত আবাস)। কতই না নিকৃষ্টস্থল এটা। (সুরা হাদিদ: ১৫)আমাদের কিছু সংখ্যক লামাযহাবী ভাইয়েরা সঠিক অনুসন্ধান না করে বাহ্যিক দৃষ্টিতে বলে ফেলেন যে, ‘মাওলানা’ এটি আল্লাহর সাথে সুনির্দিষ্ট। যেমন কুরআনে এসেছে- ” আনতা মাওলানা ফানছুরনা” (সুরা বাকারা: ২৮৬), এই আয়াতে ‘মাওলানা’ বলে আল্লাহকে সম্বোধন করা হয়েছে। বুঝা গেল এটি আল্লাহর বিশেষ্য। সুতরাং কোন মানুষকে ‘মাওলানা’ বলে সম্বোধন বা বিশেষিত করা জায়েয নয়; বরং শিরক।আমাদের ভাইদের এ বক্তব্যটি ঠিক নয়। কেননা আল্লাহর ক্ষেত্রে ‘মাওলানা’ শব্দকে যে অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে আলেমদের ক্ষেত্রে সে অর্থে ব্যবহার করা হয়নি। আল্লাহর ক্ষেত্রে ‘মাওলানা’ অর্থ হল আমাদের প্রভু আর আলেমদের ক্ষেত্রে তার অর্থ হচ্ছে আমাদের (ধর্মীয়) অভিভাবক।(সূত্র:কিতাবুল ফাতাওয়া ১/২২৮, কিতাবুল ইলম, ফতওয়া নং-১৫৩ খালেদ সাইফুল্লাহ রহমানী, আপকে মাসায়েল আওর উনকা হল ২/৬৩৮ মুতাফাররিক মাসায়েল)ধরুন ‘ভালোবাসা’ শব্দটি। আপনি বললেন- ‘আমি আমার বোনকে ভালোবাসি’ এবং বললেন- ‘আমি আমার স্ত্রীকেও ভালোবাসি।’ বলুনতো, স্ত্রীর ভালোবাসা ও বোনের ভালোবাসা উভয়ের মর্ম কি এক? কখনও না। উভয়ের মর্ম ও অর্থের মাঝে আকাশ-পাতাল তফাৎ; স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা জৈবিকপ্রসূত আর বোনের প্রতি ভালোবাসা রক্তের বন্ধনের আকর্ষণপ্রসূত। তো ‘ভালোবাসা’ শব্দটা যেভাবে দুই ক্ষেত্রে দুই অর্থে দুই মর্মে, অনুরূপভাবে ‘মাওলানা’ শব্দটাও দুই ক্ষেত্রে দুই অর্থে ভিন্ন ভিন্ন মর্মে।মোটকথা, আলেমদের ক্ষেত্রে ‘মাওলানা’ শব্দের অর্থ হচ্ছে ‘আমাদের ধর্মীয় নেতা বা অভিভাবক।’ আল্লাহর ক্ষেত্রে অর্থ হচ্ছে ‘আমাদের প্রভু বা মালিক’।যদি শুধু শব্দগত রূপ মিল থাকাতেই কোন শব্দের ব্যবহার ও প্রয়োগ নিষিদ্ধ হয়ে যায়, তাহলে আমি বলবো আমাদেরকে ‘মুমিন’ নামে আখ্যায়িত করা বা সম্বোধন করাও নাজায়েজ। কারণ আল্লাহ তাআলার ৯৯ নামসমুহের একটি হচ্ছে ‘মুমিন’। অথচ কুরআন ও হাদিসে জাগায় জাগায় মুসলমানদেরকে ‘মুমিন’ বলে বিশেষিত করা হয়েছে। তো এখানেও কিন্তু বান্দার ক্ষেত্রে ‘মুমিন’ শব্দের এক অর্থ আর আল্লাহর ক্ষেত্রে আরেক অর্থ, একইভাবে ‘মাওলানা’ শব্দটার বেলায়ও ব্যাপারটা তাই।ইতিহাস তালাশ করলে আমরা দেখতে পাই যে, সর্বশ্রেষ্ঠ তাবেয়ী হযরত হাসান বসরীকে লোকেরা ‘মাওলানা’ বলে ডাকতো। (সূত্র: তাহযীবুততাহযীব ২/২৬৩, আলবেদায়া ওয়ান্নেহায়া ৬/২৬৬)হযরত আলী রাযি. তার পুত্র হযরত হাসান রাযি.’র উস্তাদ আসলে হাসান রাযি.কে বলেছিলেন-ﻗﻢ ﺑﻴﻦ ﻳﺪﻯ ﻣﻮﻻﻙঅর্থাৎ ‘তুমি তোমার মাওলার সামনে দাড়াও।'(সূত্র: ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী ৫/৪৩৫)ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী’র ভাষ্য এরুপ-.ﻭ ﻟﻮ ﻗﺎﻝ ﻷﺳﺘﺎﺫﻩ ‘ ﻣﻮﻻﻧﺎ ‘ ﻻ ﺑﺄﺱ ﺑﻪ ﻭ ﻗﺪ ﻗﺎﻝ ﻋﻠﻰ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻻﺑﻨﻪ ﺍﻟﺤﺴﻦ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ : ‘ ﻗﻢ ﺑﻴﻦ ﻳﺪﻯ ﻣﻮﻻﻙ ‘ ، ﻋﻨﻰ ﺃﺳﺘﺎﺫﻩ ﻭ ﻛﺬﺍ ﻻ ﺑﺄﺱ ﺑﻪ ﺇﺫﺍ ﻗﺎﻝ ﻟﻤﻦ ﻫﻮ ﺃﻓﻀﻞ ﻣﻨﻪ‏( ﺍﻟﻔﺘﺎﻭﻯ ﺍﻟﻌﺎﻟﻤﻐﻴﺮﻳﺔ ٤٣٥ / ٥ ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﻜﺮﺍﻫﻴﺔ، ﺍﻟﺒﺎﺏ ﺍﻟﺜﻼﺛﻮﻥ ﻓﻰ ﺍﻟﻤﺘﻔﺮﻗﺎﺕ )তাছাড়া আরেকটা লক্ষণীয় বিষয় যে, উর্দূ ভাষায় ‘মাওলানা’ শব্দটি উস্তাদ ও আলেমে দীন অর্থেও ব্যবহৃত হয়। (দেখুন রহমাতুল্লাহ জালালাবাদী রহ.কৃত আলহাদিয়্যাতুল মারযিয়্যা পৃ. ১১৭ , ফিরুজুল্লুগাত পৃ. ৬৬৪)আমরা যেহেতু এই শব্দের ব্যবহার উর্দুভাষীদের থেকে পেয়েছি, তাই মাওলানা দ্বারা এই দুই অর্থই উদ্দেশ্য। আর হযরত আলীর উক্তি থেকেও এই কথাই বুঝা যায়।আরেকটু আগালে জানতে পাই, ‘মাওলানা’ শব্দটি মূলত উর্দূতে তুর্কীব্যবহার থেকে এসেছে। তুর্কীরা আল্লামা রুমীকে ‘মাওলানা’ বলে স্মরণ করে। তুর্কী অভিধানে যে আলেম শরীয়তের প্রাজ্ঞ জ্ঞান ধারনের সাথে সাথে আরিফ বিল্লাহ-ও হন এবং তাঁর প্রচুর ভক্ত-অনুসারী থাকে, তাকে ‘মাওলানা’ বলে ডাকা হয়। (সূত্র: সাওয়ানেহে মাওলানায়ে রুম, জালাল গুন্দার, পৃ.১৭৫)তবে আমাদের উপমহাদেশে এটি এখন পরিভাষা। মুফতী সালমান মনসূরপুরী লিখেন- বর্তমানে ‘মাওলানা’ শব্দটি পরিভাষায় পরিণত হয়ে গেছে। যে ব্যক্তি কোন মাদরাসায় নির্দিষ্ট নেসাব সম্পন্ন করে তাকে ‘মাওলানা’ নামে অভিহিত করা হয়। (সূত্র: কিতাবুন নাওয়াযিল ১২/৪২২)উপরিউক্ত আলোচনা থেকে সুস্পষ্ট যে, ‘মাওলানা’ শব্দটি গঠনগত দিক যদিও আরবী এবং আরবী ভাষায় সম্মানিত ব্যক্তিবর্গের বেলায় ব্যবহার হত। কিন্তু আমাদের কাছে এসেছে তুর্কী ব্যবহার থেকে। সেখান থেকে উপমহাদেশে। উপমহাদেশে এক সময় তুর্কীঅর্থে ছিল, তবে বর্তমানে এটি পরিভাষা। আর পরিভাষার ব্যবহারে অাভিধানিক নয়, সজ্ঞায়িত অর্থ বিবেচিত হয়। অতএব ‘মাওলানা’ শব্দের ব্যবহারকে শিরক বা নাজায়েয বলার কোন যৌক্তিকতা নেই।

Loading