আরবী তারিখঃ এখন ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি মুতাবিক, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রোজ বুধবার, সময় রাত ৯:২৮ মিনিট

সম্মিলিত গুনাহ থেকে বাচতে হবে! -মাওলানা ইসমাইল সিরাজী দা. বা.

نحمده و نصلي علي رسوله الكريم اما بعد

বর্তমানে প্রকাশ্য গুনাহ বড় ব্যাপক হয়ে গেছে, পাশেই মসজিদ-মাদ্রাসা, কিন্তু তার পাশেই গুনাহের কাজ চলছে, কিন্ত এগুলো বন্ধ করার তরিকা কি হবে? আমাদের দাদা শাইখ মুহিউস সুন্নাহ শাহ আবরারুল হক রহঃ বলেন, আমর বিল মারুফ, বা সৎ কাজের আদেশ এর জন্য সকলের পক্ষ থেকে যে পরিমাণ মেহনত করা হয়, যেই পরিমাণ মেহনত করা হচ্ছে, নাহি আনিল মুনকার বা অসৎ কাজ থেকে মানুষকে বিরত রাখার জন্য সেই পরিমাণ মেহনত করা হচ্ছে না, ভালো কাজ করার প্রতি উৎসাহ প্রদানের জন্য যেই পরিমাণ মেহনত করা হয়, খারাপ কাজ থেকে দূরে রাখার জন্যও জামাআত গত ভাবে হলেও ওই পরিমাণ মেহনত হওয়া চাই, আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে আমর বিল মারুফ এবং নাহি আনিল মুনকার উভয় কাজের  জন্য ইখলাসের সাথে, সমানভাবে মেহনত করার তৌফিক দান করুন, আমিন৷

আরে ভাই, দুনিয়ার বুকে এখনো এমন এমন মানুষ জীবিত আছেন যারা কুফর, শিরক, মুনাফেকি এবং সকল প্রকার গুনাহ ও পথভ্রষ্টতার কাজকে অন্তর থেকে ঘৃণা করে৷ কিন্তু পরিবেশ তাকে গুনাহ থেকে বাঁচতে দেয় না৷ তখন তার মনটি খারাপ হয়ে যায়, অনেকেই চেষ্টা করে নিজ পরিবার, নিজ সমাজ যদি গুনাহমুক্ত হত কতই না ভাল হত৷ কিন্তু দেখা যায় একজনের জন্য, অথবা কয়েক জনের জন্য অধিকাংশ মানুষ আমরা গুনাহে লিপ্ত হচ্ছি৷ একজন গুনাহ করছে গোপনে, গোপনে গুনাহ হয়ে যাওয়ার অর্থ হলো যদি সে গুনাহ প্রকাশ না হয় মানুষের সামনে, তাহলে আল্লাহ অবশ্যই মাফ করবেন ইনশাআল্লাহ৷ আর যদি প্রকাশ হয়ে গেল তাহলে এটি একটি দুনিয়াবী শাস্তি গুনাহের জন্য৷ একাকিত্বের একক গুনাহ আর সম্মিলিত গুনাহ অনেক পার্থোক্য৷ আজকে সমাজের যুবক ছেলেরা সম্মিলিত গুনাহে লিপ্ত, নেশা করছে তো বন্ধু-বান্ধব মিলে নেশা করছে, গান বাজাতে মন চাচ্ছে এলাকার মাঠে ময়দানে, অথবা রাস্তার পাশে, বা কোন ঘরে, খুব জোরে আওয়াজে বক্সে গান বাজাচ্ছে৷ এর দ্বারা এক তো নিজে গুনাহগার হচ্ছে আবার অন্যকেও গুনাহগার বানাচ্ছে৷ হয়তোবা সে তওবা করে পাক হয়ে গেল গুনাহ থেকে, কিন্তু তার দ্বারা আরো হাজার খানেক মানুষের যে গুনাহ হলো সেটার তওবা কে করবে? কেয়ামতের দিন তার তওবা কবুল হওয়ায় জান্নাতে যাওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করবে, কিন্তু অন্যদের ওই গুনাহের কারণে হয়তো বা তাকে জান্নাতের দরজা থেকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে৷ আমার এক ঘনিষ্ঠ দোস্ত আমাকে ফোন করেছে, বললাম কেমন আছো? সে বলল আলহামদুলিল্লাহ৷ আসলে তার কথাবার্তা এবং আখলাক আমার কাছে খুবই ভালো লাগে৷ তার কারণ আমি তাকে নিজের মতো করে শাসন করতে পারি এবং তার ইসলাহ ও সংশোধন হওয়ারও মন মানসিকতা রয়েছে৷ যাই হোক সে ফোন করে বললো তার মন একটু খারাপ! বললাম কি হয়েছে? সে বলল আমার বাসার টিভি রিমোর্ট আমি ভেঙে ফেলেছি, এতে আমার বাবা টিভি দেখতে না পেরে আমার উপর মন খারাপ করেছেন এজন্য একটু মন খারাপ৷ একটু চিন্তা করে দেখুন ছেলেটি কোন গর্হিত কাজ করেনি বরং অনেক বড় সওয়াবের কাজ করেছে, কিন্তু এজন্য তার মহামান্য পিতা মন খারাপ করেছেন৷ অথচ তার ওপর অতিরিক্ত খুশি হওয়ারই কথা ছিল৷ এরকমভাবে সমাজের মধ্যে অভিভাবকরা শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে নিজ সন্তানগণ শেষ হয়ে যাচ্ছে৷ অভিভাবকরা যদি নিজ সন্তানদের সহিহ তরবিয়ত ও আত্মশুদ্ধির চিন্তা না করে, তাহলে এমন এক সময় আসবে তাদের কাছে ইসলামী রীতিনীতিকে অপরিচিত মনে হবে এবং দাজ্জালিয়্যাত এবং ডিজিটাল মন মানসিকতা লালন করার কারণে ঈমানহারা হয়ে দুনিয়া থেকে যেতে হবে৷ আমি তাকে বললাম তুমি বেশী বেশী আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া করতে থাকো, ধৈর্য্য ধারণ কর, মনে রাখবে : ভালো কাজ করতে গেলে অবশ্যই নিজের ওপর বিভিন্ন মুসিবত আসতে থাকবে, কত মানুষের কত কথা শুনতে হবে, অনেকের শত্রু হয়ে যেতে হবে, কিন্তু না৷ হিকমতের সাথে ধৈর্যের সাথে এগিয়ে যেতে হবে৷ আমার শাইখ শাহ ফকিহুল মিল্লাত মুফতি আবদুর রহমান রহঃ বলতেন  : ভাই হক কথা বলতে থাকো আদবের সাথে নম্রতার সাথে৷ আমার বর্তমান মুরুব্বী ও শাইখ হজরতওয়ালা শাহ মুফতি সুহাইল দাঃ বাঃ বলেন : দুনিয়ার মধ্যে চলতে গেলে তোমাকে প্রকাশ্যে দুনিয়াদার দেখালেও কলব এবং দিল যেন আল্লাহ তা’আলার জিকিরেই লেগে থাকে, অর্থাৎ বাহ্যিক দেখতে তুমি দুনিয়াবি কাজের মধ্যে লিপ্ত আছো, এটা তুমিও জানো, কিন্তু তোমার কলব আল্লাহ তাআলার ধ্যান খেয়াল থেকে কখনোই বিচ্যুত হবে না৷ এজন্য ভাই, বর্তমান প্রকাশ্য গুনাহময় এই পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে হলে খুব বেশি পরিমাণ জিকিরের বিকল্প নেই৷ আমার মন মানসিকতা যেন আল্লাহ তাআলার রেজামন্দি হাসিল করতে সক্ষম হয় এজন্য মন মানসিকতা তো অবশ্যই ঠিক রাখতে হবে৷ সকল প্রকার গুনাহ থেকে দূরে থাকার জন্য অবশ্যই চেষ্টা করতে হবে এবং বেশি বেশি আল্লাহ তায়ালার জিকিরে মশগুল থাকতে হবে৷ তার কারণ : আল্লাহ তাআলার জিকির ছাড়া গুনাহের কাজ থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়, যে কলবে জিকির আছে সে কলবে শয়তান নেই৷ আর এই জিকিরের মন মানসিকতা তৈরি করতে হলে কোন আল্লাহ ওয়ালার সহবতে বসতে হবে৷ আল্লাহ ওয়ালার পরামর্শে চলতে হবে৷ যেমনটি হযরাত সাহাবায়ে কেরাম রাঃগণ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরামর্শে চলতেন৷ তেমনি ভাবে জীবনের সার্বিক ক্ষেত্রে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত সমূহের পাবন্দি হতে হবে৷ তবেই একটি অভাবনীয় সুন্দর জীবন পাওয়া যাবে৷ আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে কথাগুলো বুঝা এবং আমল করার তৌফিক দান করুন, আমিন৷

Loading