হারদুঈ হযরত আল্লামা আবরারুল হক হক্কী রাহিমাহুল্লাহু তাআলা বলেন, যে সময় হযরত থানবী রাহিমাহুল্লাহু তাআলা চিকিৎসার জন্যে লাখনৌ অবস্থান করছিলেন, তখন আমার খুজলি-পাঁচড়া হওয়ায় ছুটি নিয়েছিলাম৷ কিন্তু আমি হারদুঈ না এসে লাখনৌ চলে যাই৷আমার পিতাও গিয়েছিলেন৷ ঐসময়ে একজন যুবক৷ যার বয়স চল্লিশ হবে৷ হযরত থানবী রাহিমাহুল্লাহু তাআলার কাছে কিছু বিষয় জানার অনুমতি চাইলো৷ তখন থানবী রাহিমাহুল্লাহু তাআলার বয়স ছিলো আশি বছর৷ হযরত থানবী রাহিমাহুল্লাহু তাআলা বললেন, ঠিক আছে প্রশ্ন করো৷ যদি উত্তর জানা থাকে, তাহলে বলবো৷ অন্যথায় যে পারবে এমন বড়ো কারো ঠিকানা বলে দিবো৷ তখন যুবক বললো- খানা খাওয়ার শেষের যে দুআটি, أَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْ أَطْعَمَنَا وَ سَقَانَا وَ جَعَلَنَا مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ – প্রশংসা আল্লাহ তাআলার, যিনি আমাদেরকে খাওয়ালেন৷ পান করালেন৷ এবং আমাদেরকে মুসলমান বানালেন৷এই দুআর প্রথম দুইটি অংশ أَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْ أَطْعَمَنَا وَ سَقَانَا তো খাবার বিষয়ের সাথে মিল আছে বুঝা যায়৷ কিন্তু দুআর শেষ অংশটিوَ جَعَلَنَا مِنَ الْمُسْلِمِيْن তো খাবারের আলোচ্য বিষয়ের সাথে মিল আছে বুঝা যায় না৷ হযরত থানবী রাহিমাহুল্লাহু তাআলা যুবকের এমন অসাধারণ প্রশ্ন শুনে খুশি হয়ে বললেন- এমন প্রশ্ন তো আলেমদের থেকে হওয়া উচিত ছিলো৷ অনেক চমৎকার প্রশ্ন৷হযরত থানবী রাহিমাহুল্লাহু তাআলা যুবকের প্রশ্নের উত্তরে বললেন- নিয়ামতসমূহ দুই প্রকার৷ এমন নিয়ামত যা সর্বদাই থাকে৷ যেমন ঈমান ও ইসলাম দুটি নিয়ামত৷ এই দুটি নিয়ামত এমন, যা মানুষের সাথে সর্বদাই থাকে৷এমন নিয়ামত যার মধ্যে বিচ্ছিন্নতা আসে৷ যেমন খাওয়া ও পান করা দুটি নিয়ামত৷ এই দুটি নিয়ামত এমন, যা মানুষের সাথে সর্বদাই থাকে না৷ বরং প্রয়োজনবশত মানুষ এসব নিয়ামত দ্বারা উপকৃত হয়৷তারপর বললেন, মানুষের অবস্থা হলো- যে সমস্ত নিয়ামত সর্বদাই থাকে- সেই নিয়ামতের অনুভূতি মানুষের মধ্যে থাকে না৷ অনেক সময় মানুষ সেসব নিয়ামতের কথাই ভুলে যায়৷ এই কারণে মানুষ এসব নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা আদায়ের প্রতি খেয়ালও করেনা৷ সুস্থ ও নিরাপদে আছে মনে করে কৃতজ্ঞতাস্বরুপ আজ শুকরিয়া আদায় করেছে, এমন কয়জন পাওয়া যাবে?কিন্তু খানাপিনার নিয়ামতের বিষয়টি ভিন্ন৷ এগুলো সময়ে সময়ে আসার কারণে নিয়ামতের বিষয়টি মাথায় থাকে এবং সেজন্যে মানুষ শুকরিয়াও আদায় করে ৷সুতরাং যে নিয়ামতগুলো সময়ে সময়ে আসে, সেগুলোর শুকরিয়া আদায়ের সাথে সাথে এমন নিয়ামতেরও শুকরিয়া আদায় করার বিষয়টি আল্লাহ তাআলা যুক্ত করে দিয়েছেন, যে নিয়ামতগুলো স্থায়ী৷ যাতে এসব নিয়ামতের অনুভূতিও মানুষের অন্তরে থাকে এবং এগুলোরও কৃতজ্ঞতা আদায় হয়ে যায়৷ যেমন খানার শেষের দুআতে যুক্ত করে দেয়া হয়েছে এভাবে যে, হে আল্লাহ তাআলা! আপনি আমাদেরকে খানা খাওয়ালেন৷ পান করালেন৷ এবং ঈমানের নিয়ামত দ্বারাও মর্যাদাশীল করেছেন৷এই কারণেই খানার শেষের দুআর সাথে وَ جَعَلَنَا مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ অংশটি মিলিয়ে দেয়া হয়েছে৷ যাতেকরে মানুষ স্থায়ী নিয়ামত ঈমান ও ইসলামকে ভুলে না যায়৷ বরং এগুলোরও শোকরিয়া আদায় করে৷