نحمدہ و نصلي علي رسوله الکریم اما بعد
এই দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী, সবকিছুর একটি শেষ হয়েছে, তেমনি আমরাও একদিন শেষ হয়ে যাবো৷ আমাদের সকলেরই একদিন মৃত্য হয়ে যাবে৷ কিন্তু ইসলাম এমন একটি ধর্ম যেখানে মৃত্যুর সময়েও রয়েছে সঠিক দিক নির্দেশনা, মৃত্যুর সময়ও রয়েছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণীয় কর্মনীতি, তাই নিচে মৃত্যুশয্যায় শায়িত ব্যক্তির বা মৃত্যু হয়ে যাওয়ার পর সুন্নত সমূহ বর্ণনা করা হলো :
১. মৃত্যুশয্যায় শায়িত ব্যক্তির চেহারা কিবলামুখী করে দেয়া এবং তার সামনে বসে তাকে শুনিয়ে কালিমা শরীফ পড়তে থাকা। তবে তাকে কালিমা পড়ার হুকুম দিবে না এবং তার পাশে বসে সূরা ইয়াসীন পড়া। উল্লেখ্য, কালিমা শরীফ একবার পড়ে নিয়ে তারপর যদি দুনিয়াবী কোন কথা না বলে তাহলে দ্বিতীয় বার কালিমার তালকীন না করা।
(মুস্তাদরাক, হাঃ নং ১৩০৫/ মুসরিম, হাঃ নং ৯১৬/ আবু দাউদ, হাঃ নং ৩১২১)
২. স্বীয় মৃত্যু নিকটবর্তী মনে হলে এই দু‘আ পড়তে থাকা :
اللهم اغفرلى وارحمنى والحقنى بالرفيق الاعلى-
(তিরমিযী, হাঃ নং ৩৪৯৬/ আবু দাউদ, হাঃ নং ৩১২১)
৩. যখন রূহ বের হচ্ছে বলে অনুভব হতে থাকে, তখন এই দু‘আ পড়া :
اللهم اعنى على غمرات الموت او سكرات الموت-
(তিরমিযী, হাঃ নং ৯৭৮)
৪. কোন মুসলমানের মৃত্যু সংবাদ শ্রবণে এই দু‘আ পড়া :
انا لله وانا اليه راجعون اللهم اجرنى فى مصيبتى واخف لى خيرا منها
(মুসলিম, হাঃ নং ৯১৮)
৫. মৃত ব্যক্তির চক্ষুদ্বয় ও মুখ খোলা থাকলে বন্ধ করে দেয়া। প্রয়োজন বোধে মাথার উপর ও থুতনীর নীচ দিয়ে কাপড় বেঁধে দেয়া। চেহারা দেখা,আত্মীয়-স্বজনদের আসা,জানাযায় লোক কম হবে এসব কথা বলে দাফনে বিলম্ব করা নিষেধ।
(মুসলিম, হাঃ নং ৯২০)
৬. মৃত ব্যক্তিকে খাটে রাখার সময় বা মৃত ব্যক্তির লাশবাহী খাট কাঁধে উঠানোর সময় ‘বিসমিল্লাহ’ বলা।
(মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবাহ, হাঃ নং ১২০৬২)
৭. যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি মৃত ব্যক্তিকে গোসল, কাফন ও জানাযার নামায সম্পন্ন করে নিকটস্থ গোরস্থানে দাফনের ব্যবস্থা করা। দাফনের জন্য বিনা অপারগতায় দূরের গোরস্থানে বা এক শহর থেকে অন্য শহরে নেয়া মাকরূহ।
(আবু দাউদ, হাঃ নং ৩১৮, ৩১৬৫)
বি. দ্র. জানাযার পরে দাফনের পূর্বে হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা নিষেধ এবং জানাযার পর থেকে মুর্দার চেহারা দেখানো নিষেধ।
(আহসানুল ফাতাওয়া, ৪ : ২১৯/ ইমদাদুল মুফতীন, ৪৪৪ দারুল উলূম, ৫ : ৩০৫)
৮. মৃত ব্যক্তির লাশ কবরে রাখার সময় এই দু‘আ পড়া :
بسم الله وعلى ملة رسول الله
(আবু দাউদ, হাঃ নং ১০৪৬/ মুসনাদে আহমাদ, হাঃ নং ৪৯৮৯)
৯. কবরে লাশ পুরোপুরি ডান কাতে শোয়ানো অর্থাত তার চেহারা ও সীনা কিবলামুখী করে দেয়া। এর জন্য কবরের তলদেশে পশ্চিম পার্শ্বে উত্তর দক্ষিণে লম্বাভাবে এক হাত পরিমাণ গর্ত করতে হবে অথবা পিঠের পেছনে ও মাথার নীচে মাটির চাকা দিয়ে ডান কাতে শোয়াতে হবে। মৃত ব্যক্তিকে কবরে চিত করে শুইয়ে শুধু তার চেহারা কিবলামুখী করে দিলেই সুন্নাতের অনুসরণ হবে না।
(মুস্তাদরাক, হাঃ নং ১৯৭)
১০. আত্মীয়-স্বজনদের পক্ষ থেকে মৃত ব্যক্তির পরিবার পরিজনের জন্য প্রথম দিন খানার ব্যবস্থা করা উচিত। মৃত ব্যক্তির উপর যাদের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব ছিল, শুধু তারাই এ খানা খাবে। আগন্তুক মেহমানগণ উক্ত খানায় শরীক হবে না। বরং তারা সান্ত্বনা দিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চলে যাবে। মৃত ব্যক্তির লোকদের উপর বোঝা সৃষ্টি করবে না। বর্তমানে বিষয়টিকে মোটেও খেয়াল করা হচ্ছে না। রেওয়াজ হিসেবে লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে মৃতের পরিবারের পক্ষ হতে কোনরূপ খানার আয়োজন না করা চাই। তেমনিভাবে ৪ দিনা, ৭/ ১০ দিনা, ত্রিশ-চল্লিশ কুলখানী ইত্যাদি বিধর্মীদের রসম। এগুলো থেকে কঠোরভাবে পরহেজ করবে। চাই মূর্খ লোকেরা যতই বদনাম করুক। আল্লাহর জন্য এ সব বদনাম বরদাশ্ত করে নিবে। ‘জীবনের শেষদিন’ কিতাব থেকে বিস্তারিত দেখে নিবে।
(বুখারী শরীফ, হাঃ নং ৫৪১৭/ মুসনাদে আহমাদ, হাঃ নং ৯০৫)
১১. কবর খুব বেশি উঁচু না করা এবং পাকা না করা।
(মুসলিম, হাঃ নং ৯৬৯, ৯৭০)
১২. কবরের উপর পানি ছিটিয়ে দেয়া।
(মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাঃ নং ৬৪৮১)
১৩. মৃত ব্যক্তির দাফনকার্য সম্পন্ন করার পর হযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে তার মাগফিরাত কামনায় দু‘আ করতেন এবং অন্যদেরকেও মাগফিরাতের দু‘আ করতে বলতেন। বিশেষত মুনকার নাকীর ফিরিশতাদ্বয়ের প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে সে যেন দৃঢ়পদ ও অবিচল থাকতে পারে, সে জন্য দু‘আ করতে বলতেন।
(আবু দাউদ, হাঃ নং ৩২২১)
১৪. কবরের মাথার দিকে এক ব্যক্তি সূরা বাকারার শুরু থেকে مفلحون পর্যন্ত এবং পায়ের দিকে অপর ব্যক্তি امن الرسول থেকে শেষ পর্যন্ত তিলাওয়াত করবে। কবরের চার কোণায় খুটি গাড়া এবং চার কোণায় চার কুল পড়ার কোন ভিত্তি পাওয়া যায় না।
(শুআবুল ঈমান, হাঃ নং ৮৮৫৪)
আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে উক্ত সুন্নত সমূহ বাস্তবায়ন করার তৌফিক দান করুন, আমিন৷
পড়েছেনঃ 1,249 জন