মাওকুফ বনাম মারফু’ হাদিস: মুজাফফার বিন মুহসিন থেকে যুগের মুজতাহিদ! রাহুল, মিথ্যাচারই যাদের পূঁজি!!

মুজাফফার বিন মুহসিন গত জুমআর খুতবায় আলি রাযি. এর হাদিস সম্পর্কে ইনিয়ে-বিনিয়ে যা বলতে চেয়েছিলেন, গতকাল জবাবি লাইভে রাহুল ভাই সেটাই আওড়িয়ে গেলেন! আমি অবশ্য রাহুল ভাইয়ের আলোচনাগুলো ইলমি বিনোদন হিসেবে উপভোগ করছি!! তিনি গতকাল আমার আলোচনা ষষ্ট পর্বের জবাব দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। আমি আলোচনায় দেখিয়েছিলাম যে, মুজাফফার বিন মুহসিন সাহেব একটি বানোয়াট, বেদআতি মূলনীতি দিয়ে একটি সহিহ হাদিসকে জাল বানিয়ে দিয়েছেন! মুজতাহিদ শায়খ রাহুল হুসাইন সাহেব গতকাল লাইভে এসে বুঝাতে চেয়েছেন যে, শহর ছাড়া জুমআ ও তাশরিক নেই সংক্রান্ত আলি রাযি. এর দুটি বর্ণনা রয়েছে। একটি মাওকুফ এবং অপরটি মারফু’। হেদায়া কিতাবে মারফু হাদিটি বর্ণিত হয়েছে। শায়খ মুজাফফার বিন মুহসিন হেদায়ার বর্ণিত মারফু হাদিসকে জাল বলেছেন! প্রিয় পাঠক, মুজতাহিদ শায়খ রাহুলের জবাব নিয়ে পর্যালোচনা করার আগে আমরা মারফু’ এবং মাওকুফ হাদিসের সংজ্ঞা জানব। তাহলে পরবর্তী আলোচনা বুঝা একেবারেই সহজ হয়ে যাবে। উভয়টির সংজ্ঞা দিতে গিয়ে ইমাম জাহাবি রাহি. বলেন: الموقوف: هو ما أُسنِدَ إلى صحابيّ من قولهِ أو فعِله. المرفوع: وهو ما نُسِبَ إلى النبيّ – صلى الله عليه وسلم – من قولِه أو فعلِه. অর্থাৎ মাওকুফ বলা হয়, কোন সাহাবির কথা কিংবা কাজকে, আর মারফু’ বলা হয় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কথা কিংবা কাজকে। (আল মুওক্বিযাহ: ৪১, মাকতাবাতুল মাতবুয়াতিল ইসলামিয়্যাহ)

এক কথায় হাদিসে যদি কোন সাহাবির কথা কিংবা কাজ বর্ণনা করা হয়, সেটাকে বলা মাওকুফ। আর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কথা কিংবা কাজ বর্ণনা করা হলে সেটাকে বলা মারফু’। এটা ভাল করে বুঝবেন। তাহলে পরবর্তীতে মুজতাহিদ শায়খ রাহুলের মিথ্যাচার এবং গলাবাজি বুঝতে পারবেন। এবার আমরা যাব শায়খ মুজাফফার বিন মুহসিনের বইয়ে। আপনারা যাদের কাছে মুজাফফারের বইয়ের মূলকপি কিংবা পি, ডি এফ আছে, তারা দয়া করে ৩৫২ নং পৃষ্ঠা খুলুন। তাহলে সহজেই গলাবাজি ধরতে পারবেন। মুজাফফার লিখেন: عَنْ عَلِيٍّ قَالَ: ্রلَا جُمُعَةَ وَلَا تَشْرِيقَ إِلَّا فِي مِصْرٍ جَامِعٍ আলী (রাঃ) বলেন, শহর ছাড়া জুমআ ও তাশরিক নেই। তাহকীক: বর্ণনাটি জাল। কারণ মারফু’ সূত্রে এর কোন ভিত্তি নেই। (জাল হাদীসের কবলে রাসূলুল্লাহর সালাত: ৩৫২)

প্রিয় পাঠক, আপনারা বলুন তো, মুজাফাফার বিন মুহসিন সাহেব রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বক্তব্য উল্লেখ করেছেন নাকি আলি রাযি. এর বক্তব্য উল্লেখ করেছেন? অবশ্যই আলি রাযি. এর বক্তব্য উল্লেখ করেছেন। আর আমরা পূর্বে জেনে এসেছি যে, সাহাবির বক্তব্য বর্ণিত হলে সে হাদিসকে মাওকুফ বলে! তাহলে অবশ্যই শায়খ মুজাফফার বিন মুহসিন মাওকুফ হাদিস উল্লেখ করেছেন। আবার তাহকিকে গিয়ে পরিষ্কার করে বলে দিয়েছেন যে, মারফু’ সুত্রে ভিত্তি না থাকার কারণে এ মাওকুফ বর্ণনাটি জাল। কিন্তু যুগের মুজতাহিদ শায়খ রাহুলের বক্তব্য হলো, মুজাফফার মারফু হাদিস উল্লেখ করে সেটাকে জাল বলেছেন! ইমাম জাহাবি! হাদিসের ইমাম হওয়ার আগে আমাদের ব্রাদার রাহুলের কাছে এসে আপনার মুসতালাহুল হাদিসের ইলম শেখা দরকার ছিল! মুজাফফার বিন মুহসিনের প্রতারণা বুঝতে হলে এখন আরেকটি বিষয় মাথায় রাখুন। আলি রাযি. এর হাদিস দুইভাবে বর্ণিত হয়েছে। মাওকুফভাবে এবং মারফু’ ভাবে। মাওকুফ হাদিসটি সহিহ। কিন্তু মারফু’ হাদিসটি সহিহ নয়। এবার আসুন, মুজাফফারের প্রতারণায় যাই। আমরা দেখেছি স্পষ্টভাবে মুজাফফার বিন মুহসিন মাওকুফ হাদিস উল্লেখ করেছেন। এবার তিনি হাদিসের যে রেফারেন্স দিয়েছেন, আমরা সে রেফারেন্স যাচাই করে আসি। ১৩৭৩ নং টীকায় তিনি আলি রাযি. এর বর্ণনার রেফারেন্স দিয়েছেন “বায়হাক্বী. সুনানুল কুবরা, হা/৫৮২৩, আবু ইউসুফ আল আছার হা/৬০”।

আসুন, আমরা প্রথমে বায়হাকি থেকে সনদসহ পুরো হাদিস দেখে আসি। أَخْبَرَنَا أَبُو طَاهِرٍ الْفَقِيهُ، أنبأ أَبُو عُثْمَانَ الْبَصْرِيُّ، ثنا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ الْوَهَّابِ، أنبأ يَعْلَى بْنُ عُبَيْدٍ، ثنا سُفْيَانُ، عَنْ زُبَيْدٍ، عَنْ سَعْدِ بْنِ عُبَيْدَةَ، عَنْ أَبِي عَبْدِ الرَّحْمَنِ قَالَ: قَالَ عَلِيٌّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ: ” لَا جُمُعَةَ وَلَا تَشْرِيقَ إِلَّا فِي مِصْرٍ جَامِعٍ “অর্থাৎ ইমাম বায়হাকি হাদিসটে বর্ণনা করেছেন আবু তাহির থেকে, তিনি আবু উসমান আল বাসরি থেকে, তিনি মুহাম্মাদ বিন আবদুল ওয়াহহাব থেকে, তিনি ইয়া’লা বিন উবায়দ থেকে, তিনি সুফিয়ান থেকে, তিনি জুবায়দ থেকে, তিনি সাদ বিন উবায়দা থেকে, তিনি আবু আবদির রাহমান থেকে, তিনি আলি রাযি. থেকে, আলি রাযি. বলেন: শহর ছাড়া জুমআ ও তাশরিক নেই। প্রিয় পাঠক, আপনারা বলুন তো বায়হাকিতে মারফু’ হাদিস উল্লেখ করা হয়েছে নাকি মাওকুফ হাদিস? অবশ্যই মাওকুফ হাদিস উল্লেখ করা হয়েছে। আমরা দেখলাম শায়খ মুজাফফার নিজে মাওকুফ হাদিস উল্লেখ করেছেন। আবার দুটি রেফারেন্সের একটিতে দেখলাম মাওকুফ হাদিসই উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ আমাদের মুজতাহিদ শায়খ রাহুল সাহেব লাইভে কত জোর গলায় বললেন, মুজাফফার মারফু’ হাদিস উল্লেখ করেছেন এবং সেটাকে জাল বলেছেন! আহ! মুজাফফার থেকে নিয়ে শায়খ রাহুল, সবাই কানাকে হাইকোর্ট দেখাচ্ছেন!! এবার যাব দ্বিতীয় রেফারেন্সে। দ্বিতীয় রেফারেন্স হিসেবে তিনি উল্লেখ করেছেন ইমাম আবু ইউসুফের বর্ণিত কিতাবুল আছারের কথা। আসুন আমরা সেখান থেকে পুরো আলোচনা পড়ে আসি। সেখানে বলা হয়েছে: قَالَ: وثنا يُوسُفُ بْنُ أَبِي يُوسُفَ عَنْ أَبِيهِ عَنْ أَبِي حَنِيفَةَ، عَنْ حَمَّادٍ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ، عَنْ أَبِي الْأَحْوَصِ، عَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّهُ قَالَ فِي التَّكْبِيرِ أَيَّامَ التَّشْرِيقِ: ” مِنْ دُبُرِ صَلَاةِ الْفَجْرِ يَوْمَ عَرَفَةَ إِلَى دُبُرِ صَلَاةِ الْعَصْرِ مِنْ يَوْمِ النَّحْرِ، وَكَانَ يُكَبِّرُ فَيَقُولُ: اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَاللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ وَلِلَّهِ الْحَمْدُ “وَزَعَمَ أَبُو حَنِيفَةَ أَنَّهُ بَلَغَهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ: ্রلَا جُمُعَةَ وَلَا تَشْرِيقَ إِلَّا فِي مِصْرٍ جَامِعٍ ইমাম আবু ইউসুফ আবু হানিফার সূত্রে হাম্মাদ থেকে, তিনি ইবরাহিম থেকে, তিনি আবুল আহওয়াস থেকে, তিনি ইবনে মাসউদ রাযি. থেকে বর্ণনা করেন, ইবনে মাসউদ রাযি. আরাফার দিনের ফজর থেকে, কুরবানির দিনের আসর পর্যন্ত তাকবিরে তাশরিক বলতেন। এরপর তাকবিরে তাশরিক উল্লেখ করে বলেন: ইমাম আবু হানিফা ধারণা করেন যে, তিনি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন যে, শহর ছাড়া জুমআ ও তাশরিক নেই। আমরা দেখলাম ইমাম আবু ইউসুফ ইমাম আবু হানিফার মতামত তুলে ধরেছেন। তিনি মনে করেছেন হাদিসটি মারফু’ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু মুজাফফার সাহেবতো উল্লেখ করেছেন আলি রাযি. এর মাওকুফ হাদিস। এরপর সেটাকে জাল বলেছেন মারফু’ সূত্রে ভিত্তি না থাকার কারণে। প্রশ্ন হলো, মারফু’ সূত্রে যদি কোন মাওকুফ হাদিসের ভিত্তি না থাকে, তাহলে সে মাওকুফ হাদিস কী জাল হয়ে যায়? ভাল করে মনে রাখবেন মুজাফফার এর এ মূলনীতি হলো একটি বেদআতি মূলনীতি। এবার আসুন, মাওকুফ হাদিস সম্পর্কে হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানি রাহি. এর বক্তব্য শুনে আসি। তিনি এ হাদিস সম্পর্কে বলেন: وَرَوَى عبد الرَّزَّاق عَن عَلّي مَوْقُوفا لَا تَشْرِيق وَلَا جُمُعَة إِلَّا فِي مصر جَامع وَإِسْنَاده صَحِيح অর্থাৎ আবদুর রাজ্জাক আলি রাযি. থেকে মাওকুফ সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে, আলি রাযি. বলেন: শহর ছাড়া জুমআ ও তাশরিক নেই। এ হাদিসের সনদ সহিহ। (আদ দিরায়াহ ফি তাখরিজি আহাদিসিল হিদায়া: ১/২১৪)

হাফেজ ইবনে হাজার অলি রাযি. যে বক্তব্য উল্লেখ করেছেন, মুজাফফার বিন মুহসিন সাহেব হুবহু আলি রাযি. একই বক্তব্য উল্লেখ করেছেন। তিনি অনুবাদ করেছেন “আলী রাযি. বলেন” দিয়ে! কিন্তু আমাদের মুজতাহিদ শায়খ রাহুলের বক্তব্য হলো, মুজাফফার সাহেব মারফু’ হাদীস উল্লেখ করেছেন! তাহলে কী রাহুল আলি রাযি. কে শিয়াদের মতো আল্লাহর রাসূল মনে করেন? যার কারণে আলি রাযি. এর বক্তব্য তার কাছে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মারফু’ হাদিস হয়ে যায়?এবার যাই পরবর্তী প্রসঙ্গে। মুজাফফার পরবর্তীতে লিখেন: “উল্লেখ্য যে উক্ত মিথ্যা বর্ণনা দ্বারাই হেদায়া লেখক গ্রামে জুমআর সালাত শুদ্ধ হবে না বলে দাবি করেছেন। প্রিয় পাঠক, এখানে মুজাফফার বিন মুহসিন সাহেব ভেল্কি দেখিয়েছেন। তিনিস বলেছেন যে, আলি রাযি. এর মিথ্যা বর্ণনা দ্বারাই হেদায়ার লেখক দলিল দিয়েছেন। আসুন, আমরা হেদায়া ঘুরে আসি। সেখানে বলা হয়েছে:” لا تصح الجمعة إلا في مصر جامع أو في مصلى المصر ولا تجوز في القرى ” لقوله عليه الصلاة والسلام ” لا جمعة ولا تشريق ولا فطر ولا أضحى إلا في مصر جامع “অর্থাৎ শহর বা শহরের উপকণ্ঠে ছাড়া অন্য কোথাও জুমআ জায়েজ হবে না। অঁজপাড়া গায়ে জুমআ জায়েজ হবে না। কারণ, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, শহর ছাড়া জুমা, তাশরিক, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা নেই। (হেদায়া: ১/৮২)

প্রিয় পাঠক, এবার আপনারা বলুন তো হেদায়াতে আলি রাযি. এর বক্তব্য উল্লেখ করা হয়েছে? নাকি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বক্তব্য উল্লেখ করা হয়েছে? অবশ্যই রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বক্তব্য উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ মারফু হাদিস হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আর মুজাফফার বিন মুহসিন আলি রাযি. এর হাদিস উল্লেখ করেছেন নাকি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদিস? অবশ্যই আলি রাযি. এর হাদিস। অর্থাৎ তিনি উল্লেখ করেছেন মাওকুফ বর্ণনা। এরপর সেটাকে বানোয়াট বেদআতি মূলনীতি দিয়ে জাল বানিয়েছেন! তারপর ভেল্কি দেখিয়ে বললেন, হেদায়ার লেখক নাকি আলি রাযি. এর বর্ণনা দিয়ে দলিল দিয়েছেন? এমন স্পষ্ট মিথ্যাচার করতে কারও বুক কাঁপে না? প্রিয় পাঠক, আমরা পূর্বেই বলেছি মারফু’ সূত্রে আলি রাযি. এর এ হাদিসটি প্রমাণিত নয়। কিন্তু মাওকুফসূত্রে আলি রাযি. থেকে সহিহ সনদে প্রমাণিত। পূর্বে হাফিজ ইবনে হাজারের বক্তব্য আপনারা পড়েছেন। মজার কথা হলো, মুজাফফার এখানে আলবানি রাহি. এর নামেও মিথ্যাচার করেছেন! তিনি মাওকুফ বর্ণনাটিকে জাল হওয়ার কারণ দেখিয়ে ছিলেন যে, মারফু’ সূত্রে সেটার কোন ভিত্তি নেই। নিচে ১৩৭৪ নং টীকায় রেফারেন্স দিয়েছেন “সিলসিলা যয়িফাহ: হা/৯১৭, ৩/১০০”।

আসুন, আমরা আলবানি রাহি. এর পুরো বক্তব্য দেখে আসি। তিনি বলেন: ” لا جمعة ولا تشريق إلا في مصر جامع “.لا أصل له مرفوعا.فيما علمت. إلا قول أبي يوسف في ” كتاب الآثار ” له رقم (২৯৬) : ” وزعم أبو حنيفة أنه بلغه عن النبي صلى الله عليه وسلم أنه قال…. ” فذكره مرفوعا، وهذا وهم، وإليه أشار أبو يوسف بقوله: ” وزعم أبو حنيفة ” مع أنه إمام، على أنه معضل، وقد أشار إلى ما ذكرنا الحافظ الزيلعي في ” نصب الراية ” بقوله (২ / ১৫৯) : ” غريب مرفوعا، وإنما وجدناه موقوفا على علي “. وأوهم الحافظ ابن حجر أنه مرفوع، فقال في ” التلخيص ” (১৩২) ” حديث علي: لا جمعة ولا تشريق إلا في مصر، ضعفه أحمد “. وقال النووي في ” المجموع ” (৪ / ৪৮৮) : ” ضعيف جدا “. كذا قالا، ولم يذكرا من خرجه، ولا إسناده لينظر فيه، وما أظنه إلا وهما منهما، ومما يؤيد ذلك أن الإمام أحمد إنما ضعف الموقوف على علي، وأما المرفوع فما ذكره، ولا أعتقد أنه سمع به! .قال إسحاق بن منصور المروزي في ” مسائله عن الإمام أحمد ” (ص ২১৯) : ” ذكرت له قول علي: ” لا جمعة ولا تشريق إلا في مصر جامع “؟ قال: الأعمش لم يسمعه من سعد “.قلت: سعد هذا هو ابن عبيدة، وقد أخرجه ابن أبي شيبة في ” المصنف ” (১ / ২০৪ / ১) : ” أخبرنا أبو معاوية عن الأعمش عن سعد بن عبيدة عن أبي عبد الرحمن السلمي عن علي قال: فذكره. ورواه علي بن الجعد الجوهري في ” حديثه ” (১২ / ১৭৮ / ১) من طريق أبي جعفر الرازي عن الأعمش به، وأعله أحمد بالانقطاع بين الأعمش وسعد بن عبيدة. قلت: لكن لم يتفرد به الأعمش، بل تابعه طلحة وهو ابن مصرف عند ابن أبي شيبة، وزبيد اليامي عند الطحاوي في ” مشكل الآثار ” (২ / ৫৪) والبيهقي أيضا في ” السنن ” (৩ / ১৭৯) كلاهما عن سعد بن عبيدة به. وسعد بن عبيدة ثقة من رجال الستة، ومثله أبو عبد الرحمن السلمي فالسند صحيح موقوفا، وصححه ابن حزم في ” المحلى ” (৫ / ৫৩) وهو مقتضى كلام أبي جعفر الطحاوي، ولكنه قال: ” لم يقله علي رضي الله عنه رأيا، إذ كان مثله لا يقال بالرأي، وإنما قاله بتوقيف عن رسول الله صلى الله عليه وسلم! অর্থাৎ শহর ছাড়া জুমআ এবং তাশরিক নেই আমার জানা মতে মারফু’ সূত্রে এ হাদিসটি প্রমাণিত নয়। তবে ইমাম আবু ইউসুফ বলেছেন ইমাম আবু হানিফা ধারণা করেছে সেটা মারফু’ভাবে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু এটি তার ধরণা।

এরপর আলবানি রাহি. মারফু’ সূত্রে যে দুর্বলভাবে প্রমাণিত সেটা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে এক পর্যায়ে বলেন: মাওকুফভাবে এ হাদিসের সনদ সহিহ। ইমাম ইবনে হাজম ‘আল মুহাল্লা ৫/৫৩’ নং পৃষ্ঠায়ও এ বর্ণনাকে সহিহ বলেছেন। প্রিয় পাঠক, মারফু’ সূত্রে ভিত্তি না থাকার কারণে মুজাফফার বিন মুহসিন আলি রাযি. এর যে মাওকুফকে বর্ণনাকে জাল বলেছেন, আমরা দেখলাম সিলসিলায় সেটাকে সহিহ বলা হয়েছে! কিন্তু এরপরও আমাদের মুজতাহিদ শায়খ ব্রাদার রাহুল বলবেন যে, মুজাফফার মাওকুফ হাদিস উল্লেখ করেন নি। তিনি মারফু’ হাদিস উল্লেখ করে সেটাকে জাল বলেছেন! ওরে তাহকিক রে!! উলুমূল হাদিস শাস্ত্রে যারা মিসকিনের চেয়েও নিচে, এদেরকে আল্লাহ কিছুদিন পড়াশুনা করার তাওফিক দান করুন। যে ব্যক্তি বিশুদ্ধ কুরআন তেলাওয়াত করতে পারে না, শাস্ত্রীয় আলোচনা বুঝা দূরের কথা, এক লাইন আরবি শুদ্ধ করে পড়তে পারে না, বঙ্গ দেশীয় সালাফিরা যখন এমন ব্যক্তিকে শায়খ বানিয়ে ফেলছে, বুঝতে হবে কিয়ামতের ছোট আরেকটি আলামত প্রকাশিত হয়ে গেল! অবশ্য যে দেশের মানুষ হিরো আলম এবং স্যার মাহফুজুর রহমানের গান শুনে, সে দেশের কিছু মানুষ যদি রাহুলকে শায়খ মনে করে, তাহলে আপনি এত অবাক হোন কেন??

Loading