Rahmania Madrasah Sirajganj

আরবী তারিখঃ এখন ১ রমজান ১৪৪৪ হিজরি, ২৩ মার্চ ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার রাত ৯:২৮ মিনিট (প্রতিদিন মাগরিবের পর তারিখ পরিবর্তন হয়)

পহেলা বৈশাখ উদযাপন; বর্ষবরণের বিজাতীয় পদ্ধতি

আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন :

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا ادْخُلُوا فِي السِّلْمِ كَافَّةً وَلَا تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِينٌ

হে ঈমাণদার গণ! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ করো এবং শয়তানের পদাংক অনুসরণ করো না । নিশ্চিত রূপে সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু ৷
{সূরা বাকারাহ ,আয়াত নং২০৮}

মুসলমানের সব কাজেই আল্লাহ তা’আলার আদেশ ও নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আদর্শের অনুসরণ থাকতে হবে ৷ দেখতে হবে এ কাজের কারণে আমার রব যেন নারাজ না হয়ে যান । আমার কাজ যেন নবীর আদর্শবিরোধী না হয়ে যায় ৷

আর এটাও লক্ষ্য রাখতে হবে যে , আমার কাজ যেন বিজাতীয়দের ধর্মীয় ও জাতীয় কালচারের সাথে মিলে না যায় ৷

যে যা করবে তার দেখাদেখি আমিও তাই করবো কেন? আমার জন্য তো রয়েছে সর্বক্ষেত্রে সর্বোশ্রেষ্ঠ আদর্শ । সর্বোত্তম রাসূলের সর্বোত্তম আদর্শ ৷

আবূ দাউদ শরীফে বর্ণিত একটি হাদীসে অন্য জাতির সাদৃশ্য অবলম্বণ করলে তাদের মধ্যে গণ্য হয়ে যাওয়ার ধমকি এসেছে ….

حَدَّثَنَا عُثْمَانُ بْنُ أَبِى شَيْبَةَ حَدَّثَنَا أَبُو النَّضْرِ حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمن بْنُ ثَابِتٍ حَدَّثَنَا حَسَّانُ بْنُ عَطِيَّةَ عَنْ أَبِى منيبٍ الْجُرَشِىِّ عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- « من تشبه بِقَوْمٍ فَهُوَ منهُمْ ».

হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমার রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন : যে ব্যক্তি কোন জাতির সাদৃশ্য অবলম্বণ করবে, সে তাদের মধ্যে গণ্য হবে ৷
{সুনানু আবী দাউদ হা:৪০৩৩}

এমনিতেই নববর্ষ উদযাপনের সাংস্কৃতি ইসলামে নেই ৷ নেই সেদিন আনন্দ উল্লাসের কোন আদর্শও ৷
নতুন বছরে বিপদও তো আসতে পারে । তাই আপনি নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়ে প্রকারান্তে আসন্ন বিপদকে স্বাগত জানাচ্ছেন না তো?আবার নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর অর্থ আমার হায়াতের একটি বছর গত হওয়াতে আমি খুশী প্রকাশ করা ‌ । আনন্দিত হওয়া ৷ কোন অতিব বোকা মানুষই হায়াত শেষ হওয়ায় আনন্দ প্রকাশ করতে পারে ৷ খুশি হতে পারে ।

তবুও দিন অতীত হবার দ্বারা আনন্দিত হওয়া এটা আমাদের অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে ।

একজন আরবি কবির ভাষায় : يسرالمرأ ما ذهب الليالى ♥ وكان ذهابهن له ذهابا দিন যায় দিন আসে আমি হই খুশী, বুঝিনা ফুরায় দিন রয়না আর বেশী ৷

তাও যদি সেটা বৈধ কোনো পদ্ধতিতে হতো?একবার না জেনে হঠাৎ বৈশাখের পয়লা তারিখে বিকাল বেলা এক কাজে শহরে বের হলাম ৷ যা দেখলাম ; আল্লাহর পানাহ ! মনে হলো আমি কোনো অমুসলিম দেশে এসে পৌঁছেছি ৷ যে বাদ্যযন্ত্র ও ঢোল - তবলা , নাচ - গান আর যেমন খুশী তেমন সেজে বাঁধভাঙা আনন্দ - উল্লাস !

ইসলাম দ্বীনুল ফিতরাহ ৷ ইসলাম আনন্দ-ফূর্তি অবশ্যই পছন্দ করে ৷ তবে তা শরীয়তের গন্ডির ভিতরে হতে হবে ৷ অবস্থা এতোটাই নাজুক যে আমাদের হালত দেখে বুঝার উপায় নেই আমরা মুসলমান না হিন্দু?ইয়াহুদী না খ্রিষ্টান সম্প্রদায়?

একজন উর্দু কবির ভাষায় : وضع میں ہیں تو نصاری توتمدن میں ہنود * یہ مسلمان جسے دیکھ کے شرمائے یہود

অনুবাদ :

চাল-চলনে খ্রিষ্টান তুমি হিন্দু তুমি সভ্যতায়, এই তো সেই মুসলিম যাকে ইয়াহূদীও দেখে লজ্জা পায় ৷

পান্তা-ইলিশ

আবার এর সাথে যুক্ত হয়েছে পান্তা-ইলিশ ।
পান্তা-ইলিশ কীভাবে আমাদের জাতীয়তায় পরিণত হলো , আমার জানা নাই ৷ পান্তা-ইলিশ কি আমাদের জাতীয় খাবার ?

এ দিকে পান্তা আর ইলিশে তো কোনো মিলও নেই ৷ ইলিশ তৈলাক্ত মাছ ৷ এ ধরণের তৈলাক্ত খাবার পান্তার সাথে মানানসই নয় ৷ প্রবাদ আছে : ” কিসের সাথে কি পান্তা ভাতে ঘি ” । পান্তা ইলিশের বিষয়টাকেও আমার কাছে ওই রকমই মনে হয় । আবার ১লা বৈশাখের সময় ইলিশের কেজি ১০/২০ হাজার টাকা পর্যন্তও হয়ে যায় । এটা মারাত্মক ইছরাফ । অপচয় ।

রংবেরংয়ের বৈশাখীপোশাক

এ ছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন রংয়ের বিশেষ বৈশাখীপোষাক ৷ যাতে লাল সাদার মিশ্রনে সিঁদুরের কালার তৈরী হয় ৷ সাদৃশ্য হয় হিন্দুদের ৷ সাথে সাথে অনেক অপব্যয়ও হয় ৷ আর অপব্যয় করা হারাম । শরীয়তের দৃষ্টিতে অত্যন্ত অপছন্দনীয় ।

মঙ্গল শোভাযাত্রা

আবার মঙ্গল শোভাযাত্রার নামে মূর্তি নিয়ে শোভাযাত্রা করে আল্লাহ ছাড়া অন্যের কাছে মঙ্গল প্রার্থণাও করা হয় হিন্দুয়ানী এ বৈশাখী প্রথাটিতে ৷ যা সরাসরি ঈমানের সাথে সাংঘর্ষিক ৷ তাওহীদ বা একত্ববাদের সম্পূর্ণ বিরোধী ।

বিভিন্ন প্রাণীর আকৃতি ধারণ

এটা আশরাফুল মাখলুক মানুষ হয়ে আল্লাহ তাআলার নিয়ামতের প্রতি উপহাস ৷ মারাত্মক নাশুকরি ৷ অকৃতজ্ঞতা ৷ আনন্দের একটা মাত্রা থাকা চাই !অতএব, ১লা বৈশাখ উদযাপনের বর্তমান প্রচলিত পদ্ধতি পুরাপুরিই পরিত্যাজ্য ৷ কোনো মুসলমানঘরের সন্তান তা পালন করতে পারেনা ৷ মুসলমানরা যে কোনো কাজেই ইসলামী আদর্শের অনুকরণ করবে।

কোনো ঈমানদার বিজাতীয় কালচার অনুকরণ করে, ভল্লুক আর উল্লু সেজে কখনও দ্বীনকে বিসর্জন দিবে না ৷ দিতে পারে না ৷ দেওয়া উচিত না।

মুফতী শফী কাসেমী, মুফতি-মুহাদ্দিস জামিল মাদ্রাসা বগুড়া।

পড়েছেনঃ 915 জন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *