দারুল উলুম দেওবন্দের ৫২ বছরের সফল মুহতামিম ক্বারী তাইয়িব সাহেব (র.) তাঁর পিতা হাফেয মুহাম্মাদ আহমদ সাহেব (র.) ও কুরআন শরীফ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও শিক্ষনীয় একটি ঘটনা নিজ মুখে বর্ণনা করেন৷
হযরত বলেনঃ আমার আব্বাজান হাফেয মুহাম্মাদ আহমদ সাহেব (র.) ইন্তিকালের আনুমানিক ১৫/২০ দিন আগে আমাকে দারুল উলুম দেওবন্দের দারুল মাশওয়ারায় (পরামর্শে কক্ষ) নির্জনে ডাকলেন, আমি তাৎক্ষনিক উপস্থিত হলাম,
আমাকে দেখেই আব্বাজান অস্বাভাবিকভাবে কান্না শুরু করলেন, এমনকি কান্নার দরুন কয়েক মিনিট কথা বলতে পারেননি, আমি মনে মনে ঘাবরে গেলাম, আমার থেকে না জানি কোন অন্যায় প্রকাশ হয়েছে যার দরুন এই অবস্থা!
আমি বললাম, আব্বাজি কান্না করবেননা, আমি কি দোষ করেছি বলেন!
তিনি বললেনঃ না, তুমি কোনো দোষ করোনি, আমার পরপারের পৌঁছার সময় ঘনিয়ে এসেছে, তাই তোমাকে একটি ঘটনা শুনানোর জন্য ডেকেছি, আমি যখন হাফেয হয়েছি, তখন আমার আব্বাজান দারুল উলুম দেওবন্দের প্রতিষ্ঠাতা কাসেম নানুতবী (র.) সীমাহীন খুশী হয়ে ছিলেন, এমনকি আমার হিফয খতমের খুশীতে তিনি পুরো শহরের সকল গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয় স্বজনকে দাওয়াত করে বড় খানার আয়োজন করেন৷
খানার অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পরেই, তোমাকে যেভাবে আজ ডাকলাম আমাকেও সেইভাবে নির্জনে ডেকে নিয়ে অশ্রু-স্বজল নয়নে বললেন:
মিয়া আহমদ! আল্লাহর শুকর, তুমি হাফেয হয়েছো, সামনে সময় আসবে যখন তুমি আলেমেও হবে, তখন তোমার অনেক ইজ্জত সম্মান হবে, সারা দেশে তোমার অনেক নাম ডাক হবে! এবং অনেক ধন সম্পদও হবে হয়ত! কিন্তু এই সব কিছু তোমার নিজের জন্যই হবে! আমার জন্য কিচ্ছুই হবে না ৷
দেখো বাবা! তোমাকে কুরআনের হাফেয বানিয়েছি আমার জন্য, আমি কবরে যাওয়ার পর তুমি আমাকে ভুলে যেওনা! কেমন?
তাঁর ইন্তিকালের পর থেকে দৈনিক দুই পারা কুরআন শরীফ পড়ে আমার আব্বাজানের (ক্বাসেম নানুতবী) জন্য ইসালে সাওয়াব করি, এবং এখন পর্যন্ত একদিনও আমার থেকে এই আমলটি ছুটেনি, আলহামদুলিল্লাহ ৷
ক্বারী তাইয়িব সাহেব (র.) বলেন, আমার আব্বাজান আমাকে এই ঘটনা শুনিয়ে বলেনঃ
এই তাইয়িব! আলহামদুলিল্লাহ, তুমিও তো হাফেয, আলেম হয়েছো, সামনে এমন এক সময় আসবে যখন তোমার নাম চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়বে, তুমি অনেক প্রসিদ্ধি লাভ করবে! তোমার অনেক ইজ্জত সম্মান হবে! এবং আল্লাহ তাআলা তোমাকে অনেক ধন সম্পদও দান করবেন! তবে এই সব কিছুই কেবল তোমার জন্য, আমার কিচ্ছুই না! কিন্তু আমি তোমাকে হাফেয আলেম বানিয়েছি আমার জন্য, আমি কবরে যাওয়ার পর তুমি আমাকে ভুলে যেওনা! হে?
অতঃপর আব্বাজানের ইন্তিকালের পরের মাসের প্রথম তারিখ থেকেই আমি প্রতিদিন মাগরীবের পর আওয়াবীনের নফল নামাযে এক পারা করে তিলাওয়াত করে তাঁর নামে ইসালে সাওয়াব করি যা আজ পর্যন্ত ছুটেনি ৷
সম্মানিত পাঠক! আপনাকে বলছি, একটু লক্ষ্য করুন!
ক্বারী তাইয়িব সাহেব (র.) যেভাবে নিজ পিতা ও দাদার কুরআনের প্রতি তাঁদের ভালোবাসা, এবং তাদের সন্তানদেরকে কুরআন শিক্ষার মাধ্যমে যে স্বপ্ন লালন করে ছিলেন তার বর্ণনা দিলেন, এর মধ্যে আমার জন্য আপনার জন্য, সবার জন্য অনেক কিছুই শিখার আছে!
আসুন, আমরাও এই সিদ্ধান্ত নেই এবং প্রস্তুতি গ্রহণ করি, আমরাও আমাদের সন্তানদেরকে এই আবেগ ও স্বপ্ন নিয়ে কুরআনের হাফেয বানাব, এবং তাদেরকে একাকিত্বে ডেকে মনের কথা গুলো খুলে বলব ৷
আর আমরা যারা হাফেযে কুরআন হয়েছি, বিশেষ ভাবে তাঁরা, আর যারা হতে পারিনি তারাও চেষ্টা করি যেন নিজেদের পিতা-মাতা, আত্মীয় স্বজনের জন্য দৈনিক কুরআন শরীফ থেকে নির্ধারিত একটা অংশ তিলাওয়াত করি ৷
আল্লাহ আমাকে সহ সবাইকে আমল করার তাওফীক দান করুন৷ আমীন।।