খানা খাওয়ার সুন্নত ২৪টি
১. দস্তরখানা বিছানো, দস্তরখানায় কিছু লেখা না থাকা । দেখুনঃ বুখারী শরীফঃ ৫৩৮৬, নাইলুল আওতারঃ ৮/১৬৭
২. উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত ভালভাবে ধোয়া, না মোছা। দেখুনঃ আবু দাউদ শরীফঃ ৩৭৬১, আদ্দুররুল মুখতারঃ ৬/৩৪০
৩. প্রথমে খানা তথা আল্লাহর নেয়ামতের দিকে মুখাপেক্ষী হয়ে বসা, তারপর দস্তরখানা বিছানো। দেখুনঃ বুখারী শরীফঃ ৫৩৮৫, ৫৩৯৯
৪. দস্তরখানা খুব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা। এর উপর ঝুটা, উচ্ছিষ্ট খাবার, হাড্ডি ইত্যাদি না ফেলা ও তাতে পা না রাখা।
দেখুনঃ মুসলিম শরীফঃ ২০৩৩
৫. খানা সামনে আসলে اللّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِيمَا رَزَقْتَنَا، وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ পড়া ও খানার খাওয়ার শুরুতে بِسْمِ اللّٰهِ وَ بَرَكَةِ اللّٰهِ পড়া।
দেখুনঃ বুখারী শরীফঃ ৫৩৭৬, রদ্দুল মুহতারঃ ৬/৩৪০, আল আযকার
৬. ডান হাত দিয়ে খাওয়া, বাম হাত দিয়ে খানা না খাওয়া। দেখুনঃ বুখারী শরীফঃ ৫৩৭৬, মুসলিম শরীফঃ ২০২০
৭. খানার মজলিসে বয়সের দিক দিয়ে যিনি বড় এবং বুযুর্গ, তাঁর দ্বারা খানা শুরু করানো। দেখুনঃ মুসলিম শরীফঃ ২০১৭
৮. খাদ্য এক ধরনের হলে ও ইজতেমায়ী খানায় নিজের সম্মুখ থেকে খাওয়া, ইনফেরাদী খানায় ইচ্ছে মত খাওয়ার অনুমতি আছে। খানা তিন আঙ্গুলে খাওয়া, প্রয়োজনে অতিরিক্ত মেলানো যাবে। দেখুনঃ বুখারী শরীফঃ ৫৩৭৬, আল ফিকহুল ইসলামীঃ ৩/৫৩৫
৯. খাদ্যের কোন অংশ পড়ে গেলে উঠিয়ে প্রয়োজনে পরিষ্কার করে খাওয়া। দেখুনঃ মুসলিম শরিফঃ ২০৩৩
১০. হেলান দিয়ে বসে না খাওয়া। দেখুনঃ বুখারী শরীফঃ ৫৩৯৮
১১. খাদ্যের ত্রুটি বের না করা। দেখুনঃ বুখারী শরীফঃ ৫৪০৯
১২. জুতা পরিহিত থাকলে জুতা খুলে খানা খাওয়া। দেখুনঃ মুস্তাদরাকে হাকেমঃ ৭১২৯
১৩. বসে খাওয়া, খানা খাওয়ার সময় اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِيهِ وَأَطْعِمْنَا خَيْرًا مِنْهُ দুআ পড়া। দেখুনঃ মুসলিম শরিফঃ ২/১৭৩, তিরমিযী শরীফঃ ৩৪৫৫
১৪. খানা খাওয়া শেষে খানার পাত্রসমূহ আঙ্গুল দ্বারা ভালভাবে চেটে পরিস্কার করে খাওয়া। এতে খাবারের পাত্রসমূহ আহারকারীর জন্য মাগফিরাত কামনা করে। হাতের আঙ্গুলসমূহ যথাক্রমে কনিষ্ঠা, অনামিকা, মধ্যমা, শাহাদাত, বৃদ্ধা চেটে খাওয়া।
দেখুনঃ মুসলিম শরীফঃ ২০৩৩, তিরমিযী শরীফঃ ১৮০৪, তাবরানী আউসাতঃ ১৬৪৯, দেখুনঃ বুখারী শরীফঃ ১৬৮, মুসলিম শরীফঃ ২০৯৭
১৫. খানা শেষে اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِىْ اَطْعَمَنَا وَ سَقَانَا وَ جَعَلَنَا مُسْلِمِيْنَ দু‘আ পড়া। দেখুনঃ আবু দাউদ শরীফঃ ৩৮৫০
১৬. খানা শেষে আগে দস্তরখানা উঠিয়ে তারপর নিজে উঠা। দেখুনঃ ইবনে মাজাহ শরীফঃ ৩২৯৫, শামাইলে তিরমিযী শরীফঃ পৃঃ ১২
১৭. দস্তরখানা ডান হাতে উঠানোর সময় اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ حَمْدًا كَثِيْرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيْهِ غَيْر مَكْفِىٍّ وَ لَا مُوَدَّعٍ وَلَا مُسْتَغْنىً عَنْهُ رَبَّنَا দু‘আ পড়া।
দেখুনঃ বুখারী শরীফঃ ৫৪৫৮, বুখারী শরীফঃ ১৬৮, মুসলিম শরীফঃ ২০৯৭, মুসনাদে আহমাদঃ ২৫০৪৩, মুস্তাদরাকঃ ৭৯১
১৮. খানা খেয়ে উভয় হাত ধোয়া। দেখুনঃ তিরমিযী শরীফঃ ১৮৪৬
১৯. খানা খাওয়ার সময় একেবারে চুপ থাকা মাকরূহ। এজন্য খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে পরস্পরে ভাল কথা আলোচনা করা। কিন্তু যে ধরনের কথা বা সংবাদে দুশ্চিন্তা বা ঘৃণার উদ্রেক হতে পারে, তা খানার সময় বলা অনুচিত। দেখুনঃ বুখারী শরীফঃ ৫৩৭৬
২০. খানার শুরুতে بِسْمِ اللّٰهِ পড়তে ভুলে গিয়ে স্মরণ হলেই খানার মাঝে بِسْمِ اللّٰهِ اَوَّلَهٗ وَاٰخِرَهٗ দুআ পড়া। দেখুনঃ আবু দাউদ শরীফঃ ৩৭৬৭
২১. দাওয়াতের খানা খাওয়ার পর اَللّٰهُمَّ اَطْعِمْ مَنْ اَطْعَمَنِىْ وَ اسْقِ مَنْ سَقَانِىْ দু‘আ পড়া। দেখুনঃ মুসলিম শরীফঃ ২০৫৫
২২. মেযবানকে শুনিয়ে اَكَلَ طَعَامَكُمُ الْاَبْرَارُ وَ صَلَّتْ عَلَيْكُمُ الْمَلَائِكَةُ وَ اَفْطَرَ عِنْدَكُمُ الصَّائِمُوْنَ দুআটি পড়া। দেখুনঃ আবু দাউদ শরীফঃ ৩৮৫৪
২৩. কুলি করে মুখ পরিষ্কার করা। দেখুনঃ বুখারী শরীফঃ ৫৪৫৫
২৪. নতুন ফল খাওয়ার সময় اَللّٰهُمَّ بَارِكْ لَنَا فيْ ثَمَرِنَا. وَبَارِكْ لَنَا فِيْ مَدِيْنَتِنَا. وَبَارِكْ لَنَا فِيْ صَاعِنَا. وَبَارِكْ لَنَا فِيْ مُدِّنَا দু’আ পড়া।
দেখুনঃ মুসলিম শরীফঃ ১৩৭৩, তিরমিযী শরীফঃ ৩৪৫৪
২৪. ইফতারের সময় اَللّٰهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَعَلٰى رِزْقِكَ اَفْطَرْتُ দু’আ পড়া। দেখুনঃ আবু দাউদ শরীফঃ ২৩৫৮
পান করার সুন্নাত ১৩টি
১. পানির পেয়ালা ডান হাত দিয়ে ধরা। দেখুনঃ মুসলিম শরীফঃ ২০২০
২. বসে পান করা, বসতে অসুবিধা না হলে দাঁড়িয়ে পান না করা। দেখুনঃ মুসলিম শরীফঃ ২০২৪
৩. بِسْمِ اللّٰهِ বলে পান করা এবং পান করে اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ বলা। দেখুনঃ তাবরানী আওসাতঃ ৬৪৫২
৪. কমপক্ষে তিন শ্বাসে পান করা এবং শ্বাস ছাড়ার সময় পানির পাত্র মুখ হতে সরিয়ে নেয়া। দেখুনঃ বুখারী শরীফঃ ৫৬৩১
৫. পাত্রের ভাঙ্গা দিক দিয়ে পান না করা। দেখুনঃ আবু দাউদ শরীফঃ ৩৭২২
৬. যদি পাত্রের ভিতর নজরে না আসে, সেটার মুখে মুখ লাগিয়ে পান না করা। কারণ, তাতে কোন বিষাক্ত প্রাণী থাকতে পারে।
দেখুনঃ বুখারী শরীফঃ ৫৬২৬
৭. পানি পান করার পর اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِىْ سَقَانَا مَاءً عَذْبًا فُرَاتًا بِرَحْمَتِهٖ وَلَمْ يَجْعَلْهُ بِذُنُوْبِنَا مِلْحًا اُجَاجَا দু‘আ পড়া। দেখুনঃ তাবরানীঃ ৮৯৯
৮. পানীয় দ্রব্য পান করে কাউকে দিতে হলে ডান দিকের ব্যক্তিকে আগে দেয়া এবং এই ধারাবাহিকতা অনুযায়ীই শেষ করা।
দেখুনঃ বুখারী শরীফঃ ৫৬১৯
৯. উযু করার পর যে পাত্রে হাত দিয়ে পানি নেয়া হয়, সে পাত্রের অবশিষ্ট পানি কিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে পান করা। এতে বিভিন্ন রোগ-ব্যাধি হতে আরোগ্য লাভ হয়। দেখুনঃ শামীঃ ১/১২৯, বুখারী শরীফঃ ৫৬১৬
১০. দুধ পান করার পূর্বে اَللّٰهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِيْهِ وَ زِدْنَا مِنْهُ দু‘আ পড়া। দেখুনঃ আবু দাউদ শরীফঃ ৩৭৩০
১১. দুধ ব্যতীত অন্য কোন পানীয় দ্রব্য হলে وَ زِدْنَا এর পরে خَيْرًا বৃদ্ধি করা। দেখুনঃ আমালুল ইয়াওমি ওয়াল্লাইলাহঃ ১২৭
১২. যে ব্যক্তি পান করাবে তার সর্বশেষে পান করা। দেখুনঃ মুসলিম শরীফঃ ৬৮১
১৩. যমযমের পানি কিবলামুখী হয়ে اَللّٰهُمَّ اِنِّىْ اَسْئَلُكَ عِلْمًا نَافِعًا وَ رِزْقًا وَاسِعًا وَ شِفَاءً مِّنْ كُلِّ دَاءٍ দু‘আ পড়ে দাঁড়িয়ে পান করা। দেখুনঃ মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাকঃ ৯১১২, সুনানে দারাকুতনীঃ ২৭১২, শামায়েলে তিরমিযী শরিফঃ ২/১৫