نحمدہ و نصلي علي رسوله الکریم اما بعد
খাদ্য গ্রহণ আল্লাহ তাআলার অনেক বড় একটি নিআমত, অনেক নিআমত আছে যেগুলো ছাড়া মানুষ চলতে পারে, কিন্তু এটি এমন একটি নিআমত যা সকলের জন্য অপরিহার্য৷ শাইখুনা শাহ মুফতি সুহাইল দাঃ বাঃ বলেন শাইখে বাতেন (পীর) এর চেয়ে শাইখে বতন (খাদ্য) এর গুরুত্ব অনেক বেশি৷ তার কারণ, সঠিকভাবে খানাপিনা না করলে শরীরে শক্তি অর্জন হবে না, আর শক্তি অর্জন না হলে পীর সাহেব যত পরামর্শই দিক না কেন, সেগুলোর উপর সঠিকভাবে আমল করার শক্তি পাওয়া যাবে না, এজন্য সঠিকভাবে খেতে হবে, শরীরে যখন শক্তি অর্জন হবে, তখন পীর সাহেবের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিকভাবে আমল করা যাবে৷ কিন্তু এই খানা এবং পান করা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ অনুযায়ী হতে হবে৷ এ জন্য এখানে খানা ও পান করার সুন্নত গুলি আলোচনা করা হল৷
খানা খাওয়ার সুন্নাতসমূহ
১. উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত ভালভাবে ধোয়া।
(আবু দাউদ, হাঃ নং ৩৭৬১)
২. দস্তরখানা বিছিয়ে খানা খাওয়া।
(বুখারী শরীফ, হাঃ নং ৫৩৮৬)
বি.দ্র. (ক) প্রথমে খানা তথা আল্লাহর নেয়ামতের দিকে মুখাপেক্ষী হয়ে বসা, তারপর দস্তরখানা বিছানো।
(বুখারী শরীফ, হাঃ নং ৫৩৮৫, ৫৩৯৯)
(খ) দস্তরখানা খুব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা উচিত। এর উপর ঝুটা (উচ্ছিষ্ট খাবার) হাড্ডি ইত্যাদি না ফেলা বা তাতে পা না রাখা উচিত।
(মুসলিম হাঃ নং ২০৩৩)
৩. বিসমিল্লাহ পড়া।
(বুখারী শরীফ, হাঃ নং ৫৩৭৬)
৪. ডান হাত দিয়ে খাওয়া।
(বুখারী, হাঃ নং ৫৩৭৬/ মুসলিম, হাঃ নং ২০২০)
৫. খানার মজলিসে বয়সের দিক দিয়ে যিনি বড় এবং বুযুর্গ, তাঁর দ্বারা খানা শুরু করানো।
(মুসলিম, হাঃ নং ২০১৭)
৬. খাদ্য এক ধরনের হলে নিজের সম্মুখ হতে খাওয়া।
(বুখারী শরীফ, হাঃ নং ৫৩৭৬)
৭. খাদ্যের কোন অংশ পড়ে গেলে উঠিয়ে (প্রয়োজনে পরিষ্কার করে) খাওয়া।
(মুসলিম, হাঃ নং ২০৩৩)
৮. হেলান দিয়ে বসে না খাওয়া।
(বুখারী শরীফ, হাঃ নং ৫৩৯৮)
৯. খাদ্যের ত্রুটি বের না করা।
(বুখারী শরীফ, হাঃ নং ৫৪০৯)
১০. জুতা পরিহিত থাকলে জুতা খুলে খানা খাওয়া।
(মুস্তাদরাকে হাকেম, হাঃ নং ৭১২৯)
১১. বসে খানা খাওয়া, ইজতেমায়ী খানায় নিজের সম্মুখ থেকে খাওয়া, ইনফেরাদী খানায় ইচ্ছে মত খাওয়ার অনুমতি আছে৷
১২. আহার গ্রহণ শেষে খানার পাত্রসমূহ আঙ্গুল দ্বারা ভালভাবে চেটে পরিস্কার করে খাওয়া। এতে খাবারের পাত্রসমূহ আহারকারীর জন্য মাগফিরাত কামনায় মহান আল্লাহর দরবারে দু‘আকরে। হাতের আঙ্গুলসমূহ যথাক্রমে মধ্যমা, শাহাদাত, বৃদ্ধা চেটে খাওয়া।
(মুসলিম, হাঃ নং ২০৩৩/ তিরমিযী, হাঃ নং ১৮০৪/ তাবরানী আউসাত, হাঃ নং ১৬৪৯)
১৩. খানা শেষে এই দু‘আ পড়া :
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِىْ اَطْعَمَنَا وَ سَقَانَا وَ جَعَلَنَا مُسْلِمِيْنْ
(আবু দাউদ, ৩৮৫০)
১৪. খানা শেষে আগে দস্তরখানা উঠিয়ে তারপর নিজে উঠা।
(ইবনে মাজাহ, হাঃ নং ৩২৯৫)
১৫. দস্তরখানা উঠানোর সময় এই দু‘আ পড়া :
َاَلْحَمْدُ لِلّٰهِ حَمْدًا كَثِيْرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيْهِ غَيْر مَكْفِىٍّ وَ لَا مُوَدَّعٍ وَلَا مُسْتَغْنىً عَنْهُ رَبَّنَا
(বুখারী শরীফ, হাঃ নং ৫৪৫৮)
১৬. খানা খেয়ে উভয় হাত ধোয়া।
(তিরমিযী, হাঃ নং ১৮৪৬)
১৭. কুলি করে মুখ পরিষ্কার করা।
(বুখারী শরীফ, হাঃ নং ৫৪৫৫)
১৮. খানার শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়তে ভুলে গেলে স্মরণ হওয়ার পর খানার মাঝে এই দু‘আ পড়া : ْبِسْمِ اللّٰهِ اَوَّلَهُ وَاٰخِرَه
(আবু দাউদ, হাঃ নং ৩৭৬৭)
১৯. কারো মেহমান হয়ে খানা খেলে প্রথমে আল্লাহর শুকর আদায়ে ১৩নং এ বর্ণিত দু‘আ পড়ার পর মেযবানের শুকরিয়া আদায়ে এই দু‘আ পড়া :
اَللّٰهُمَّ اَطْعِمْ مَنْ اَطْعَمَنِىْ وَ اسْقِ مَنْ سَقَانِىْ
(মুসলিম, হাঃ নং ২০৫৫)
হাদীসে মেযবানকে শুনিয়ে এ দু‘আটি পড়া :
ُاَكَلَ طَعَامَكُمُ الْاَبْرَارُ وَ صَلَّتْ عَلَيْكُم الْمَلَائِكَةُ وَ اَفْطَرَ عِنْدَكُمُ الصَّائِمُوْنْ
(আবু দাউদ, হাঃ নং ৩৮৫৪)
২০. খানা খাওয়ার সময় একেবারে চুপ থাকা মাকরূহ। এজন্য খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে পরস্পরে ভাল কথা আলোচনা করা। কিন্তু যে ধরনের কথা বা সংবাদে দুশ্চিন্তা বা ঘৃণার উদ্রেক হতে পারে, তা খানার সময় বলা অনুচিত।
(বুখারী শরীফ, হাঃ নং ৫৩৭৬)
পান করার সুন্নাতসমূহ
১. পানির পেয়ালা ডান হাত দিয়ে ধরা।
(মুসলিম, হাঃ নং ২০২০)
২. বসে পান করা, বসতে অসুবিধা না হলে দাঁড়িয়ে পান না করা।
(মুসলিম, হাঃ নং ২০২৪)
৩. বিসমিল্লাহ বলে পান করা এবং পান করে আলহামদুলিল্লাহ বলা।
(তাবরানী আওসাতা, হাঃ নং ৬৪৫২)
৪. কমপক্ষে তিন শ্বাসে পান করা এবং শ্বাস ছাড়ার সময় পানির পাত্র মুখ হতে সরিয়ে নেয়া।
(বুখারী শরীফ, হাঃ নং ৫৬৩১)
৫. পাত্রের ভাঙ্গা দিক দিয়ে পান না করা।
(আবু দাউদ, হাঃ নং ৩৭২২)
৬. পাত্র যদি এমন হয়, যার ভিতর নজরে আসে না, সেটার মুখে মুখ লাগিয়ে পান না করা। কারণ, তাতে কোন বিষাক্ত প্রাণী ক্ষতি সাধন করতে পারে।
(বুখারী শরীফ, হাঃ নং ৫৬২৬)
৭. পানি পান করার পর এই দু‘আ পড়া :
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِىْ سَقَانَا مَاءً عَذْبًا فُرَاتًا بِرَحْمَتِه وَلَمْ يَجْعَلْهُ بِذُنُوْبِنَا مِلْحًا اُجَاجَا
৮. পানীয় দ্রব্য পান করে কাউকে দিতে হলে ডান দিকের ব্যক্তিকে আগে দেয়া এবং এই ধারাবাহিকতা অনুযায়ীই শেষ করা।
(বুখারী শরীফ, হাঃ নং ৫৬১৯)
৯. উযু করার পর যে পাত্রে হাত দিয়ে পানি নেয়া হয়, সে পাত্রের অবশিষ্ট পানি কিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে পান করা। এতে বিভিন্ন রোগ-ব্যাধি হতে আরোগ্য লাভ হয়।
(শামী, ১ : ১২৯/ বুখারী শরীফ, হাঃ নং ৫৬১৬)
১০. দুধ পান করার পূর্বে এই দু‘আ পড়া :
اَللّٰهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِيْهِ وَ زِدْنَا مِنْهُ
(আবু দাউদ, হাঃ নং ৩৭৩০)
দুধ ব্যতীত অন্য কোন পানীয় দ্রব্য হলে وزدنا এর পরে خيرا বৃদ্ধিথ করা।
(আমালুল ইয়াওমি ওয়াল্লাইলাহ, ১২৭)
১১. যে ব্যক্তি পান করাবে তার সর্বশেষে পান করা।
(মুসলিম, হাঃ নং ৬৮১)
১২. যমযমের পানি কিবলামুখী হয়ে এ দু‘আ পড়ে পান করা :
اَللّٰهُمَّ اِنِّىْ اَسْئَلُكَ عِلْمًا نَافِعًا وَ رِزْقًا وَاسِعًا وَ شِفَاءً مِّنْ كُلِّ دَاءٍ
(মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাঃ নং ৯১১২/ সুনানে দারাকুতনী, হাঃ নং ২৭১২)
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে আমল করার তৌফিক দান করুন, আমিন৷