‘ইসলাম’ একমাত্র সত্য দীন। বাকি সব ধর্ম ও মতবাদ বাতিল। তাদের ধর্মীয় রীতি-নীতি, উৎসব ও সংস্কৃতী হচ্ছে কুফর ও শিরক কিংবা মারাত্মক গুনাহ। সুতরাং সেগুলোর প্রতি সমর্থন ও সম্মান প্রদর্শন কোনভাবেই বৈধ নয়। এই বিশ্বাস না রাখলে কোন ব্যক্তি মুসলিম হতে পারবে না।অপব্যাখ্যা ও বিভ্রান্তির মাধ্যমে ইসলামের সঠিক ও প্রকৃত রূপকে বিকৃত ও খণ্ডিতভাবে উপস্থাপন করা এবং দীনের পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা থেকে মুসলমানদেরকে দূরে সরানোর লক্ষে চক্রান্তকারীদের সুপরিকল্পিত কিছু আওড়ানো বুলি ও প্রতরণামূলক স্লোগান, যথা- সেকুলারিজম (ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ), লিবারেলিজম (উদারনীতিবাদ), হিউম্যানিজম (সেবা ও মানবতাবাদ), ফেমিনিজম (নারীবাদ), মডারেট ইসলাম (আধুনিক ও মধ্যপন্থা), ইন্টারফেইথ ডায়ালগ (আন্তঃধর্মীয় সংলাপ) অথবা গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, অসাম্প্রদায়িকতা, শিল্প-সংস্কৃতি, মুক্তিযুদ্ধ ও ৭১-এর চেতনা প্রভৃতি সাইনবোর্ডের আড়ালে ইসলামের বিরুদ্ধে অব্যাহতভাবে প্রপাগান্ডা চালানো হচ্ছে। নানাভাবে নানা কৌশলে মুসলিমদেরকে তাদের দীনি শি’আর ও আকীদা-আহকামের ব্যাপারে ভীত ও সংশয়গ্রস্ত কিংবা অনাগ্রহী করে তোলা হচ্ছে। এই সত্য এবং বাস্তবতা আমাদেরকে দ্রুত বুঝতে হবে।
কিন্তু এ ক্ষেত্রে আমাদের উদাসীনতা, নমনীয়তা ও আপোষকামীতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। ফলে মুসলিম সমাজ থেকে ঈমানী গায়রাত এবং শিরক, কুফর ও বিজাতীয় সংস্কৃতীর প্রতি সহজাত ঘৃণাবোধ বিদায় নিচ্ছে।ঈমান-আকীদা আমলের তুলনায় অধিক গুরুত্বপূর্ণ, বরং আমলের গ্রহণযোগ্যতার জন্য আকীদার বিশুদ্ধতা শর্ত। কেননা আকীদার বিশুদ্ধতা ছাড়া কোন আমলই আল্লাহ পাকের দরবারে গ্রহণযোগ্য নয়। (সূরা মায়েদা ৫; কাহাফ ১০৫; নূর ৩৯; ইবরাহীম ১৮; ফুরকান ২৩)।মানুষের আত্মা ছাড়া যেমন শরীরের কোন মূল্য নেই, তেমনি আকীদা ছাড়া আমলের কোন গ্রহণযোগ্যতা নেই। এ কারণেই ইসলামের পঞ্চবুনিয়াদের প্রধান হল আকীদা। (বুখারী হা. ৪; মুসলিম হা. ১৬)।সুতরাং কেউ যদি হাজারো আমল করে বা সমস্ত আমল সঠিকভাবে পালন করে; কিন্তু তার আকীদা বাতিল ও ভ্রান্ত হয়, তবে তার সকল আমল বরবাদ এবং তার এ আমলের স্বরূপ হল ফলবিহীন চাষাবাদ। এ জন্যই আকীদা ঠিক করতে হবে আমলের আগে সবার আগে, রাখতে হবে প্রথম সারীতে সর্বপ্রথমে। সুতরাং মৌলিক আকীদার ক্ষেত্রে কোন প্রকার অজ্ঞতা, অস্পষ্টতা, অসচ্ছতা, শিথিলতা, অসাবধানতা, সিদ্ধান্তহীনতা বা বিচ্ছিন্নতার কোন অবকাশ নেই।পরিতাপের বিষয় হল, এই ঈমান-আকীদার ব্যাপারেই আমাদের অবহেলা ও শৈথিল্য প্রদর্শন সবচেয়ে বেশি। আমাদের দীনি মাহফিল ও সম্মেলনগুলোতে আকীদার বিষয়-বস্তু রাখা হয় না। কোথায়ও রাখা হলেও তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয় না এবং জুমার দিন মিম্বার থেকেও এ সম্পর্কে আওয়াজ উচ্চারিত হয় না বা করতে দেওয়া হয় না। আর রচনা ও প্রবন্ধ-নিবন্ধেও আকীদার আলোচনা তেমন চোখে পড়ে না, কিংবা গুরুত্ব পায় না।ফলে যার ভয়াবহ পরিণতি আজ আমরা প্রত্যক্ষ করছি এবং অদূর ভবিষ্যতে অশনি সংকেত দেখতে পাচ্ছি। সমাজের সর্বত্র এর চিত্র সুস্পষ্ট। যেন হাদীসের বাস্তব প্রতিচ্ছবি দেখা যাচ্ছে, “সকালের মুমিন সন্ধ্যায় ঈমানহারা, সন্ধ্যার ঈমানদার সকালে ঈমানছাড়া”। (মুসলিম ১৮৬)।এমনকি দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাযীর আচরণ-উচ্চারণেও এমন কিছু প্রকাশ পাচ্ছে, যা সর্বসম্মত আকীদা বিরোধী ও সরাসরি ঈমান বিধ্বংসী।
–মাওলানা সাঈদ আহমদ, উস্তাদ- দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসা, চট্টগ্রাম।
পড়েছেনঃ 35 জন