মুশরিকদের ঈমান হল, আসমান ও জমিনে বহু ইলাহ আছে। পক্ষান্তরে মুসলিমদের ঈমান হচ্ছে-
لَا إِلَٰهَ إِلَّا اللَّهُ.
আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই ( সূরা সাফফাতঃ ৩৭/৩৫; সূরা মুহাম্মদঃ ৪৭/১৯)
প্রত্যেক নবী এ বিষয়ে তাঁর উম্মাতকে আহ্বান করেছেন। আল্লাহ তা’য়ালা বলেনঃ
وَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ مِنْ رَسُولٍ إِلَّا نُوحِي إِلَيْهِ أَنَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا أَنَا فَاعْبُدُونِ
(হে রাসূল!) তোমার পূর্বে এমন কোন রাসূল আমি পাঠাইনি যার প্রতি আমি এই ওহী নাযিল করিনি যে, ‘আমি ছাড়া কোন ইলাহ নেই; সুতরাং তোমরা আমার ইবাদাত কর।’ (সূরা আম্বিয়াঃ ২১/২৫)
অর্থাৎ প্রত্যেক নবীর দাওয়াত ছিল:
يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُمْ مِنْ إِلَٰهٍ غَيْرُهَُ
‘হে আমার কওম, তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর। তিনি ছাড়া তোমাদের কোন ইলাহ নেই। (সূরা আ’রাফঃ ৭/৫৯, ৬৫, ৭৩, ৮৫; সূরা হুদঃ ১১/৫০, ৬১, ৮৪; সূরা মু’মিনুনঃ ২৩/২৩, ৩২)
.
বিশ্ব নবী হযরত মুহাম্মদ (সা) এরও দাওয়াত ছিল:
يا أيها الناس قولوا لَا إِلَٰهَ إِلَّا اللَّهُ تفلحوا
‘হে লোক সকল! তোমরা বল আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তাহলে সফলকাম হবে’। (সহীহ ইবনে খুযাইমা : ১/৩২; সহীহ ইবনে হিব্বান : ১৪/৫১৮; মাযমাউয যাওয়াইদ : ৬/২১)
পবিত্র কুরআনে মুশরিকদের সম্পর্কে বলা হয়েছে,
إِنَّهُمْ كَانُوا إِذَا قِيلَ لَهُمْ لَا إِلَٰهَ إِلَّا اللَّهُ يَسْتَكْبِرُونَ. وَيَقُولُونَ أَئِنَّا لَتَارِكُو آلِهَتِنَا لِشَاعِرٍ مَجْنُونٍ.
তাদেরকে যখন বলা হত, ‘আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই’, তখন তারা অহঙ্কার করত। আর বলত, ‘আমরা কি এক পাগল কবির জন্য আমাদের ইলাহ’দের ত্যাগ করব?’ (সূরা সাফফাতঃ ৩৭/৩৫-৩৬)
.
অর্থাৎ মুসলিম ও মুশরিকদের মধ্যে পার্থক্য হল, মুসলিম একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে ইলাহ হিসাবে গ্রহণ করে না, বিশ্বাস করে না। পক্ষান্তরে মুশরিকরা বহু ইলাহ’তে বিশ্বাসী, যার কারণে তারা মুশরিক, চিরস্থায়ী জাহান্নামী। কিন্তু মাদখালী আহলে হাদীসের মুখপত্র মতিউর রহমান কুচবিহারী বলেন,
আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই’ এটা বাস্তব পরিপন্থী। তিনি মুশরিকদের মত বলেন, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ শুধু আছে নয় বরং বহু আছে, অসংখ্য ইলাহ আছে! (নাউযুবিল্লাহ!) তাহলে তো মুশরিকদের আকিদার সাথে মাদখালী আকিদার পার্থক্য থাকল না বরং হুবাহু মিলেই গেল।
তিনি দাবী করেছেন, পৃথিবীতে যতকিছুর পূজা উপাসনা করা হয় সবই ইলাহ। যেমন, হিন্দুদের সকল দেবদেবী, গরু, চন্দ্র, সূর্য, কবর, মাজার সবাই ইলাহ। (নাউযুবিল্লাহ! ছুম্মা নাউযুবিল্লাহ!!) মুশরিকরা যত কিছুর পূজা করতে সব কিছুকে ইলাহ ও মা’বুদ বলে স্বীকার করতে হবে কেন?
شَهِدَ اللَّهُ أَنَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ وَالْمَلَائِكَةُ وَأُولُو الْعِلْمِ قَائِمًا بِالْقِسْطِ ۚ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ.
আল্লাহ সাক্ষ্য দেন যে, ‘তিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই’, আর ফেরেশতা ও জ্ঞানীগণও। তিনি ন্যায়-নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। তিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। (সূরা আলি ইমরান : ৩/১৮)
.
ইলাহ কে? যিনি সবকিছুর স্রষ্টা, লালনপালনকারী, রিযিকদাতা, সকল সৃষ্টির চাহিদা পূরণকারী, যিনি সকল ক্ষমতা এবং কল্যাণ ও অকল্যাণের মালিক, যার নিয়ন্ত্রণে সমগ্র বিশ্ব জগত পরিচালিত, যিনি রাত ও দিনের পরিবর্তন ঘটান, যার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ, নক্ষত্র। সেই মহান আল্লাহ তা’য়ালাই আমাদের একমাত্র ইলাহ ও মাবুদ; অন্য কেউ নয়।
যিনি জীবনদাতা ও মৃত্যুদাতা; যিনি সকল জীবকে লালনপালন ও রিযিক দান করেন; যিনি প্রার্থনা শ্রবণকারী ও শান্তিশৃঙ্খলা স্থাপনকারী এবং বিশ্বজগত পরিচালনায় যার হুকুম ও আইন চলে একমাত্র তিনিই ইলাহ ও মাবুদ। তিনিই নিরাশার আশা, বিপদে-আপদে সবসময় কেবল তাঁরই রহমতের আশা করা যায়। মানুষের লাভ-লোকসান, ক্ষতি উপকার তাঁরই ইচ্ছাক্রমে হয়ে থাকে। দৃশ্য-অদৃশ্য, জানা-অজানা সব কিছুর তিনি নির্ভুল জ্ঞান রাখেন। তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ, সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী এবং সকালের উপর বিজয়ী। তাঁর কোন ধ্বংস নেই, হবেও না। তিনি সর্বপ্রকার দোষত্রুটি, ভুলভ্রান্তির ঊর্ধে। তিনি সারা জাহানের একচ্ছত্র মালিক; সমস্ত বিশ্ব সাম্রাজ্যের শাহানশাহ ও রাজাধিরাজ। তিনিই মানুষকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক জীবন পরিচালনার জন্য পূর্ণাঙ্গ বিধান দিয়েছেন। এতএব মানুষের কর্মজীবনে তাঁর আদেশ নিষেধই একমাত্র পালনযোগ্য। তিনিই মহান আল্লাহ তা’য়ালা, আমাদের একমাত্র মাবুদ, ইলাহ ও রব; যিনি ইবাদত-বন্দেগী, গোলামী-দাসত্ব ও চূড়ান্ত আনুগত্য পাবার হকদার। তিনি ছাড়া অন্য কারো দাসত্ব বা নিরংকুশ আনুগত্য লাভের অধিকার নাই। সুতরাং ‘আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই’; তাঁর কোন শরীক নাই, তিনি সকল শিরক থেকে পবিত্র।
.
মতিউর রহমান কুচবিহারী সহ সকল মাদখালী আহলে হাদীসের কুফুরী মতবাদ খন্ডন করে আল্লাহ তা’আলা বলেন,
أَمِ اتَّخَذُوا آلِهَةً مِنَ الْأَرْضِ هُمْ يُنْشِرُونَ. لَوْ كَانَ فِيهِمَا آلِهَةٌ إِلَّا اللَّهُ لَفَسَدَتَا ۚ فَسُبْحَانَ اللَّهِ رَبِّ الْعَرْشِ عَمَّا يَصِفُونَ.
তারা পৃথিবীতে যেগুলোকে ইলাহ হিসাবে গ্রহণ করেছে, সেগুলি কি মৃতকে জীবিত করতে সক্ষম? যদি আসমান ও জমিনে আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন ইলাহ থাকত তবে (আসমান জমিন) উভয়ই ধ্বংস হয়ে যেত, সুতরাং তারা যা বলে, আরশের রব আল্লাহ তা থেকে পবিত্র। (সূরা আম্বিয়াঃ ২১/১১-২২)
.
এখানে বলা হচ্ছে, যেসব সত্তাকে তারা ইলাহ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে রেখেছে এবং যাদেরকে নিজেদের মাবুদ বানিয়ে নিয়েছে তাদের মধ্যে কি এমন কেউ আছে যে, নিষ্প্রাণ বস্তুর বুকে প্রাণ সঞ্চার করতে পারে? যদি এক আল্লাহ ছাড়া আর কারো মধ্যে এ শক্তি না থেকে থাকে আর আরবের মুশরিকরা নিজেরাই একথা স্বীকার করতো যে, এ শক্তি কারো মধ্যে নেই। তাহলে তারা তাদেরকে ইলাহ ও মারুদ বলে মেনে নিচ্ছে কেন? (দেখুন, কুরতুবী; ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর; তাফহীমুল কুরআন)
এটা তাওহীদের প্রমাণ, যা সাধারণ অভ্যাসের উপর ভিত্তিশীল এবং যুক্তিসঙ্গত প্রমাণের দিকেও ইঙ্গিতবহ। অভ্যাসগত প্রমাণের ভিত্তি এই যে, পৃথিবী ও আকাশে দুই ইলাহ থাকলে উভয়ই সর্বময় কর্তৃত্বের অধিকারী হবে। এমতাবস্থায় উভয়ের নির্দেশাবলী পৃথিবী ও আকাশে পূর্ণরূপে কার্যকরী হওয়া উচিত। অভ্যাসগতভাবে এটা অসম্ভব যে, একজন যে নির্দেশ দেবে, অন্যজনও সেই নির্দেশ দেবে, একজন যা পছন্দ করবে, অন্যজনও তাই পছন্দ করবে। তাই উভয়ের মধ্যে মাঝে মাঝে মতবিরোধ ও নির্দেশ বিরোধ হওয়া অবশ্যম্ভাবী। যখন দুই ইলাহর নির্দেশাবলী পৃথিবী ও আকাশে বিভিন্নরূপ হবে, তখন এর ফলশ্রুতি পৃথিবী ও আকাশের ধ্বংস ছাড়া আর কি হবে। এক ইলাহ চাইবে যে এখন দিন হোক, অপর ইলাহ চাইবে এখন রাত্রি হোক। একজন চাইবে বৃষ্টি হোক, অপরজন চাইবে বৃষ্টি না হোক। এমতাবস্থায় উভয়ের পরস্পর বিরোধী নির্দেশ কিরূপে প্রযোজ্য হবে? যদি একজন পরাভূত হয়ে যায়, তবে সে সর্বময় কর্তৃত্বের অধিকারী ও ইলাহ থাকতে পারবে না। যদি প্রশ্ন করা হয় যে, উভয় ইলাহ পরস্পরে পরামর্শ করে নির্দেশ জারি করলে তাতে অসুবিধা কি? তার উত্তর হলো এই যে, যদি উভয়ই পরামর্শের অধীন হয় এবং একজন অন্যজনের পরামর্শ ছাড়া কোন কাজ করতে না পারে, তবে এতে জরুরী হয়ে যায় যে, তাদের কেউ সর্বময় কর্তৃত্বের অধিকারী নয় এবং কেউ স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। বলাবাহুল্য, স্বয়ংসম্পূর্ণ না হয়ে ইলাহ হওয়া যায় না। সম্ভবতঃ পরবর্তী আয়াতেও এদিকে ইশারা পাওয়া যায় যে, যে ব্যক্তি কোন আইনের অধীন, যার ক্রিয়াকর্ম ধরপাকড় যোগ্য, সে ইলাহ হতে পারে না। ইলাহ তিনিই হবেন, যিনি কারও অধীন নয়, যাকে জিজ্ঞাসা করার অধিকার কারও নেই। পরামর্শের অধীন দুই ইলাহ থাকলে প্ৰত্যেকেই অপরিহার্যরূপে অপরকে জিজ্ঞাসা করার ও পরামর্শ বর্জনের কারণে ধরপাকড় করার অধিকারী হবে। এটা ইলাহ হওয়ার পদমৰ্যদার নিশ্চিত পরিপন্থী। (দেখুন, তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন ; তাফসীরে সা’দী)
মহান আল্লাহ তা’আলা বলেন,
فَاعْلَمْ أَنَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا اللَّهُ.
অতএব জেনে রাখ, নিঃসন্দেহে আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই। (সূরা মুহাম্মাদঃ ৪৭/১৯)
.
আল্লাহ তা’য়ালা মতিউর রহমান কুচবিহারী সহ সকল মাদখালীদের শিরকি আকিদা থেকে হেফাজত করুন।
পড়েছেনঃ 199 জন